|| মলিনা থাকলে ... ||
এক মোহিনী বিষাদ ভরা অনুভূতি নিয়ে পরিমল বাবুর ঘুম ভাঙ্গল | পর্দা টানা আধোছায়া ঘরে আঁধার-আলো সুপ্তি-জাগরণের সন্ধিক্ষণটা দীর্ঘায়ত করে ফ্যাকাসে ঘুমটা আস্তে আস্তে কাটল | ঘড়িতে দেখলেন আড়াইটা বাজে | দুপুরের খাওয়া শেষ করে কাগজ নিয়ে শুয়েছিলেন | হয়ত বড় জোর এক ঘণ্টা ঘুমিয়েছেন | তারই মধ্যে বহুদিন পরে সেই স্বপ্ন দেখে বিচলিত হয়ে জেগে উঠলেন |
অনেকক্ষণ টনটন করা মন নিয়ে তারই আলসে রেশে শুয়ে রইলেন পরিমল |
এই মোহিনী বিষাদ তাঁর অনেক দিনের অনুভূতি | তাঁর চিরকালের অভ্যাস বাম দিকে পাশ ফিরে হাতের পাতা গালের তলে রেখে ঘুমনো | বিয়ের পর মলিনা তার বাম পাশে শুতে শুরু করেন | প্রথম আড়ষ্টতা কাটলে, একদিন তিনি অজান্তে ঘুমের ঘোরে পরিমলের কাছে গুটিয়ে তাঁর বাম হাতে মাথা রাখলেন | ভোরে ঘুম ভেঙ্গে ব্যাপারটা গোচর করে লজ্জা পেলেন | পর পর কদিন পরিমল দেখলেন সকালে বাম হাতটা অসাড় হয়ে আছে | তারপর একদিন ধরে ফেললেন কারণটা | বহু বছর সংসার করার পরও, সত্যি বলতে কি মৃত্যু শয্যা ধরার আগে অব্দি, মলিনা ওই ভাবে ঘুমের ঘোরে পরিমলের ভাঁজ করা বাম হাতে মাথা রেখে শুয়েছেন | আর, কখনও মাঝ রাতে, কখনও ভোর বেলায়, ঘুম ভেঙ্গে পরিমল বিছানায় মলিনা কে না পেলে বাম হাতের সেই জড়তার অভাবের মধ্যে এক অদ্ভুত মোহিনী বিষাদ অনুভব করেছেন |
আজ আবার স্বপ্নটা দেখে ঘুম ভেঙ্গে সেই অনুভূতিটাই ফিরে অনুভব করলেন | একটা সময় ছিল যখন এই স্বপ্নটা তিনি মাঝে মধ্যেই নানান ভাবে দেখতেন | তারপর কয়েক বছর হয়ত স্বপ্নটা দেখেন নি | আজ আবার কেন ?
পরিমল বাবু অবসর নেয়ার পর কাজ থেকে ছুটি পান নি | তাঁর উপরওয়ালা সিনিয়র ম্যানেজার গোবর্ধন সাহেব তাঁকে ধরে রেখেছিলেন | কাজে কর্মে কী ভাবে তিনটে বছরও কেটে গিয়েছিল | কাজের তেমন চাপ ছিল না, এদিকে দিব্যি মাস গেলে মন্দ-নয় মাইনে | সারাদিন কেবল সেলস এর নতুন ছেলে গুলো মাঝে মাঝে আসত, এ কথা সে কথা নিয়ে | তাদের সবার সমস্যা একই – লক্ষ্য অনুযায়ী সেলস হচ্ছে না, কী করা উচিত ? ছেলে গুলোকে বুঝিয়ে সমঝিয়ে বিদায় করতেন | মাঝে মাঝে গোবর্ধন সাহেব ডেকে পাঠাতেন, সেলস নিয়ে কিছু পরিসংখ্যা চাইতেন, কিছু আলোচনা করতেন | তারপর সকাল গড়িয়ে দুপুর হলে, দেড়টা নাগাদ পরিমল ব্যাগ খুলে টিফিন বাক্স বের করে নিয়ে হাত ধুয়ে এসে খেতে বসতেন | রোজ প্রায় একই খাবার – মাঝারি ওভ্যল টিফিন বাটিতে মলিনার নিপুণ হাতে গুছানো – দুটো রুটি, একটা শুকনো তরকারী, একটু কাটা শসা-টমেটো, এক চিলতে আঁচার মাঝে মধ্যে, কিছু কাটা ফল, আধখানা তাঁর প্রিয় সন্দেশ, কয়েকটা কাজু-কিসমিস, আর এক টুকরো চীস | এই শেষ জিনিসটা তিনি খুব তারিয়ে তারিয়ে খেতেন | যেদিন খাওয়ার সময় কেউ ঢুকে পড়ত, তাকে কাটিয়ে দরজা বন্ধ করে শেষটুকু খেতেন | আঙ্গুরের সময় কালো আঙ্গুর দিয়ে, নইলে কিসমিসের সাথে, একটু একটু করে চীসটা – একটু নোনতা, একটু টক-মিষ্টি | অফিস ছাড়া অব্দি তার স্বাদ লেগে থাকত মুখে |
হটাত এক ডিসেম্বরে গোবর্ধন সাহেব ভাইস-প্রেসিডেন্ট হয়ে হেড অফিসে বদলি হয়ে গেলেন | তাঁর জায়গায় বসলেন তাঁর অপ্রিয় অধস্তন কাপাডিয়া সাহেব | তিনি আর কোনদিন পরিমলকে ডেকে পাঠালেন না | মাস কয়েক কেটে গেলে একদিন পার্সোনেল থেকে ফোন এলো – আগামী এপ্রিলে আর তাঁর চুক্তির নবীকরণ হবে না | এক দু’ দিন ভেবে ভেবে শেষে তিনি গোবর্ধন সাহেব কে ফোন করলেন | সব কথা শুনে গোবর্ধন সাহেব বললেন, “ঠিক আছে | আমি এখন একটু ব্যস্ত আছি ... আপনি অফিসে যেমন আসছেন আসুন | কিছু একটা ব্যবস্থা করে আপনাকে জানাব | তবে আপনি অফিস আসা বন্ধ করবেন না |”
পরিমল অফিসে যাওয়া বন্ধ করেন নি | কিন্তু এপ্রিল এলো, প্রায় দু’ সপ্তাহ কেটে গেল, গোবর্ধন সাহেব আর ফোন করলেন না | এক দিন থাকতে না পেরে পার্সোনেল কে জিজ্ঞাসা করে জানলেন তাদের কাছেও কোনও আশাপ্রদ খবর নেই | শেষে ষোলই এপ্রিল থেকে পরিমল অফিস যাওয়া বন্ধ করলেন | তখন দুপুরের অফিসে একান্তে বসে আঙ্গুর আর চীস খাওয়া বন্ধ হয়ে বাড়ির ভাত খেয়ে বিশ্রাম নেয়া শুরু হল | আর অবশ্যম্ভাবী দিবানিদ্রায় দেখা দিয়ে হানা দিল বারবার সেই স্বপ্নটা |
স্বপ্নটা খুব সাধারণ | উনি অফিস যাওয়া বন্ধ করেন নি | রোজ অফিস যান | ছেলেরা আসে, শলা পরামর্শ করে | কাপাডিয়া সাহেব অবশ্য কখনই কোনও কাজ দেন না | তবু যেন পরিমল বাবু অফিসের একটা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছেন | কাজের চুক্তি নেই, তাই মাইনে বিনেই মাসের পর মাস কাজ করছেন | তবে তাঁর পুরানো গাড়িতেই পুরানো সহকর্মীদের সাথে অফিস যান, পুরানো কামরাটা থেকেও তাঁকে সরানো হয় নি | এই ভাবেই তাঁর দিন কেটে যাচ্ছে কাজের ব্যস্ততায়, অন্তত মলিনা তাই মনে করেন | আর ওই দুপুরে দরজা বন্ধ করে টিফিন খাওয়া, সব শেষে আঙ্গুর আর চীস, তাও বজায় আছে | শুধু, একটাই অস্বস্তিকর অবমাননা বোধ, কতদিন তিনি বিনে মাইনেতে কাজ করবেন | কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে, “এখন কত পাচ্ছেন ?” কী জবাব দেবেন ? কিন্তু এও সত্যি যে এই নিয়ে কথা বলতে গেলে যদি শোনেন যে তাঁর তো আর কাজ করার কথা নয় | যদি ... এক করতে আর এক হয়, অফিসে আসা বন্ধ হয়ে যায় | তার চেয়ে থাক না, যেমন চলছে |
যেদিনই এই স্বপ্ন দেখেছেন, স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঘুম ভেঙ্গে গেছে, অনেকক্ষণ বিশ্বাস হয় নি যে তাঁর আর কাজটা নেই | তখন সেই নিভৃত অফিসের স্বপ্নের রেশ আর কাজ না থাকার প্রকৃত বিষাদের মাঝে পিষে মনটা ছটফট করেছে |
এর পর, হটাত করে মলিনা মারা গেলে তাঁর জীবনে কী একটা আমূল পরিবর্তন এলো | যিনি কিছুদিন আগেও রাত্রে ঘুমের ঘোরে পরিমলের বাম হাতে মাথা রাখতেন, তাঁর শেষ রাত কাটল এক হাসপাতালের বিছানায় | তারপর কত দিন পরিমল ঘুম থেকে উঠে বাম হাতে সেই জড়তার অবসন্নতা অনুভব করেছেন, আর অন্যমনস্ক ভাবে হাতড়েছেন বিছানার চাদর - মলিনার উপস্থিতি, অন্তত উত্তাপ, খুঁজে | অনেকদিন লেগেছে সেই ছোঁয়া কাটতে | এর মধ্যেই পরিমল একদিন লক্ষ্য করে আশ্চর্য হয়েছেন যে তাঁর অফিস যাওয়ার সেই স্বপ্ন আর তিনি দেখেন না | আজ আবার দেখলেন হয়তো বছর দুয়েক পরে |
পরিমল বাবু ঘোরটা কাটিয়ে উঠলেন | খাবার টেবিলে গিয়ে জলের বোতলটা তুলে জল খেতে গিয়ে দেখলেন সকালে আনা কালো আঙ্গুর আর চীসের বাক্সটা তিনি খেয়ে উঠে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখতে ভুলে গেছেন | তার পাশে খোলা টিফিন বাটিটা পিঁপড়েয় ভরে গেছে |
মলিনা থাকলে ...
-----------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
এক মোহিনী বিষাদ ভরা অনুভূতি নিয়ে পরিমল বাবুর ঘুম ভাঙ্গল | পর্দা টানা আধোছায়া ঘরে আঁধার-আলো সুপ্তি-জাগরণের সন্ধিক্ষণটা দীর্ঘায়ত করে ফ্যাকাসে ঘুমটা আস্তে আস্তে কাটল | ঘড়িতে দেখলেন আড়াইটা বাজে | দুপুরের খাওয়া শেষ করে কাগজ নিয়ে শুয়েছিলেন | হয়ত বড় জোর এক ঘণ্টা ঘুমিয়েছেন | তারই মধ্যে বহুদিন পরে সেই স্বপ্ন দেখে বিচলিত হয়ে জেগে উঠলেন |
অনেকক্ষণ টনটন করা মন নিয়ে তারই আলসে রেশে শুয়ে রইলেন পরিমল |
এই মোহিনী বিষাদ তাঁর অনেক দিনের অনুভূতি | তাঁর চিরকালের অভ্যাস বাম দিকে পাশ ফিরে হাতের পাতা গালের তলে রেখে ঘুমনো | বিয়ের পর মলিনা তার বাম পাশে শুতে শুরু করেন | প্রথম আড়ষ্টতা কাটলে, একদিন তিনি অজান্তে ঘুমের ঘোরে পরিমলের কাছে গুটিয়ে তাঁর বাম হাতে মাথা রাখলেন | ভোরে ঘুম ভেঙ্গে ব্যাপারটা গোচর করে লজ্জা পেলেন | পর পর কদিন পরিমল দেখলেন সকালে বাম হাতটা অসাড় হয়ে আছে | তারপর একদিন ধরে ফেললেন কারণটা | বহু বছর সংসার করার পরও, সত্যি বলতে কি মৃত্যু শয্যা ধরার আগে অব্দি, মলিনা ওই ভাবে ঘুমের ঘোরে পরিমলের ভাঁজ করা বাম হাতে মাথা রেখে শুয়েছেন | আর, কখনও মাঝ রাতে, কখনও ভোর বেলায়, ঘুম ভেঙ্গে পরিমল বিছানায় মলিনা কে না পেলে বাম হাতের সেই জড়তার অভাবের মধ্যে এক অদ্ভুত মোহিনী বিষাদ অনুভব করেছেন |
আজ আবার স্বপ্নটা দেখে ঘুম ভেঙ্গে সেই অনুভূতিটাই ফিরে অনুভব করলেন | একটা সময় ছিল যখন এই স্বপ্নটা তিনি মাঝে মধ্যেই নানান ভাবে দেখতেন | তারপর কয়েক বছর হয়ত স্বপ্নটা দেখেন নি | আজ আবার কেন ?
পরিমল বাবু অবসর নেয়ার পর কাজ থেকে ছুটি পান নি | তাঁর উপরওয়ালা সিনিয়র ম্যানেজার গোবর্ধন সাহেব তাঁকে ধরে রেখেছিলেন | কাজে কর্মে কী ভাবে তিনটে বছরও কেটে গিয়েছিল | কাজের তেমন চাপ ছিল না, এদিকে দিব্যি মাস গেলে মন্দ-নয় মাইনে | সারাদিন কেবল সেলস এর নতুন ছেলে গুলো মাঝে মাঝে আসত, এ কথা সে কথা নিয়ে | তাদের সবার সমস্যা একই – লক্ষ্য অনুযায়ী সেলস হচ্ছে না, কী করা উচিত ? ছেলে গুলোকে বুঝিয়ে সমঝিয়ে বিদায় করতেন | মাঝে মাঝে গোবর্ধন সাহেব ডেকে পাঠাতেন, সেলস নিয়ে কিছু পরিসংখ্যা চাইতেন, কিছু আলোচনা করতেন | তারপর সকাল গড়িয়ে দুপুর হলে, দেড়টা নাগাদ পরিমল ব্যাগ খুলে টিফিন বাক্স বের করে নিয়ে হাত ধুয়ে এসে খেতে বসতেন | রোজ প্রায় একই খাবার – মাঝারি ওভ্যল টিফিন বাটিতে মলিনার নিপুণ হাতে গুছানো – দুটো রুটি, একটা শুকনো তরকারী, একটু কাটা শসা-টমেটো, এক চিলতে আঁচার মাঝে মধ্যে, কিছু কাটা ফল, আধখানা তাঁর প্রিয় সন্দেশ, কয়েকটা কাজু-কিসমিস, আর এক টুকরো চীস | এই শেষ জিনিসটা তিনি খুব তারিয়ে তারিয়ে খেতেন | যেদিন খাওয়ার সময় কেউ ঢুকে পড়ত, তাকে কাটিয়ে দরজা বন্ধ করে শেষটুকু খেতেন | আঙ্গুরের সময় কালো আঙ্গুর দিয়ে, নইলে কিসমিসের সাথে, একটু একটু করে চীসটা – একটু নোনতা, একটু টক-মিষ্টি | অফিস ছাড়া অব্দি তার স্বাদ লেগে থাকত মুখে |
হটাত এক ডিসেম্বরে গোবর্ধন সাহেব ভাইস-প্রেসিডেন্ট হয়ে হেড অফিসে বদলি হয়ে গেলেন | তাঁর জায়গায় বসলেন তাঁর অপ্রিয় অধস্তন কাপাডিয়া সাহেব | তিনি আর কোনদিন পরিমলকে ডেকে পাঠালেন না | মাস কয়েক কেটে গেলে একদিন পার্সোনেল থেকে ফোন এলো – আগামী এপ্রিলে আর তাঁর চুক্তির নবীকরণ হবে না | এক দু’ দিন ভেবে ভেবে শেষে তিনি গোবর্ধন সাহেব কে ফোন করলেন | সব কথা শুনে গোবর্ধন সাহেব বললেন, “ঠিক আছে | আমি এখন একটু ব্যস্ত আছি ... আপনি অফিসে যেমন আসছেন আসুন | কিছু একটা ব্যবস্থা করে আপনাকে জানাব | তবে আপনি অফিস আসা বন্ধ করবেন না |”
পরিমল অফিসে যাওয়া বন্ধ করেন নি | কিন্তু এপ্রিল এলো, প্রায় দু’ সপ্তাহ কেটে গেল, গোবর্ধন সাহেব আর ফোন করলেন না | এক দিন থাকতে না পেরে পার্সোনেল কে জিজ্ঞাসা করে জানলেন তাদের কাছেও কোনও আশাপ্রদ খবর নেই | শেষে ষোলই এপ্রিল থেকে পরিমল অফিস যাওয়া বন্ধ করলেন | তখন দুপুরের অফিসে একান্তে বসে আঙ্গুর আর চীস খাওয়া বন্ধ হয়ে বাড়ির ভাত খেয়ে বিশ্রাম নেয়া শুরু হল | আর অবশ্যম্ভাবী দিবানিদ্রায় দেখা দিয়ে হানা দিল বারবার সেই স্বপ্নটা |
স্বপ্নটা খুব সাধারণ | উনি অফিস যাওয়া বন্ধ করেন নি | রোজ অফিস যান | ছেলেরা আসে, শলা পরামর্শ করে | কাপাডিয়া সাহেব অবশ্য কখনই কোনও কাজ দেন না | তবু যেন পরিমল বাবু অফিসের একটা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছেন | কাজের চুক্তি নেই, তাই মাইনে বিনেই মাসের পর মাস কাজ করছেন | তবে তাঁর পুরানো গাড়িতেই পুরানো সহকর্মীদের সাথে অফিস যান, পুরানো কামরাটা থেকেও তাঁকে সরানো হয় নি | এই ভাবেই তাঁর দিন কেটে যাচ্ছে কাজের ব্যস্ততায়, অন্তত মলিনা তাই মনে করেন | আর ওই দুপুরে দরজা বন্ধ করে টিফিন খাওয়া, সব শেষে আঙ্গুর আর চীস, তাও বজায় আছে | শুধু, একটাই অস্বস্তিকর অবমাননা বোধ, কতদিন তিনি বিনে মাইনেতে কাজ করবেন | কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে, “এখন কত পাচ্ছেন ?” কী জবাব দেবেন ? কিন্তু এও সত্যি যে এই নিয়ে কথা বলতে গেলে যদি শোনেন যে তাঁর তো আর কাজ করার কথা নয় | যদি ... এক করতে আর এক হয়, অফিসে আসা বন্ধ হয়ে যায় | তার চেয়ে থাক না, যেমন চলছে |
যেদিনই এই স্বপ্ন দেখেছেন, স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঘুম ভেঙ্গে গেছে, অনেকক্ষণ বিশ্বাস হয় নি যে তাঁর আর কাজটা নেই | তখন সেই নিভৃত অফিসের স্বপ্নের রেশ আর কাজ না থাকার প্রকৃত বিষাদের মাঝে পিষে মনটা ছটফট করেছে |
এর পর, হটাত করে মলিনা মারা গেলে তাঁর জীবনে কী একটা আমূল পরিবর্তন এলো | যিনি কিছুদিন আগেও রাত্রে ঘুমের ঘোরে পরিমলের বাম হাতে মাথা রাখতেন, তাঁর শেষ রাত কাটল এক হাসপাতালের বিছানায় | তারপর কত দিন পরিমল ঘুম থেকে উঠে বাম হাতে সেই জড়তার অবসন্নতা অনুভব করেছেন, আর অন্যমনস্ক ভাবে হাতড়েছেন বিছানার চাদর - মলিনার উপস্থিতি, অন্তত উত্তাপ, খুঁজে | অনেকদিন লেগেছে সেই ছোঁয়া কাটতে | এর মধ্যেই পরিমল একদিন লক্ষ্য করে আশ্চর্য হয়েছেন যে তাঁর অফিস যাওয়ার সেই স্বপ্ন আর তিনি দেখেন না | আজ আবার দেখলেন হয়তো বছর দুয়েক পরে |
পরিমল বাবু ঘোরটা কাটিয়ে উঠলেন | খাবার টেবিলে গিয়ে জলের বোতলটা তুলে জল খেতে গিয়ে দেখলেন সকালে আনা কালো আঙ্গুর আর চীসের বাক্সটা তিনি খেয়ে উঠে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখতে ভুলে গেছেন | তার পাশে খোলা টিফিন বাটিটা পিঁপড়েয় ভরে গেছে |
মলিনা থাকলে ...
-----------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন