|| প্রসূনের জন্মদিন ||
আজ প্রসূনের জন্মদিন | এগারয় পা দিয়েছে | খুব ভয় পাচ্ছি | একটু পরেই সান্ধ্য অনুষ্ঠানটা শেষ হয়ে সবাই চলে গেলে, খেয়ে, অন্য সব ঘরের বাতি নিভিয়ে টিভি চালিয়ে বসব, শোয়ার আগে একটু খবর শুনতে | ঠিক তখন ও এসে রিমোট কেড়ে নিয়ে টিভি ম্যুট করে বলবে, “বাবু, এবার বলো |”
কী বলতে হবে জানি | তবু, জিজ্ঞাসা করব, “কিসের কথা বলছ ?” প্রসূন বলবে, “ওই যে, আমি কোথা থেকে এসেছিলাম ?” আমি বলব, “ঠিক আছে | বলেছি তো, একদিন বলব | আর একটু বড় হও |” ও বলবে, “আর কত বড় হব ? সেই কবে থেকে তুমি একই কথা বলে আসছে | না, না, আমি এখন বড় হয়ে গিয়েছি | এবার তোমাকে বলতেই হবে |”
প্রসূন আমার দত্তক নেয়া ছেলে | সুপ্রভার বাচ্চা হচ্ছিল না | কারণ জানা যায় নি, কেননা সুপ্রভা অজ্ঞাত অন্ধ বিশ্বাসে কোনও পরীক্ষা করাতে রাজী হয় নি | অনেক বুঝিয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম | তাই আমিও নিজের কোনও পরীক্ষার ধারে কাছে যাই নি | কয়েক বছর অনেক দোনোমনা করে দু’বছরের কচি প্রসূন কে শিশু সদন থেকে নিয়ে এসেছিলাম | যেদিন ওকে নিয়ে আসি, একবছর পরে সেইদিন ওর জন্মদিন হিসাবে পালন করতে শুরু করেছিলাম | তারপর স্কুলে যখন গেল, জন্মদিনে ওর সাথে অনেক লজেন্স, টফি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম, বন্ধুদের মধ্যে বিলিয়ে দিতে | সেদিন ফিরে এসে প্রথম জানতে চেয়েছিল, “বাবু, আমি কোথা থেকে এসেছিলাম ?” পাঁচ বছর এড়িয়ে গিয়েছি |
সুপ্রভা থাকলে হয়ত বুঝিয়ে বলতে পারত | কিন্তু সুপ্রভা তো প্রসূন কে আনার বছর দুয়েক পরে বাড়ি ছেড়ে চলে গেল একদিন, হটাত | একটা সংক্ষিপ্ত চিঠি রেখে গেল, “আমি নিজের ধনে সুখী হতে চাই | আশা করি তুমিও এই ভাবে সুখী হবে | প্রসূন কে বোলো, ও বড় হলে বুঝবে |” আমি অতি কষ্টে প্রসূনকে আগলে ছিলাম | হয়ত ছোট বলে সম্ভব হয়েছিল |
আজ আমি বিশেষ করে ভয় পাচ্ছি | স্কুল থেকে প্রসূনকে আনার সময় সুপ্রভাকে দেখেছি | একটা বছর তিন চারের ছোট ছেলের হাত ধরে দাঁড়িয়ে প্রসূনকে খুব কাছ থেকে দেখছিল | খুব ভয় হল, হয়ত চিনতে পেরেছে | হয়ত আলাপ করেছে, হয়ত কিছু বলেছে |
গাড়িতে উঠেই প্রসূন বলেছিল, “বাবু, তুমি মা কে দেখেছ ? দাঁড়িয়েছিল |”
আমি বললাম, “মা ! কার মা ?”
প্রসূন বলল, “আমার ! এসে যে আমায় বলল, আমি তোমার মা | তুমি তাকে দেখেছ ?”
-----------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ০৮ জানুয়ারি ২০১৫
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন