শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৫

অপ্রেমসুখ

|| অপ্রেমসুখ ||


আর তো প্রণয় সুখ জাগে না এই বুকে
সময়ের খাঁজে ভাঁজে গিয়েছে সে চলি
সারা রাত চাঁদ, নীহারিকার তারকাগুলি
মেলায় আঁখি, করে অস্ফুটে কী বলাবলি

স্মরি, একদা এক বালুচরে তুলিয়া মাথা
চাহিয়া আকাশে, এক বধ্য হরিণ শাবক
দেখিয়াছিল কাশবন হতে চাঁদ পানে
নীরবে উড়িয়া যায় শত সহস্র শুভ্র বক
তাহাদের মাঝের সম্পর্ক হীন ব্যবধানে
দ্বিধাহীন সাবলীল গতির একাকী উড়ানে
ছিল এক নির্বাক নিষ্পাপ সংকেত যেন
প্রেমহীন জীবনের অবাধ স্বাধীন বিচরণে
কাটিবে না তাহারই বা এ জীবন কেন ?
তখনই তটিনীর স্রোতে দেখিল সে মুখ
দেখিল হরিণ নয়নে জাগিয়াছে এক সুখ
জলতরঙ্গে কাঁপিয়া উঠিলে তাহার শিহরণ
করিল সে সলিলে ব্যাকুল আত্মা নিমজ্জন

সেই হতে আর প্রণয় জাগে না এই বুকে
খুঁজি আমি সময় সলিলে সমাধিস্থ শাবক
বুঝি না আছি কি আনন্দে, নাকি বড় দুখে
দেখি শশাঙ্কের বুকে ছাওয়া বকের কুহক ||


-------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ৩০ অক্টোবর ২০১৫

বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৫

মুখোশ

|| মুখোশ ||


এই দ্যাখ না খাপ খুলেছি, নামিয়েছি মোর কাছা
ভয় পাস কি, ওরে আমার ভদ্দরনোক যত বাছা ?
শরীলটায় যে বড্ড গরম, খুব দরকার করি নাই
কিন্তু ভায়া পষ্কের জল বলতো কোথায় পাই
তাই পাবলিকে উদোম গায়ে লাগাই ঠাণ্ডা হাওয়া
তাতেই মেটাই হ্যাংলা চোখের যত চাওয়া পাওয়া
কী বললি, খোলা ন্যাংটামি সুশীল আচরণ নয় ?
তবে যে বলে, ন্যাংটোর নেই বাটপাড়ের কোন ভয়
কেন বলছি ? আসলে খাপে নেই কোন তলোয়ার
নিন্দুকেরা বোঝে না মোটেই, রহস্যময় সব ব্যাপার
আসলে আমার খাপই সার, সার ওই কোঁচান কাছা
কেউ জানে না ভদ্দরনোকের মুখোশটা অতি ওঁছা ||


---------------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ২৯ অক্টোবর ২০১৫

বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৫

আদিম পুজো

|| আদিম পুজো ||


জি-টাউনের ঘাসি ক্লাবের দুর্গা পুজোর কাজে
ম্যারাপ বাঁধা দিন-কয়েকের বিশাল ছাঁদনাতলা
সকাল ভাঙে শঙ্খ, ঢাক আর কাঁসরের আওয়াজে
সন্ধ্যে হলেই ফুলপরীদের চাঁদনী হাটের মেলা

সদলবলে কার্তিক সব মৌজুদ হয় একপাশে
গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, হাতে কোমর বেঁধে,
দেখে পরীরা আসছে ফুলেল এসেন্স আতর বয়ে
রেশম শাড়ি সেফটিপিনে আঁটকে সুডোল কাঁধে

শামিয়ানার খুঁটির গায়ে লাল -হলুদ-নীল বাতি,
বর্ণালী তার, চোখের চাউনি করে দেয় ঘোরালো
তার বাইরেই হাতছানি দেয় নিকষ আদিম রাতি
হ্যাজাক আর পেট্রোম্যাক্সের আলোয় ঝলোমলো

রাত বাড়লে ভিড় কমে যায়, ঝিমিয়ে পড়ে ঢাক
পরীরা সব ঘুম চোখে নিয়ে ফিরে যায় যে যার বাড়ি
শুধু রয়ে যায় দশভুজা মা, আর এক নারী নির্বাক
দুই দুর্গায় অনেক তফাত, অনেক দিনের আড়ি

দশভুজার শ্রীচরণ তলে সিংহ আর মহিষাসুর
দুই পাশ ঘিরে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী
আর এই দুর্গা শান্ত বসে হর্ষে-বিষাদে মেদুর
আপন মনে চায় কি কারো গোপন অঞ্জলি আরতি ?

প্রতি বছর অষ্টমী রাতে চুপিসারে আসে অসুর
নিঃশব্দে বাইরে থামিয়ে গাড়ি নেভায় সব বাতি
প্যান্ডেলের শেষে দাঁড়িয়ে, মুখে সিগারেট জ্বেলে,
কব্জি ধরে চেপে দেখে তার হারছে নাড়ির গতি

বছর কয়েক আগে একবার সে দুর্লভ দুঃসাহসে
একটি রাতের জন্য হয়েছিল প্রেমিক প্রবর অসুর
আলো আঁধারে আদিম রাতে আবেগের অনুপ্রাসে
শুনিয়েছিল এই অবলার কানে প্রেমের আগমনী সুর

সেই অবলাটি কোন অজান্তে হল একদিন নারী
ইচ্ছে হল দেবীর বুক থেকে দেবে অসুরকে নির্বাসন
অসুরও আবার ঘুরে ফিরে কাপুরুষ হয়ে বেচারি
ত্রিশূল ফলায় বুক পাতবার চিন্তা দিল বিসর্জন

এই ভাবেতেই প্রতি বছর ঘাসি ক্লাবের পুজোয়
শুরু করা এক আদিম পুজো আর যে হয় না সারা
দুর্গা, অসুর, কার্তিক আর ফুলপরীদের ভাব দেখে
মেঘের আড়ালে মুখ লুকায় চাঁদ, শিউরায় তারারা ||


----------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ১৫ অক্টোবর ২০১৫

মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৫

যা মা

|| যা মা ||


আর তো মা সয় না এই বুকে দুখ
দৈন্যের মাঝে তোর রূপ খোঁজা
“গ্রাম ছাড়া ওই রাঙ্গা মাটির পথ”
রক্তে রাঙ্গা মা, রক্তে রাঙ্গা, দ্যাখ ...
কী করে বই বল এ’ ব্যথার বোঝা ?

খরার পর খরা এলো আর গেল
শুকলো খাল-বিল, পুষ্করিণীর জল
শরীরের ঘাম কী, রক্তও শুকলো
ফাটল মাঠ, ঘাট, আর কত বুক ...
খরা চোখে ফোটে কি নীলোৎপল ?

তাই বলি মা, আর আসিস না ঘরে
পারব না মা দিতে পুষ্পের পুজো
দারিদ্রের বোঝায় ধুঁকছি সব মোরা
সইছি নীরবে অনশনের অপমান ...
ঝুঁকেছে মেরুদণ্ড, পিঠও কুঁজো

আসিস নে মা, আর আসিস নে
দূর থেকে যা পুজো নেবার, নে
দারিদ্রের রোগ ছুঁয়েছে সবাইকে
ধনী, নির্ধন, লোভী, পাপী, পুণ্যবান ...
যা মা, এ জগতে আর পা দিস নে  !!

-------------------------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ১৩ অক্টোবর ২০১৫

মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০১৫

মা আসছে

|| মা আসছে ||


ঝরছে শিউলি, দুলছে কাশের জটলা প্রভাতী বাতাসে
মা আসছে ? আসছে, আসুক, আমার কী যায় আসে !

মা আসে যায়, ধুপে আর ছায়, উঠোনে, বাটে, ঘাটে
স্মৃতি চলে যায় শিকল আঁটকে, সংসার তুলে পাটে
মেঘ কেটে ওঠে উজ্জ্বল রোদ, জ্বলে পোড়ে এক মন
‘মা বলিতে প্রাণ করে আনচান’, শুনি মন্দ্রিত উচ্চারণ
কেন তুমি আসো মা, চুপি চুপি এসে আঁচলে মুছে মুখ
শুনে নাও আমার জীবনের কথা, মিশে আছে সুখ দুখ
এ যাত্রায় আর হোলো নাকো সারা শুরু করা সব কাজ
তোমায় সাজিয়ে ঘরে যে আনব, সে আশা দুর্লভ আজ

তাও আসছ ? বুঝেছি, দেখতে আছি আহ্লাদে না ক্লেশে
দেখো আমি আছি কাশে, শিউলিতে, প্রভাতের আবেশে  ||


--------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ০৬ অক্টোবর ২০১৫