সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৩

রাধারমণের পথে

|| রাধারমণের পথে ||


রাধারমণের পথে দেখেছি বাসে যেতে
বরিষণ উত্তর সতেজ হরিত শাল বীথি
হাওয়ার সোহাগে শিহরিত ধানক্ষেতে
রাঙা মোরামের এক আঁকাবাঁকা সিঁথি

যেখানে সে মেলে এসে এই রাজপথে
সেখানে রমণীয় এক কৃশাঙ্গী তন্বী তাল
সেজে পাতার খোঁপায় আর ফলের নথে
যাত্রার অপেক্ষায় যেন আছে কতকাল

দেখিনি সেখানে কভু অন্য কোন রমণী
না কোনও যাত্রী উঠে দিতে দূরে পাড়ি
অগ্রাহ্য করে তরুবালার স্মিত হাতছানি
গতির পরিচালক কভু বাঁধেনি কো গাড়ি

আমি শুধু বসে জানালায় অলস কল্পনায়
ভেবেছি কেমন হবে যদি কোনও একদিন
নেমে যাই সেই রাঙা মোরামের মোহনায়
গেরুয়া-সিঁদুর নদীতে, নাহই নাবিক নবীন

একদিন থামে গাড়ি সহসা | নামতে গিয়ে
দেখি দাঁড়িয়ে আছে কী এক অনন্যা একা
উদগ্রীব চিবুক তুলে, তার ভীরু হাত দিয়ে
ইঙ্গিতে জানায় যাবে সে,  যাত্রী পলাতকা

অধীর হৃদয়ে জাগে তীব্র তুমুল আকাঙ্ক্ষা
আবিষ্ট হই কল্পিত এক নির্যাসের সুবাসে
বুকে হাত রেখে চাপি দুরুদুরু আশংকা
যখন সে উঠে স্থান নেয় আমারই পাশে

বাহুর মৃদু স্পর্শে হয় সে লজ্জায় শিথিল
স্বর্ণাভ মুখে তার ঢলে পড়ে কিছু চুল
সামলে কপোলে তাদের দুরন্ত মিছিল
কবরীতে গোঁজে সে কিছু মহুয়ার ফুল

টিকালো নাকে তার ঘামের শিশির শয্যা
বিস্ফারিত ঠোঁট যেন দোপাটি কমলার
কম্পিত অধরে কি নব পরিচয়ের লজ্জা
পেলব নগ্ন দু’ বাহু, ঋজু শাখা লতিকার

নত, নম্র, নিস্পন্দ, নির্নিমেষ নয়নে
খেজুর পাতার মত পলকে ছাওয়া নীড়
তার অবাধ্য স্মিতহাস্য বিস্ময়ের চয়নে
আশকারার আহ্বান হয়েছে সুনিবিড়

দ্বিধায় প্রশ্ন করে, “কত দূর এই পথ?”
আমি বলি, “তুমি যেতে চাও কত দূর?”
“আমি জানিনা, নেই কোনও মতামত”
“তবে কেন চিন্তা ? পথ এখনো  প্রচুর”

পথের স্বল্পমেয়াদী পরিচয়ে করে ঋণী
আর কোনও কথা নেই, শেষ সব প্রশ্ন
পথের পাথেয় পেয়ে সাথী মিতভাষিণী
তন্দ্রায় বিলীন হয়ে দেখে দূরত্বের স্বপ্ন

সেই অবসরে জানালায় দিয়ে হানা
চঞ্চল হওয়া খেলে নিয়ে তার কাপড়
আমি ভাবি চোরা চাউনি কেন মানা
কিন্তু দ্বিধাগ্রস্ত গ্রীবা থাকে অবশ নিথর

যখন হওয়ায় সরে তার বুকের আঁচল
ধুপের ধোঁয়ার মতো উঠে আসে তাপ
মনের দরজায় খুলে ব্রীড়ার আগল
দেখি দুই গোলাপের কুসুম নিষ্পাপ

মাথার বুনো চুলে খেলে হাওয়ার অলি
সিঁথিতে জ্বলে অস্তগামী রোদের আগুন
ঝরে চূর্ণকুন্তল হতে স্ফুলিঙ্গ-রেণু গুলি
গালের টোলে সাজাতে গেরুয়া ফাগুন

অস্তাচলে সূর্য ধায়, এসে পড়ে রাধারমণ
যুগলবন্দী এই যাত্রায় নামাতে যবনিকা
আমার জানু ছুঁয়ে তার সোনার কাঁকন
শুধায়, “আমায় ছেড়ে যাবে কি একা?”

শুনি যেন, “বলেছিলে পথ আছে প্রচুর
সেই আশায় তন্দ্রা এলো, কাটল সময়
কেন ভাঙিয়ে তাই, করে স্বপ্ন চুর চুর
আলাপেই দাঁড়ি টান, না করে প্রণয়?”

রাধারমণ অযথা এসে চলে যায় পিছে
শুরু হয় গোধূলিতে অশেষ পথে চলা
গেরুয়া সিঁথির মোহ মন থেকে মুছে
মুঠোয় ধরি তরুবালার সোনার বালা ||

                                                  -----------------------------------------------------------------------
                                                     © ইন্দ্রনীর / ১৪ অক্টোবর ২০১৩ (বিজয়া দশমী)

কোন মন্তব্য নেই: