শনিবার, ১৮ জুন, ২০১৬

হাট দরজা

|| হাট দরজা ||


পুরীতে বেড়াতে গিয়ে ভাগ্যচক্রে দেখা হয়ে গেল সোনালী আর প্রতিমার সাথে | ওরাও বেড়াতে এসেছে আমাদের মত, স্বামী-স্ত্রী | সবাই একই হোটেলে উঠেছি – পুরীর বি.এন.আর | সবারই এক সন্তান, বিদেশে থাকে | অবসর জীবনে ফি বছর পুরী দর্শন |

সোনালী আমার ছোটবেলার নার্স-ডাক্তার খেলার সাথী | আমার মাকে বলত, তিতুন যদি বড় হয়ে ডাক্তার হয় তাহলে আমি ওর হাসপাতালেই নার্স হব | প্রতিমা আর আমি একই কলেজে পড়েছি | ফষ্টিনষ্টি করেছি, হাতখরচ ধার নিয়েছি, পরে শোধ করব বলে | এ ছাড়া আর কোনও স্বপ্ন দেখাই নি | তাও বন্ধুরা বলত ও আমাকে চাইত | ভগবানের ইচ্ছেয় দুটো সম্পর্কই বেশি দূর গড়ানোর আগে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে | অথচ, বিয়ের মেয়ে যখন দেখা হচ্ছে, মা একবার আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, “বল না, কী ধরনের  মেয়ে পছন্দ তোর | নাকি সোনালী ... না প্রতিমা ?” আমি বলেছিলাম, “যা ভালো বোঝ তাই কর | আমার সব চলবে |”

যাই হোক, সেই সময়ের স্মৃতি এখন ক্ষীণ | তাই এইভাবে দেখা হয়ে যাওয়ায় কারো কোন দ্বিধা বা বিকার দেখা দিল না | সোনালী আমার আলাপ করিয়ে দিল ছোটবেলার এক-পাড়ার বন্ধু বলে, আর প্রতিমা পরিচয়ে বলল আমরা এক কলেজে পড়েছি |

তাও জানি না হয়ত মেয়েরা যখন আলাদা বসেছে, গল্প করেছে, সব রকম কথাই হয়েছে |

একদিন রাত্রের খাবার খেয়ে বারান্দায় বসে আড্ডা হচ্ছিল | বা বলা যায় স্মৃতি চারণ | তপন কে আমাদের ছোটবেলার নার্স-ডাক্তার খেলার গল্প বলল সোনালী – কী ভাবে রুগীর অভাবে আমি ওকেই লেমনেডের ওষুধ গেলাতাম | প্রতিমা নয়নকে বলল, কী ভাবে আমি ওর কাছে টাকা ধার নিয়ে বলতাম একদিন ফেরত দেব – যেদিন আর আসে নি | সব মিলিয়ে সুদে আসলে আজ হয়ত কয়েক শ’ টাকা হয় |

কাকলী মুচকি মুচকি হেসে গল্প উপভোগ করছিল | তারপর হটাত কেমন গম্ভীর হয়ে মাথা নিচু করে বসে রইল | তাই দেখে সোনালী ওকে চেপে ধরল, “কাকলী, তোমার কোন গল্প নেই ?” প্রতিমা বলল, “হ্যাঁ, বলো না, কাকলী ! কিছু মনে পড়েছে বুঝি ?”

একটু চাপাচাপি করার পর, কাকলী আমার দিকে তাকিয়ে নিস্তেজ গলায় বলল, “তিতুন, আজ যদি তোমাকে একটা সুযোগ দেয়া হয়, আমাদের তিনজনের মধ্যে একজন কে বেছে নিতে, তুমি কাকে টানবে ?” দেখলাম কাকলীর চোখ কৌতুক সত্ত্বেও একটু চিকচিক করছে | আমিও একটু হেসে বললাম, “আমি কাকে নেব, না কে আমাকে নেবে ?” কাকলী বলল, “তোমার কী মনে হয় ?” আমি বললাম, “মানে ... পুরানো টানের প্রশ্ন তো | মস্ত সমস্যা | চট করে এর উত্তর দেয়া যায় না | তবু ভেবে দেখব | তার আগে এক ঘুম দিই | চলো এখন শোয়া যাক | কাল না হয় বলব |”

মনে হল সকলের ধরে রাখা স্বস্তির নিঃশ্বাস একসাথে পড়ল |

পরদিন জলখাবার টেবিলে বললাম, “শোন সবাই, কালকের সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে ... এক স্বপ্নে |”
সবাই সমস্বরে বলল, “স্বপ্ন ! কী স্বপ্ন ? কাকে নিয়ে ?”
আমি বললাম, “হ্যাঁ |” সবাই সমস্বরে হইচই করে উঠল, “বলো, বলো |”

আমি বললাম, “স্বপ্ন দেখেছি আমরা সমুদ্রে স্নান করে ফিরেছে | সোনালী, প্রতিমা আর কাকলী যে যার ঘরে চলে গেছে স্নান করে কাপড় বদলে আসতে | একটু পরে আসছি বলে আমরা তিনজন চা খেতে বসেছি | এক ফাঁকে বাথরুম যাওয়ার নাম করে উঠে গিয়ে আমি এক এক করে তিনটে ঘরের দরজায় টোকা দিলাম | তিনজনেই প্রশ্ন করল, ‘কে ?’ আমি চাপা গলায় বললাম, ‘আমি !’ ”

এতটা বলে আমি চায়ের কাপ তুলে মুখ নামিয়ে চুমুক দিলাম | এক, দুই ... ‘বেশ ভালো চা ...উমদা চা ...’
কাকলী বলল, “ইস! থামলে কেন ?”

আমি বললাম, “দু’জন উত্তর দিল, ‘দরজা ভেজানো আছে |’ শুধু একজন বলল,‘দাঁড়াও, কাপড় বদলে দরজা খুলছি |’ ”

সোনালী বলল, “মোটেও না ! অভদ্র কোথাকার !”
প্রতিমা বলল, “ইস, কী অসভ্য ! বয়ে গেছে !”
তপন বলল, “আমি কিছুই বুঝলাম না |”
কাকলী বলল, “এটা অসম্ভব কিছু নয় |”
নয়ন বলল, “কাকলী, কী অসম্ভব নয় ?”

কাকলী বলল, তপন আর নয়নের দিকে তাকিয়ে, “তিতুন খুব ভালো অন্যের গলা নকল করতে পারে | জাস্ট বিয়ের পর একবার বাবার গলা নকল করে ও আমাকে ফোন করে বলেছিল, ‘শোন, জয়ন্ত আজও ফোন করেছিল | ও নাকি তোকে ভুলতে পারছে না | কী করি বলতো ?”


------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ১৮ জুন ২০১৬

বুধবার, ১৫ জুন, ২০১৬

নিশানা

|| নিশানা ||


সোমেন বাবু বললেন, প্রেমের গল্প শুনবেন ? বিয়োগান্ত ?

আমি উত্তর না দিয়ে একটু নড়েচড়ে সজাগ হয়ে বসলাম | সোমেন বাবু বললেন,

আমি তখন পাশ করে কাজের জন্য হন্যে হয়ে আছি | বৌদির কাছে হাত পেতে চা, সিগারেট খাই | পাড়ায় হরির দোকানে বসে চা খেতে খেতে আড্ডা দিই | চা শেষ হয়ে এলেও শেষ বিন্দুটা খুরিতে লেগে আছে কল্পনা করে মুখ উঁচু করে খুরিটা কাত করে ঝাঁকাই | পকেটে দেশলাই বাক্সে কাঠির বদলে আধ খাওয়া সিগারেট থাকে | অনেক বন্ধু চাকরি পেয়ে চুটিয়ে প্রেম করছে, আমার কেউ নেই | তাই মন ভালো থাকে না |

একদিন পাড়ার রাস্তা দিয়ে সকাল সকাল যাচ্ছি, দেখি একটা কাগজ বিলি করা চ্যাংড়া মার্কা ছেলে প্রাণপণ চেষ্টা করছে তেতালায় একটা কাগজ ছুঁড়ে ফেলার | বারবার সেটা নিচে পড়ে যাচ্ছে | উপরে তাকিয়ে দেখলাম তেতলায় ব্যালকনিতে একটা অল্প বয়সী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে | আমি তাকাতেই মেয়েটা সরে গেল | আমার কী মনে হল, বললাম, “দাও তো ভাই দেখি, আমি একবার চেষ্টা করি |” ছেলেটা একবার উপরে তাকিয়ে অনিচ্ছুক ভাবে আমাকে কাগজটা দিল | আমি নিজেও কয়েকবার চেষ্টা করে পারলাম না | ছেলেটা বিরক্ত হয়ে বলল, “আপনার দ্বারাও প্রেম করা হবে না | মাঝখান থেকে আমার কাগজটা চোট খেল |” আমি অবাক হয়ে বললাম, “মানে ?” ছেলেটা বলল, “মানে আর আপনাকে বুঝতে হবে না | দিন কাগজটা | যাই আমি উপরে গিয়ে দিয়ে আসি |” আমার হটাত রাগ হয়ে গেল | আমি বৌদির কাছে থেকে নেয়া টাকাটা পকেট থেকে বের করে বললাম, “এই নাও কাগজের দাম |” ও কিছুতেই নেবে না | তখন ওর পকেটে জোর করে টাকাটা গুঁজে দিয়ে আমি হনহন করে হরির দোকানের দিকে পা বাড়ালাম | ছেলেটা পিছন থেকে এসে আমার হাত ধরে টেনে বললে, “দাদা, ভুল হয়ে গেছে | আর বলব না | কাগজটা ফেরত দিন |” আমি ওকে এক বকুনি দিলাম | ছেলেটা কাঁচুমাচু মুখ করে চাপা গলায় একটা বিরক্তিকর গালাগাল দিয়ে চলে গেল |

হরিকে পকেটে পয়সা নেই বলে চা চেয়ে কাগজটার হেডলাইনে চোখ বুলিয়ে খেলার পাতায় যাব বলে খুলতেই কাগজটার ভিতর থেকে একটা হ্যান্ডবিল বেরল | নির্ভুল ভাবে আধ-ভাঁজ করা দেখে অবাক হলাম – হ্যান্ডবিল তো খোলা রাখা হয় | এটা এমন ভাঁজ করা কেন ? ভাঁজটা খুলে দেখি আঁকাবাঁকা হাতের লেখায় কোনও এক মিলিকে কিছু আবোলতাবোল আবেগের কথা লেখা | তারই মধ্যে লেখা –

আমি যখন তোমাদের বারান্দায় কাগজ ফেলি, তুমি যদি বারান্দায় এসে দাঁড়াও তাহলে দেখবে আমার হাতের নিশানা ভুল হয় না | আমি এক টিপেই তোমার গায়ে কাগজটা ফেলতে পারি |

মুখের হাসি চেপে হ্যান্ডবিলটা পকেটস্থ করলাম | ফেরার পথে বাড়িটার সামনে এসে দেখি তার একপাশে সিঁড়ি দিয়ে উপরে যাওয়ার দরজায় মেয়েটা দাঁড়িয়ে | হয়ত উপর থেকে আমাকে আসতে দেখেছে | হয়ত আমার জন্য অপেক্ষা করছিল | আমাকে দেখেই আমার হাতের কাগজের দিকে তাকালো | আমি বোধহয় একটু ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি হেসেছিলাম | তাই দেখে মেয়েটা চোখ নামালো |

আমি বাড়ি ফিরে বৌদিকে ঘটনাটা বললাম | বৌদি, দেখি কাগজটা, বলে আমার হাত থেকে কাগজটা নিয়ে একবার চোখ বুলিয়েই ব্লাউজের মধ্যে কাগজটা সোজা চালান করে দিল | হাতাহাতি করার সুযোগ পেলাম না |

বিকেলে আমাকে চা দিতে এসে বৌদি বলল, “তোমার কাগজটা আমি মিলিকে দিয়ে এসেছি, দুপুরে |” আমি বললাম, “মিলি ?” বৌদি বলল, “আহা ! ন্যাকা  সাজা হচ্ছে ?... জানো, মিলি কাগজটা পড়ে বলল, তোমার দেওরের হাতের নিশানাও এমন কিছু ভালো নয় |” 


---------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ১৫ জুন ২০১৬

বুধবার, ৮ জুন, ২০১৬

চুল জড়িয়ে

|| চুল জড়িয়ে ||


দুপুর দুটো নাগাদ প্রমথকে স্থির হয়ে বসে থাকতে দেখে রথীন বলল, “বাবা, আপনি বিশ্রাম নেবেন না ?” প্রমথ বললেন, “না, আজ মনে হচ্ছে একটু বেশি খেয়ে ফেলেছি | অনেকদিন পরে তোমাদের সাথে খেলাম তো | কথা বলতে বলতে লক্ষ্য করি নি |” বিশাখা পাশে এসে বসে বললে, “কেন বাবা, কী কষ্ট হচ্ছে ? একটু জোয়ান দেব ?” প্রমথ ম্লান হেসে বললেন, “না রে, থাক | পেটটা একটু ভার হয়েছে | আবার ঠিক হয়ে যাবে |” রথীন বলল, “বাবা, আমার মনে হয় আপনি শুয়ে পড়লে ঠিক হয়ে যাবেন |”

বিশাখা বলল, “বাবা ভাত বেশি কেন খেলে ? তুমি খিদের আন্দাজ করতে পার না ?” প্রমথ বললেন “ভাতের আন্দাজ তো আছে | কিন্তু তুই এত সব রেঁধেছিলি, তাতেই বেশি হয়ে গেল |” রথীন অবাক হয়ে বলল, “বাবা আমি বুঝলাম না |” প্রমথ বললেন, “কত খিদেয় কত ভাত খেতে হয় তার অভ্যাস তো সেই ছোটবেলায় হয়েছে | তখন ভাত খাওয়া বলতে সাথে একটু ডাল, আর আলু পোস্ত কি কুমড়োর ছেঁচকি, গরমকালে ডালে সর্ষে ফোড়ন দিয়ে দুটো কাঁচা আমের টুকরো ছেড়ে দেয়া | সপ্তাহে হয়ত একদিন পোনা মাছ | তখন ভাত খেয়েই পেট ভরত | আর আজ ...” বিশাখার মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, “মেয়ে আমার কত পদই যে রেঁধেছিল | তাই ভাতের সাথে আনুষঙ্গিক সব খেয়েই খাওয়াটা বেশি হয়ে গেল | দোষটা ওই ছোটবেলার অভ্যাসের |” রথীন বলল, “আমরা যখন নেই, তখন কি আপনি বেশি খান না ?” প্রমথ বললেন, “তোমরা না থাকলে মিন্টুর মা ওই এক তরকারী, ডাল ভাত করে দিয়ে যায় | ও না এলে আমি আলু ডিম সেদ্ধ করে ফ্যানা ভাতের সাথে খেয়ে নিই |”

রথীন বলল, “আপনি যদি না ঘুমন তাহলে চলুন কোথাও থেকে ঘুরে আসি | এমন শীতের দুপুর ... |” বিশাখা আঁতকে উঠে বলল, “এখন কোথায় যাবে ? আমার যে ভাত ঘুম পাচ্ছে |” “আহ, চলো না | বাবার গাড়িটা কতদিন পড়ে আছে |” প্রমথ বললেন, “না, বিশু এসে মাঝে মধ্যে স্টার্ট দিয়ে যায়, জল, তেল, ব্যাটারিও দেখে নেয় | তবে সেই তোমরা পুজোয় এসেছিলে, তারপর আর গাড়িটা নড়ে নি |” চাঙ্গা হয়ে উঠে প্রমথ বলল, “চলো তাহলে | আমরা পুরুলিয়া ঘুরে আসি |” বিশাখা বলল, “আমি যদি গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়ি ?” প্রমথ বলল, “কোন অসুবিধা নেই |”

কোকালিয়া পার হতেই পিছনের সিট থেকে প্রমথ রথীনের কাঁধে আলতো করে হাত রেখে ফিসফিস করে বললেন, “মেয়ে আমার ঘুমিয়ে পড়েছে |” রথীন গাড়ি চালাতে চালাতে ঠিক দেখে নি | খুব আস্তে করে গাড়িটা রাস্তার এক পাশে দাঁড় করিয়ে নেমে বাঁ দিকের দরজা খুলে বিশাখার সিটটা পিছিয়ে দিয়ে তার পিঠটা পিছনে হেলিয়ে দিল | বিশাখা একবার উঁ করে উঠে শরীরটাকে হেলান সিটে মিশিয়ে নিল | তারপর মৃদু স্বরে বলল, “থেমো না | চালিয়ে যাও |”

রথীন গাড়িটা চালু করে একটু বেগ নিতেই প্রমথ বললেন, “সামনের লেভেল ক্রসিংটায় একটু থামবে ?” রথীন দেখতে না পেয়ে বলল, “কোথায় লেভেল ক্রসিং ?” প্রমথ বললেন, “চলো, আরও মাইল কয়েক পরে, রঘুনাথপুর ঢোকার আগে | ওখানে একটু থেমো |”

লেভেল ক্রসিং পৌঁছে রথীন ভুলে গিয়ে পার হয়ে যেতে যেতেই প্রমথ বললেন, “এই এখানে ... এখানে একটু থামো |”

জোরে থামানো গাড়ির ঝাঁকুনিতে বিশাখা চোখ খুলে বলল, “কোথায় এলাম আমরা ?” প্রমথ বললেন, “টুকু পিসির লেভেল ক্রসিংয়ে | তুই নামবি ?” বিশাখা বলল, “না, তুমি যাও | আমরা একটু গাড়িতেই বসছি |”

প্রমথ গাড়ি থেকে নেমে রেল লাইনের দিকে যেতে শুরু করলে ওনার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে রথীন বলল, “টুকু পিসি কে ? আমি তো কোনদিন নাম শুনি নি |” বিশাখা বলল, “আসলে পিসি নয় | বাবার ছোটবেলার খেলার সাথী |”
-    “গার্লফ্রেন্ড, বান্ধবী ?”
-    “ঊঁহু ... বাবার ছোটবেলার খেলার সাথী |”
-    “ও |” না বুঝে রথীন চুপ করে থাকলো |

একটু পরে বিশাখা বলতে শুরু করল ...
“বাবা আর টুকু পিসি ছোটবেলায় একসাথে খেলত | খেলার মধ্যে ঝগড়াও ছিল | মাঝে মধ্যেই চুল জড়িয়ে ঝগড়া করত | দুজনের বাবা মা ওদের ছাড়াতে পারত না – এই ভাব, তো এই ঝগড়া, তো এই আড়ি |”

রথীন বিশাখা চুপ করে যাওয়ায় বলল, “তোমার গল্পটা এখানেই শেষ নয় বোধহয় ?”

বিশাখা আবার বলতে শুরু করল ...
“বড় হয়ে ওঠার আগেই দুজনে আলাদা | তারপর টুকু পিসির কী হল কে জানে | এদিকে, আমি ছোট থেকে দেখেছি বাবা মার সাথে ভীষণ ঝগড়া করত, কী প্রচণ্ড অনমনীয় মনোভাব নিয়ে, সে বলার নয় | কারণ জানতাম না, কিছু বুঝতামও না |

“তারপর, একদিন, তখন আমি স্কুলে এইটে উঠেছি | টুকু পিসি বাড়িতে এল | খুব বড় অসুখ থেকে উঠেছিল | পিসেমশায় আসতে পারে নি | পিসিকে ট্রেনে তুলে দিয়েছিল, বাবা স্টেশনে গিয়ে নিয়ে এসেছিল | একদিন বাবা, আমাকে, মাকে আর পিসিকে নিয়ে গাড়িতে করে এখানে এসেছিল | পিসি সারাটা পথ চুপ করে বসেছিল |

“এখানে নেমে, বাবার কী মনে হল, বলল, টুকু, চল ছোটবেলার মত চুল জড়িয়ে ঝগড়া করি | ও মা ! জানো, পিসি কী বলল ? বলল, ঝগড়া করার মত আর চুল কি আছে যে ঝগড়া করব তোমার সাথে | বাবা অবাক হয়ে বলল, কেন ? পিসি মাথায় পরা পরচুলা খুলে বলল, এই দ্যাখো |

“কেমোথেরাপি করে পিসির সব চুল পড়ে গিয়েছিল | এর কিছুদিন পরে পিসি ফিরে গেল | তারপর আর বেশিদিন বাঁচে নি |

“ পিসির মারা যাওয়ার খবর পাওয়ার পর মায়ের অদ্ভুত পরিবর্তন হল | কদিন খুব কাঁদলো | তারপর আমাকে একদিন ডেকে বলল, দেখিস, তোর বাবার সাথে আমি আর ঝগড়া করব না | আমি না বুঝে বললাম, ভালোই তো | কিন্তু বাপি যদি করে ?

“আমি তখন বাবাকে বাপি বলতাম ...
   
“মা বলল, করলে আমি মুখ বুজে থাকব | আমি বুঝেছি ... ও কি আর আমার সাথে ঝগড়া করে ? ও তো ওই টুকু পিসির সাথে ঝগড়া করে | বলে মা আবার কাঁদতে লাগল |

“তারপর আমরা আর এখানে আসি নি | আমি জায়গাটার কথাও ভুলে গিয়েছিলাম |”


----------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ৮ জুন ২০১৬

শুক্রবার, ৩ জুন, ২০১৬

ইতিবৃত্ত

|| ইতিবৃত্ত ||


প্রথমে, আমার কিছু সর্বশেষ লেখার উল্লেখ করি :

  1.  কাব্যকল্প - ওথেলোর একালাপ
  2. গল্প – অপেক্ষা 
  3. কবিতা -মেনি বিড়াল
  4. রম্যরচনা - কাঁচা লাউয়ের সোওয়াদ
  5. অনুবাদ - তুষার সন্ধ্যায় বনানী সমীপে বিরাম
  6. রম্য ছড়া - মধুমেহ
  7. নাটকীয় গল্প -পাঁচ মিনিট

২০১৩’য় কর্ম জীবন থেকে অবসর নিয়ে মনে হয়েছিল ‘অনেক পড়েছি, এবার কিছু লেখা যাক !’ ব্লগিং শুরু করেছিলাম |

মাতৃভাষার সাথে মৌখিক ছাড়া প্রায় সব বাকি সম্পর্ক স্কুল ছাড়ার পরেই চুকে গিয়েছিল | উল্লেখযোগ্য বাংলা লেখা শেষ পড়েছি মনে হয় সমরেশ বসুর ‘বিবর’, ‘প্রজাপতি’, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘ঘুণ পোকা’ ... তারপরেই কলেজের নানান চাপ, নকশাল গোলমালের ফলে দক্ষিণ ভারতের কলেজে স্থানান্তর, চাকরি প্রথম এগারো বছর দক্ষিণ ভারতে | এইভাবে, ক্রমে ক্রমে বাংলা বলাও, এক নিজের বাড়িতে ছাড়া, বিরল হয়ে উঠল | তারপর পড়া বলতে শুধু অফিসের কাগজ পত্তর আর যত প্রাযুক্তিক বিবরণী |

লিখতে শুরু করে বুঝলাম ব্যবসায় জগতে মার্কেটিংয়ের এত গুরুত্ব কেন – বেচতে হলে খরিদ্দারের হদিস তো চাই ! তাই বন্ধুদের গ্রুপ-মেইল থেকে টুকে একটা বিরাট তালিকা করে ফেললাম ই-মেইল ঠিকানার | প্রথম লেখাগুলো ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠাতাম | অচেনা লোকের কাঁচা লেখা – কেউ দয়া করে পড়লেও কোনও মতামত কি সমালোচনা জানাত না | তখন এই ব্লগিংয়ের ধারণা মাথায় ঢুকল | কবে জানি না ‘গুগল ইনপুট টুল’ ডাউনলোড করে ফেলেছিলাম, সেই সাথে অভ্র স্পেল চেকার | কিছুদিনেই দেখলাম গড়গড় করে লিখে ফেলছি – তবে পাঠক তাও তেমন জুটল না | তখন খোঁজ পেলাম lonelyblogs.com এর | ওদের পাতায় লেখা “We made this website in order to support bloggers from all over the world and the blogger community.”

বেশ কিছুদিন আগে ওদের খাতায় নাম লিখিয়েও ফল পেয়েছি খুব সম্প্রতি |  সেপ্টেম্বর – অক্টোবর ২০১৫ থেকে দেখছি আমার ব্লগে পদধ্বনির কম্পাঙ্ক বেড়েছে | 

পাঠকের কাছে অনুরোধ: পড়ে ভালো লাগলে মন্তব্য করবেন | কিছু জানতে / জানাতে চাইলে যোগাযোগ করবেন এই ঠিকানায়: Indroneer@gmail.com


-------------------------------------------------------