মঙ্গলবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

চিঠি

|| চিঠি ||

পবিত্র বাবু ঘড়ির দিকে তাকালেন | সকাল প্রায় সাড়ে ন’টা, এখনও সজল বাবুর দেখা নেই | ছ’বছরের পুরানো প্রায় রোজকার প্রাত্যহিক মিলন, বড় রাস্তা থেকে মনিহারী লেনে ঢুকে নবু’র চায়ের দোকানে | লেন বলতে গলি | প্রথমে একটা বন্ধ হয়ে যাওয়া টেলারিং, তারপর দু’টো সবজির দোকানের পরে নবু’র “চা-পান” | এর পর একটু ফাঁকা জায়গা,  তা ছাড়া বাকি বসত বাড়ি | শুধু এই ফাঁকা প্লটে কেউ বাড়ি করে নি, বা ভুলে গিয়েছে | চলতি চা খানেওয়ালারা তাড়াহুড়োয় নবু’র দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে চা খায় | ‘রেগুলার’ আড্ডাবাজরা ওই ফাঁকা জায়গায় পাতা নবু’র চৌকির উপর বসে | নবু রোজ ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই বিছানা গুটিয়ে, বারবার বের করে নড়বড়ে  হয়ে যাওয়া চৌকিটা বের করে দেয় | 

প্রায় দিনই প্রথম খদ্দের পবিত্র এবং সজল বাবু, ন’টা বাজতে না বাজতেই হাজির | ওনারা চা নিয়ে বসে গল্প করেন | সাড়ে ন’টা বাজলে কিছু অফিসমুখো লোকের আসা শুরু হয় | তাদের মধ্যে যাদের হাতে সময় থাকে ঐ চৌকিতে গিয়ে বসে | সেটা ওনাদের পছন্দ হয় না | তাই সাড়ে ন’টায় ওনারা উঠে গিয়ে হরিবাবুর পার্কে বসেন | পার্কটার দখল সকালে বুড়োদের, আর বিকেলে বাচ্চাদের | তবে ওই সকাল ন’টা অব্দি খালি বেঞ্চ পাওয়া মুশকিল | যতক্ষণে এনারা দু’জন যান, তেমন বিশেষ ভিড় থাকে না |

পবিত্র বাবুর মনে পড়ে না কবে কী ভাবে আলাপ হয়েছিল | দু’জনের সম্পর্কে মিল ধরানোর মত তেমন বিষয়বস্তুও তাঁর জানা নেই | হয়ত এই চায়ের দোকানেই আলাপ | এখন আলাপের ধারাটা মোটামুটি বাঁধা | শুরু হয় ‘শরীর কেমন আছে ?’ দিয়ে ; তারপর আবহাওয়া ; সকালের কাগজের টুকিটাকি খবর | শেষে হরিবাবুর পার্কে বসে অলস স্মৃতিচারণ | কোনও কোনও দিন কত কথা প্রবল উচ্ছ্বাসে মনে পড়ে | আবার কোন দিন দুজনেই খেই হারিয়ে বসে থাকেন, বেলা বাড়লে উঠে পড়েন |

এই ভাবে ছ’বছর কেটে গেছে | দু’জনে দু’জনের পরিবার সম্বন্ধে অল্পই জানেন | সজল বাবু শুধু এইটুকু জানেন যে, পবিত্র বাবু ‘অকৃতদার’ | বাড়ির বড় ছেলে ছিলেন | যখন উনি সবে কর্মজীবন শুরু করেছেন ওনার বাবা ওনার ঘাড়ে অনেক ভাই বোন ফেলে মারা যান | তাদের একে একে মানুষ করে, বিয়ে-থা দিয়ে, তাঁর আর নিজের সংসার পাতার সময় সুযোগ হয় নি | একাই থাকেন | খুব প্রিয় এক ভাইপো ছ’মাসে ন’মাসে এসে একবার খোঁজ নিয়ে যায় |  তাঁর মধ্যে অভাব, অভিযোগ, অনুশোচনা একটুও নেই – যেন প্রতিকুল পরিস্থিতির মধ্যে থেকে সব মেনে নিতে শিখেছেন |

সজল বাবু সদ্য বিপত্নীক | কোনও রোগে বহুবছর ভুগে তাঁর স্ত্রী মাস তিনেক আগে মারা গেছেন | ঠিক কী রোগ সজল বাবু জানান নি | ওনার একমাত্র মেয়ে অনেক বছর হল বিয়ে হয়ে চলে গেছে | কদাচিৎ আসে | স্ত্রী মারা যাওয়ার পর সজল বাবু ক’দিন খুব মুষড়ে পড়েছিলেন | থেকে থেকেই বলতেন, “জানেন, আমার স্ত্রীই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল |” কিম্বা, “আমি বিয়ের আগে বড় বন্ধু-প্রাণ ছিলাম | কিন্তু, বিয়ের পর ওর সৌভাগ্যে আমার আর কোনও বন্ধুর দরকার পড়ে নি ... এই এখন আপনি বাদে |” আস্তে আস্তে স্ত্রী বিয়োগের শোক সামলে উঠলেও ওনার মুহ্যমান ভাবটা আর কাটে নি | মাঝে মধ্যেই পুরানো কথায় ফিরে ফিরে যান, তারপর চুপ করে বুঁদ হয়ে থাকেন | হটাত উঠে বলেন , “আজ চলি |”

পবিত্র বাবু আবার ঘড়ির দিকে তাকালেন | পৌনে দশটা বাজে, সজল বাবুর দেখা নেই | চায়ের দাম চুকিয়ে রওনা দিলেন হরিবাবুর পার্কের দিকে | কাছে এসে দেখেন তাঁদের রোজকার বেঞ্চে সজল বাবু বসে আছেন, মাথা নিচু করে হাতে ধরা এক টুকরো কাগজের দিকে তাকিয়ে | টের পেয়েই বিব্রত হাসি হেসে বললেন, “আজ দেরী হয়ে গিয়েছিল, বাড়িতে চা খেয়ে এই মাত্র এসেছি | ভাবছিলাম আপনি আসবেন কি না |”
পবিত্র বাবু বসে পড়ে বললেন, “দেরী কেন হল ? শরীর খারাপ নয় তো ?|
সজল – “না, না ... আসলে, কদিন ধরে সকালে উঠে একটু একটু করে সব জঞ্জাল বিদায় করছি | আজ একটু বেশি জড়িয়ে পড়েছিলাম |”
পবিত্র – “জঞ্জাল ?”
সজল – “ওই, মানে এত বছরের সংসারে কত কিছু জমে উঠেছে, যার আর কোনও দরকার নেই | যতদিন বউ ছিল সামলে আগলে রাখতাম, ও কিছুই ফেলতে দিত না | এখন সেগুলো দেখলে আর ভালো লাগে না | মনে হয় বিদায় করলেই হয় ... আপনার তো সেই সমস্যা নেই |”

পবিত্র বাবু কোনও কথা বললেন না | সজল বাবু একটু পরে বললেন, “কিন্তু জানেন
কি, ফেলতে চাইলেই কি ফেলা যায় ? জিনিস ফেললেও তো স্মৃতি গুলো জুড়ে বসে থাকে | তাদের নিয়ে কী যে করি ?” পবিত্র বাবু একবার সজল বাবুর হাতে ধরা কাগজটার দিকে চাইলেন | একটা দোমড়ানো, ধার ছেঁড়া পোস্টকার্ড সাইজের মোটা হলদেটে কাগজ, তার লেখা বিবর্ণ, ঝাপসা |
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সজল বাবু বললেন, “আচ্ছা, আপনার কোনও ব্যাপার নিয়ে কোনও হতাশা, ক্ষোভ বা আক্ষেপ আছে ?”
পবিত্র – “কী রকম ব্যাপার ?”
সজল – “এই যে, জীবনে কত কিছু ঘটে, তাই নিয়ে মানুষ কী করে না করে, তার কী ফল হয় না হয়, অন্য কিছু করলে তার ফল কী হত না হত | যেমন, ধরুন আপনি কাউকে কিছু কথা দিয়েছিলেন, কিন্তু রাখেন নি, কিম্বা দেয়া উচিত ছিল, কিন্তু দিতে পারেন নি | এইরকম কোনও ব্যাপার নিয়ে আপনার আজ কোনও ভাবনা চিন্তা হয় ? মনে হয় কি, যে ব্যাপারটা অন্য ভাবে কেন গড়াল না ? গড়ালে কোন দিকে গড়াত ?”
পবিত্র – “না ... সে রকম তো কিছু মনে করতে পারছি না ... কেন আজ হটাত এই চিন্তা ?”
সজল – “আসলে, আমার ক্ষেত্রে হয়ত এইরকম একটা ব্যাপার ঘটেছিল ... আজ সকালবেলায় ঐ জঞ্জাল সাফ করতে গিয়ে মনে হল ... |”
পবিত্র বাবু ছোট একটা “ওহ !” বলে চুপ করে থাকলে সজল বললেন, “শুনবেন সে কথা ?”
পবিত্র – “উম ... হ্যাঁ, বলুন না |”

সজল বাবু একটু ভেবে, কথা গুছিয়ে নিয়ে, বলতে শুরু করলেন |

আমি তখন একটা কেমিক্যাল কোম্পানির সেলস ম্যানেজার হয়ে বর্ধমানে গিয়েছি | আমার বিয়ের কথা চলছে | একটা মেসে উঠলাম | আমার কামরায় আর একজন, সেও এক ওষুধের কোম্পানির সেলস এ কাজ করে, নাম নবীন |
যদিও আমার থেকে কয়েক বছরের ছোট ছিল, ওর সাথে চট করে খুব ভাব হয়ে গেল – এক সাথে রাত্রির খাওয়া দাওয়া, রোববার রোববার সাইকেল নিয়ে বেড়ানো, কখনও সিনেমা দেখা | ওরও বিয়ের কথা চলছিল | বুঝতাম ওর খুব একটা ইচ্ছে নেই | কারণ, আমাকে বলত, “সজলদা’ এই যে সপ্তাহে এক থেকে দু’বার পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, আসানসোল যেতে হয় ... বউটাকে আগলে রাখবে কে ?” আমার ট্যুরের বালাই ছিল না | তিনমাসে একবার কোলকাতায় হেড অফিসে গিয়ে রিপোর্ট দেয়া | একদিন কী মতিচ্ছন্ন হল, বলে ফেললাম, “করে ফেল না বিয়েটা | যখন তুমি বাইরে যাবে আমরা কেউ না কেউ তো থাকবই |” কথাটা সত্যি | ওই মেসের প্রায় সবাই সেলস এ কাজ করত – তাই একটা প্রীতির সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল সবার মধ্যে |

নবীন বিয়ে করে ফেলল | কাছেই বাড়ি ভাড়া করে বউকে নিয়ে এলো | সবাইকে একদিন ডাকল | ঠিক সেই সময় আমাকে মেয়ে দেখতে বাড়ি যেতে হল | যেতে পারলাম না নবীনের বাড়ি | ও খুব রাগ করল, আমার দেয়া কথা মনে করিয়ে দিল | আমি ওকে কোনও ভাবে শান্ত করলাম | তারপর একদিন কিছু মিষ্টি নিয়ে ওর বাড়ি গেলাম | নবীন বউয়ের সাথে আলাপ করিয়ে দিল, “আভা, এই হল সজলদা’, যার কথা তোমায় বলেছি | উনি বলেছেন, আমি বাইরে গেলে কোনও ভয় নেই, উনি খোঁজ খবর নেবেন |”

জানেন, ওর বউকে দেখে আমার কী চিন্তা হল ? প্রথম দৃষ্টিতেই আমার মনে হল মেয়েটা নবীনের থেকে অনেক বেশি পরিণত, শারীরিক দিক দিয়ে তো বটেই | নবীনটা ছিল ছোটখাটো, রোগা প্যাটকা, আর আভা প্রায় ওর সমান লম্বা, এবং যাকে বলে ‘অটুট স্বাস্থ্যবতী’ | কিছু দিন আলাপের পর ওর কথাবার্তা শুনে বুঝলাম মানসিক দিক দিয়েও আভা নবীনের থেকে অনেক এগিয়ে | আর, যেই অদ্ভুত ভাবে মনে একটা প্রশ্ন জাগল যে আমি কেন এইরকম একজনকে পাচ্ছি না, বুঝলাম আমি একটা কিছু মুশকিলে পড়তে চলেছি |

কিছুদিন পরেই নবীন একদিনের জন্য বাইরে গেলে আমাকে বলে গেল পরদিন বউয়ের খবর নিতে | নিলাম | আস্তে আস্তে নবীনের বাইরে যাওয়া ঘনঘন হতে লাগলো, একদিন থেকে দু’দিন, বাড়তে বাড়তে কখনও তিন চার দিন | নবীন বাইরে গেলে আমি ওর বাড়িতে ঢুকতাম না | দরজা থেকেই কথা বলে চলে আসতাম | আভা কখনও কোনও জিনিসের দরকার জানালে তা কিনে অফিসের লোকের হাতে পাঠিয়ে দিতাম | তবুও, আমি না চাইলেও, বা, আমি সাবধান হতে চাইলেও, আস্তে আস্তে আভা আমার সাথে আলাপ বাড়াল | বলতে পারেন আমার সাথে সহজ হয়ে উঠে আমার উপর কিছুটা নির্ভর করতে শুরু করল |

বছর খানেক ঘুরতে না ঘুরতে নবীনের এক মেয়ে হল | কয়েক মাস নবীন বাইরে গেল না | তারপর ওকে যেতেই হল | আমি যথারীতি পরদিন সকালে ওর বাড়িতে গিয়ে দরজায় টোকা দিতেই আভা ডাকল, “সজলদা’, আমি মেয়েকে খাওয়াচ্ছি | উঠতে পারব না | আপনি একটু ভিতরে আসুন |” আমি ঠিক না বুঝে, একটু ইতস্তত করে জিজ্ঞাসা করলাম, “না, ভেতরে যাব না | তোমার কি কিছু লাগবে ?” ও বলল, “ভিতরে আসুন, তবে তো বলব |” একটু দ্বিধা নিয়ে ঢুকলাম | ও আবার ডাকল, “আমি শোয়ার ঘরে | চলে আসুন |” আমি ঢুকে দেখি ও মেয়ের  পাশে শুয়ে  শাড়িতে ঢেকে খাওয়াচ্ছে | আমাকে দেখে বলল, “মনে হচ্ছে এর জ্বর হয়েছে | আপনি একটু ওর গায়ে হাত রেখে দেখুন তো | হয়ত ডাক্তার ডাকতে হবে |” আমার অস্বস্তি দেখে শাড়ি সরিয়ে মেয়ের মুখটা বের করল | ওর কপালে হাত রেখে দেখলাম সত্যি বেশ জ্বর | একটা ডাক্তার ডেকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে অফিসে পালালাম | সারাদিন একটা অদ্ভুত অস্বস্তি আর দুশ্চিন্তায় দিন কাটল |

এতটা বলে সজল বাবু থামলেন |

পবিত্র  বাবু কিছুক্ষণ পরে বললেন, “তারপর |”

সজল বাবু মাটির দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলেন |

মেয়েটার জ্বর থাকল দিন তিন চার | নবীন ফিরল বাইরে পাঁচ দিন কাটিয়ে | সেই কদিন, আমি নানান অজুহাতে অফিস কামাই করলাম | রোজ সকালে ডাক্তার নিয়ে নবীনের বাড়ি গেলাম | ডাক্তার দেখে চলে গেলে আমি চট করে কিছু লাগবে কিনা জেনে নিয়ে ‘অফিস আছে’ বলে পালালাম | মেয়েটা সেরে উঠলে স্বস্তির হাঁফ ছাড়লাম |

এর ঠিক এক মাস পরে দুম করে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেল | আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনে নবীন আর আভা দুজনেই খুব খুশি | কিন্তু, একদিন নবীনের সাথে দেখা হতেই ও বলল, “সজলদা’, এবার মনে হচ্ছে এখানকার পাট তুলতে হবে |” জানতে চাইলাম কেন | বলল, “আভার আর এখানে ভালো লাগছে না | আমাকে বলছে, তোমাকে যখন ওই পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, আসানসোল, বার্নপুরই দেখতে হবে, তখন তুমি কেন আসানসোলে বদলি নেবে না | আমি তাই বদলি চেয়েছি | মঞ্জুর হয়ে গেছে |”

আমার বিয়ের কয়েক দিন আগে নবীন বদলি নিয়ে চলে গেল | বলল চিঠিতে যোগাযোগ রাখবে |
দিন পনের পরে আভার কাছ থেকে একটা  চিঠি পেলাম, ওখানে সংসার গুছিয়ে নিয়ে চিঠি দিয়েছে | চিঠিটা বাড়িতে এসে পড়ল বউয়ের হাতে, আমি তখন অফিসে | জানতে চাইল কার চিঠি | বললাম আমার আগেকার মেসের এক বন্ধুর স্ত্রীয়ের চিঠি | ও আর কিছু জানতে চাইল না | বুঝলাম না চিঠিটা পড়েছে কি না, বা ব্যাপারটা ওর ঠিক লেগেছ কি না |

আমি আভার চিঠির উত্তর দেয়া সমীচীন মনে করলাম না | মাস দুয়েক কেটে গেলে ওর দ্বিতীয় চিঠি এলো | তারপর আর একটা |

সজল বাবু মুখ তুলে পবিত্র  বাবুর চোখে তাকিয়ে বললেন, “তারপর আর ওর কাছ থেকে কোনও চিঠি পাই নি | আজ জঞ্জাল ঘাঁটতে বসে পুরানো চিঠির বান্ডিলে ওর শেষ চিঠিখানা পেলাম | জানেন, কেমন যে একটা ফিলিং হল ... বলতে পারব না | এই সেই চিঠি | তখন ফেলতে পারি নি, আজও পারলাম না |” সজল বাবু হাত তুলে হাতে ধরা পোস্টকার্ডটা দেখালেন |

পবিত্র বাবু চিঠিটার উপর দূর থেকে চোখ বুলিয়ে কিছুই বুঝতে পারলেন না | আসমানি রঙের কালিতে লেখা লাইন গুলো বিবর্ণ তো হয়েই গেছে | তার উপর লেখাগুলো ঝাপসা দেখাচ্ছে, যেন চিঠিটা জলে পড়ে গিয়েছিল | বললেন, “চিঠিটা মনে হচ্ছে জলে ভিজে গিয়েছিল |”
সজল – “হ্যাঁ, চিঠিটা এসেছিল আষাঢ় মাসে | পিওন উঠোনে ফেলে দিয়ে চলে গিয়েছিল | আমি অফিস থেকে ফেরা অব্দি বৃষ্টিতে পড়ে ছিল |”
পবিত্র – “ও ! তার মানে ... আপনি জানেন না কি লেখা ছিল ?”
সজল – “এক দুটো কথার একটুখানি আন্দাজে পড়তে পেরেছিলাম তখন, যা আজও মনে গেঁথে আছে – ‘ভাই নয়, দাদা নয়’ – তারপর ‘বন্ধু হতে’ | আর কিছুই পড়তে পারি নি |”

পবিত্র খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “কিছু মনে যদি না করেন, একটা প্রশ্ন করতে পারি ?”
সজল – “হ্যাঁ, নিশ্চয় |”
পবিত্র – “আপনি বলতেন আপনার স্ত্রী আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলেন | সেটা কি এত সব ঘটনার পরেও ?”
সজল – “আজ মনে হয়, কী জানি ... এই চিঠিটার কথা তো ওকে কোনদিন বলতে পারি নি | সে সাহসই হয় নি |
পবিত্র – “আর, আপনি যেন আরও কী বলছিলেন, আক্ষেপের কথা ...”
সজল – “ওই, যেমন, আমি আভার চিঠির উত্তর কেন দিলাম না  – দিলে কী হত ? কিম্বা, আমার স্ত্রীকে চিঠিটার কথা কেন বলি নি – বললে কী হত ? চিঠিটা লুকিয়ে রেখে দিয়েছিলাম  কোন আশায় – এই কি যে একদিন কোনও দৈবক্রমে জানতে পারব আভা কী লিখেছিল – জানলে কী করতাম ?”

দুজনে উঠে দাঁড়ালেন | পবিত্র বাবু জিজ্ঞাসা করলেন, “আচ্ছা, চিঠিটা যখন জলে সম্পূর্ণ ভিজে গিয়েছিল তখন কী ভাবে বুঝলেন যে ওটা আভার চিঠি |”
সজল বাবু বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, “তাও জানি না | জাস্ট একটা আন্দাজ | হয়ত আমার স্ত্রী চিঠিটা উঠোনে পড়ে থাকতে দেখেছিল | ওর না দেখতে পাওয়ার কোনও কারণ খুঁজে পাই নি | হয়ত ও চিঠিটা বৃষ্টিতে পড়ে থাকতে দিয়েছিল |”


--------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫



কোন মন্তব্য নেই: