শনিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৪

কড়া নাড়ার হিসেব



|| কড়া নাড়ার হিসেব ||


তুমি ছিলে না, তাই গেলেম ফিরে
খামখা দরজার কড়া নেড়ে নেড়ে
কড়া নাড়ার হিসাব থাকলো তোলা
তোমার তুলে যাওয়া শিকলের মত
ফিরে এসে আর খিল দিও না দোরে
ঘুম পেলে, চোখ মুছে, থেক জেগে
এবার যখন আসব, সোজা ঢুকব ঘরে
না দাঁড়িয়ে ... কড়াও আর না নেড়ে
...
খিলের হিসাব ? তখনই মেটান যাবে  ||


------------------------------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ৩০ অগাস্ট ২০১৪

শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৪

শরতের প্রতারণা

|| শরতের প্রতারণা ||


আজ মেঘের পিছু মেঘ ছুটিয়েছি অশোভন তাড়নায়
বসে বসে ভেবে তোমার কথা এই শরতের প্রতারণায়
এসেছে শরৎ রৌদ্রজ্জ্বল, উদ্ভাসিতে আঁধার যত স্মৃতি
তুমি নেই তাই লাগে না ভালো সোনালী সবুজ প্রকৃতি

মিছিমিছি তুমি বলেছিলে কেন আসবেই আবার ফিরে
কই এলে না তো, একবার হারিয়ে অস্থি মজ্জার ভিড়ে
উরু, তলপেটে মোচড় দিয়ে যায় তোমার ঐ শূন্যতা
তাই ছুটিয়েছি মেঘের পিছু মেঘ, জানাতে সেই বার্তা

এসো তুমি এসো, না হয় আমার দেবীর সজ্জা সাজে
হৃদয় হীন এই অধমের বুকের জরাজীর্ণ পাঁজর মাঝে ||


----------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ২৯ অগাস্ট ২০১৪

হেমাঙ্গিনী

|| হেমাঙ্গিনী ||


বড় ভয়ে জাগি, হেমাঙ্গিনী, নিথর আঁখি পল্লব তুলে ধরে
তুমি যাবে যাও, টুক করে তলিয়ে, অবাধ্য ঘুমের ঘোরে
আমারও যে চোখে লাগে ঘুম ঘোর, দৃষ্টি চকিতে হারায়
মাথা ঢলে পড়ে তোমারই পাশে ওই ফেননিভ শয্যায়

বুঝি বিদায়ের ভারে ভারী আজ, তোমার চোখের পলক
হৈম সাজে সেজে বিছিয়েছ যে আঁখিতে ঘুমের অলক
তাই, নিশ্চিন্তে ঘুমাও হেমাঙ্গিনী, রাত তো অনেক হল
আমি জেগে দিই পাহারা, কখনও যদি তুমি চোখ খোল

যারা চিন্তিত, কেন তোমার হেমাঙ্গ জেগে দিই পাহারা
তারা জানে না, সম্পর্কের অন্তে একজন হয় নিদ হারা
বোঝে না, কখনও পারে না দুজনে সাথে আঁখি বুজতে
কে আগে ঘুমবে, কে বা পরে, কেন যায় মিছে খুঁজতে

আমি ঘুমব, তুমি জাগবে, এমন তো কথা কিছু ছিল না
এবে কেন তুমি জাগবে, যখনও ঈষদুষ্ণ বিন্যস্ত বিছানা
বলি, এই বেলা যাও হেমাঙ্গিনী, নিবিয়ে দিয়েছি আলো
যাও চুপিসারে পারাপারের নাওয়ের নোঙ্গরখানি তোল

যৌবনের ভাঁটার সাথে সাথে সময়ের জোয়ার জোরদার
বয়ে যাও ওই জোয়ারে ; মিলব ঠিকই মোহনায় পুনর্বার
ততদিন হেমাঙ্গ নিয়ে আমি বসে রইব সাজিয়ে শূন্য অঙ্ক
না চেয়ে ছোঁয়াতে হেমেতে হোম অনলের কলুষ কলঙ্ক

তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাও, হেমাঙ্গিনী, ফুটছে ভোরের আলো
তুমি যাবে আগে, আমি কিছু পরে, সেই মন্দের ভালো ||


-------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ২৯ অগাস্ট ২০১৪

বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৪

আজও

|| আজও ||


আজও আঁকা আছে আমার বিবর্ণ দিনলিপি পাতায়
আকাশের বুকে মেঘ আর কিছু ভাসমান বক অলস
আর আছে লুকিয়ে রাখা হলদেটে গজদন্ত ডিবেটায়
তোমার ঘড়ির ছিঁড়ে যাওয়া প্রথম সোনালী বকলস

এ সবের মধ্যে কী যোগাযোগ, কে জানে, কী উপায়ে
সমুচ্চারণে কাছাকাছি, তাই কি সম্পর্কটা কাছাকাছির
যদিও তুমি বারবার দেখতে ঘড়ি, সময় নষ্টের ভয়ে
যেমন ফুলের তর সয় না, দেরি দেখে তার মৌমাছির

সোনালী, অলস, নষ্ট সেই দিনগুলো গেল যে কোথায়
কোথায় গেল সময়ের মাখোমাখো মৌ-ফুল ঘনিষ্ঠতা
মৌমাছিরা তো কই আর আসে না, বসন্ত ফিরে যায়
আকাশ, মেঘ, বক, ফুল, মৌ, তুমিও গুটিয়েছ পাতা

কেন সময়ের আগেই বুজেছ গজদন্ত ডিবের ঢাকনা
সোনালী বকলসে আটকিয়ে বক অলস এর দুই ডানা ||


-----------------------------------------------------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ২৮ অগাস্ট ২০১৪

বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৪

তিলোত্তমার সমভিব্যাহার

|| তিলোত্তমার সমভিব্যাহার ||


রেল-‘টিশানের টিকিট-বাবুর ভীষণ খারাপ মতিগতি,
বলে, “লাইন ছেড়ে দাঁড়া, বৌরা যাদের আছে পতি”
ইচ্ছে হল দিই জবাবে, যুতসই এক মুখঝামটা টাটা
আমার বেলায় বলে কিনা, “সরা মুখের ঘোমটা-টা !”

(... তা, যাক ...)
আব্রু খসালে, ভুরু কুঁচকে, মুখখানি মোর খুঁটিয়ে চেয়ে
বললে, “যাবি কতদূর লো, অচিন গাঁয়ের চিকণ মেয়ে ?”
প্রশ্ন করি, “হেথায় কি ‘কোত্থাও’ যাওয়ার টিকিট আছে ?”
বাবু বললে, “আগে বল তুই, দূরে যাবি, না ধারে-কাছে”
আমি বললেম, “ইচ্ছে আছে যেতে কোনও অচিনপুর”
বাবু বলে, “সেথা যেতে পারিস, গড়িয়ে যাবে সারা দুপুর
তারপরেতে ফিরতে চাইলে দেখবি নেইকো গাড়ি আর
অচিনপুরেই করতে হবে বাকি দিন আর রাতটা কাবার”
আমি শুধাই, “তা, নয় হোলো, তাতে তোমার দায় কী ?
ফিরতি-টিকিট দিলেও দিও, দাম আধা তার রেখে বাকি
ফিরে আসবই, নাগর সাথে, বাকি পয়সা চুকিয়ে দিতে”
বাবু হাসে, “তার চেয়ে তুই, আমায় নিয়ে যা বিকাতে”

এই ভাবেতে, ছল-কথাতে, ছল-হাসিতে হয় বড্ড দেরী
তবুও বাবুর মন মানে না, গলার আওয়াজ শোনায় ভারী
বলে, “তুই হক কথা শোন, বলছি যেমন, তেমনটি কর
ইস্টিশানের পেলাটফর্মে, দেখবি আছে এক অপেক্ষাঘর
দূর পাল্লার ট্রেনের পালা, দ্যাখ বসে তার জানলা দিয়ে
চোখে দেখে, নে না বালাই, দূর দূরান্তের আশ মিটিয়ে !”

(ভাবি)
‘যে সব জায়গার নাম শুনে চক্ষু হয় মোর ডাগর ডাগর
ঐ রায়রংগড়, রূপনারাণপুর, স্বপনপুরী, কি চাঁদনীনগর ...
নাগর আমার ভুগছে নেশায়, নিরুদ্দেশের, সর্বনেশে
কী দরকারে ছুটব আমি, তার খোঁজে অজ ভিনদেশে ?’

যেতে গিয়ে, খোলা মাথায় সিঁথির ‘পরে আঁচল তুলে,
শুনি পিছন থেকে আমায় ডেকে টিকিট-বাবু বলে,
“দেখে রাখলি, ফিরে আসিস, আমার এই টিকিটঘর
যেথাই যাবি টিকিট পাবি, ইস্টিশানও সব কী জব্বর !”
...
“এখন যা তুই, বেলা হল, মা বেড়েছে ভাতের পাত
ভাত-ঘুমেতে দিন কাটিয়ে ফিরব আমি সাঁঝ কি রাত”

(ভাবি)
‘টিকিট-বাবুর বুঝি জুটেছে, কালিদাসের বৌ, বরাতে
নইলে কি কেউ টিকিট বেচে ইষ্টিশানে পড়ে রাতে ?’

(তখনই)
টিকিট ঘরের জানলা বন্ধ করতে তার দু’ হাত বাড়িয়ে
বলে টিকিট-বাবু, আমার তিল-চিবুকে হঠ নজর দিয়ে,
“আগে কেন দেখিনি তোর, সুন্দর ওই আঁচিল ? ও মা,
কী সুন্দরী. কী রূপসী তুই, তিল-আঁচিলের তিলোত্তমা !
হুম ...
লাগবে না তোর টিকিট, তুই যা ফিরে তোর বাড়িতে
সাঁঝ-বেলা তোকে উঠিয়ে দেব, উজ্জয়িনীর গাড়িতে”

...
রেল-‘টিশানের টিকিট-বাবু, কালিদাস, এক ফেরেববাজ
মিছেই, কথায় লুটেছে মোর তিল-আঁচিলের সখের লাজ   ||


------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ২৭ অগাস্ট ২০১৪

রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৪

সই কত

৷৷ সই কত ৷৷


“কত সই, সই হয়, বলো কী করে বহু সই সই ?”
একই প্রশ্ন, তাৎপর্য পূর্ণ, করেছিলে তুমি পইপই
অভিধানে যখন নেই ‘সইত্ব’ – যেমন ‘সতীত্ব’
কেন করো শত প্রশ্ন, জেনে সইত্ব বর্জিত সত্য

এ এমন প্রশ্ন, যা সৈকত ভ্রমণে না করলেই নয়
উত্তর যার সংখ্যায় নয়, শুধু সম্পর্কে গভীর হয়
তবুও, কিসের ভয়ে অপচয় করো সব সম্পর্কের
কেন শত প্রশ্নে খোঁজো, এক অবকাশ বিতর্কের
...

তুমিই বলেছিলে, সমুদ্রসৈকত উপচে নানান সই
চাইলেই পাওয়া যায়, কি বেমানান কি মানানসই
তাই তো করে নিয়েছিলাম তোমাকে মনোনীত
হলেও, আমাদের সম্পর্কটা জটিল সুবাদ প্রণীত

কিন্তু কী হল সমুদ্রের ওই এলোমেলো হাওয়ায়
কী তুমি খুঁজলে, কী দেখলে সম্পর্কের ছলনায়
কেন আকাশে চমকাল ঝিলিকে, উদ্ধত অশনি
মূক শোকে নিঝুম হল ক্যাসুয়ারিনার মর্মরধ্বনি

কেন হাতে ধরা হাত তোমার নিথর হল খসে
চোখে কেন জল আনলে তপ্ত নোনা বাতাসে
আছড়ে পড়ে মুষল ঢেউ, কী অসন্তোষে খিন্ন
কেন মুছে দিল বালিতে পাশাপাশি হাঁটার চিহ্ন

ঘরে ফিরলাম সংকোচে, পঙক্তিতে সারিবদ্ধ
আলাদা হল মেলানো চোখ, বার্তা হল নিষিদ্ধ
রাত্রি কাটালে বিনিদ্র প্রহরায়, দূরত্বের প্রবাসে
প্রভাতে আয়না হল বাষ্পাকুল, অশ্রুর সকাশে

সেদিন তুমি ছেড়ে চলে গেলে, বদলে কামরা
শিরশিরে শিহরণে কুঁচকে দিয়ে আমার চামড়া
সরে গেলে ওই আস্তরণের নিচ থেকে চিরকাল
শুধু রেখে গেলে দেরাজে, অশ্রু ভেজা রুমাল

আমাদের নিপতিত সম্পর্কের ঐ শেষ চিরকুট
বলতে যা চেয়েছিলে, রয়েছে তাতে অস্ফুট
তার অশ্রুসিক্ত আর্দ্রতায়, সাগরের চেয়ে নোনা
তোমার অশেষ প্রশ্নটা, আমি কখনই ভুলব না

“বল, কত সই সই ?”
...

কী বলি  –
সব পুরুষেই লুকিয়ে আছে মুখচোরা এক নুলিয়া
জলকন্যার সংস্পর্শে উন্মোচিত হয় তার হুলিয়া
তাই তো সৈকতে সই কতই হয়ে যায় অজান্তে
প্রশ্নটা তাই, সৈকত ভ্রমণে, না করলেই পারতে ৷৷


---------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ২৪ অগাস্ট ২০১৪

শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৪

তোমার শহরে এসে

|| তোমার শহরে এসে ||


বহুদিন পর, তোমার শহরে এসে ফিরে গেলাম
অনেক কিছুই আছে সেই রকম, শুধু তুমি ছাড়া
অনুযোগের বেশি কিছু নেই - রয়েছি যা ছিলাম
শুধু তুমি থাকলে শহরটা লাগতো না হতচ্ছাড়া

স্টেশনে হলের সেই বড় ঘড়ি, সময়ের প্রহরায়
যার তলে তুমি থাকতে দাঁড়িয়ে ; মণিবন্ধ তুলে
নিতে দুই ঘড়িতে সময় মিলিয়ে কাঁটায় কাঁটায়
ভাবতে দেরী হলে, আমি কি গেছি আসতে ভুলে

স্টেশনে নেমে আমি দিতাম আমার ঘড়ি পিছিয়ে
তুমি আমায় দেখার আগেই বলতাম রুদ্ধ প্রশ্বাসে
“খুব দেরী হয়েছে বুঝি, তুমি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ?”
“এই তো মিনিট দশেক, বেশি নয়”, বলতে হেসে

নিরালা বাস স্ট্যান্ডটা আছে তেমনই, জলে কাদায়
দাঁড়িয়ে ক্লান্ত পোড়া লাল বাস এক পাশে কাত হয়ে
সেই যে, “দাঁড়াও, আমি আগে উঠি” বলতে আমায়
আজ শুনতে আমি মিছেই থাকলাম পাদানি মাড়িয়ে

মনে পড়ল বাসে চেপেই তুমি ছুটে দোতলায় যেতে
দেখতে আছে কি একদম সামনে কোনও খালি সিট
“চলো না, যাই পরের বাসটায়”, না পেলেই বলতে
পেলে, “আজ আমার পালা”, আউড়ে কাটতে টিকিট

আজও আমি সামনের সিটে বসে গেলাম শেষ স্টপ
গুমটিটা সেই আছে, শুধু নেই সেই চায়ের দোকান
একটু এগোলে তোমাদের পুরানো বাড়ির পূজামণ্ডপ
সবই সেই তেমনই আছে, শুধু কেন কত যে নিষ্প্রাণ

ওখানেই একদিন দেখা ... একদিন অবুঝ ছাড়াছাড়ি
আমার একটি ভুল কথায় তুমি করেছিলে অভিমান
আমি ফিরে আসবো জেনেও তুমি দিলে দূরে পাড়ি
করে এই স্টেশন, বাস, শহরের পরিচিতির অবসান

পালিয়ে পালিয়ে থেকে আজ আমি এসেছি ফিরে
স্টেশনে নেমেই ঘড়ি দিয়েছি দশ মিনিট পিছিয়ে
জেনেও, যায় না ঘড়ি পিছানো সেই বিগত বছরে
এখন আমার বাড়তি মেয়াদ ওই দশ মিনিট নিয়ে

বহু বছর পর, তোমার শহরে এসে ফিরে গেলাম
সব কিছুই লাগলো অচেনা, হারিয়ে যাওয়া কড়ি
অনুযোগের কথা এই, যে দশটা মিনিট হারালাম
তুমি থাকলে হত না, বিদায়ে মিলিয়ে নিতাম ঘড়ি ||


--------------------------------------------------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ১৬ অগাস্ট ২০১৪


সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০১৪

কলির কেষ্ট

|| কলির কেষ্ট ||


প্রথমা রাধা ও দ্বিতীয়া অনুরাধা
দুই প্রিয়া সখী নিয়ে বড়ই ধাঁধা

রাধার বাড়ি দূরদেশ, নয়নজুলি
অনুরাধার পাশেই, কুমারটুলি
রাধার রংটি খাঁটি ঘোর শ্যামলা
অনুরাধার, কৃত্রিম কাঞ্চন গলা
রাধার চক্ষু জোড়া পটোলচেরা
অনুরাধার, অজ্ঞাত ফন্দি ভরা
কী দেখনহাসি, রাধার মুখশশী
অনুরাধার, পুঞ্জিত রহস্য রাশি
রাধার নেই সাধারণ কাণ্ডজ্ঞান
অনুরাধার জ্ঞান পণ্ডিত প্রমাণ
রাধা সেকেলে, বড় আটপৌরে
অনুরাধা অতি আধুনিকা শহুরে
দুইয়ের সান্নিধ্যে বিস্তর তফাত
রাধার ঘনিষ্ঠতায় অকপট সাথ
অনুরাধা বিরাজে যোজন দূরে
আমি মরি মিছেই পিছনে ঘুরে

অনেক ভেবে চিন্তে যা বুঝলাম
এক সুলভ, দুই ভাগ্যের নিলাম

তাই,
যদিও আমি রাধাকে ভালবেসেছি
তবু, অনুরাধাকে বিবাহে যেচেছি

তবে,
যদি আমায় বিচ্ছেদ দেয় অনুরাধা
বাঁশির ডাকে ছুটে আসবেই রাধা
শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষায় আমি উত্তরসূরি
বিবাহ-পণে চেয়েছি একটি বাঁশরি
মোবাইল, সাথে সুরেলা রিংটোন
হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, যখন তখন ||


-------------------------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ১১ অগাস্ট ২০১৪

বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০১৪

গোলাপজল

|| গোলাপজল ||


দেখেছ কি একটি ছোট গোলাপের কুঁড়ি
জলে ভেসে যেতে, সবার অগোচরে
নির্লোভ স্রোতে নিষ্পাপ একটি গোলাপ
উচ্ছল, শীতল সমীরের সোহাগে আদরে

জানতে চেয়েছ কি, কে ভাসিয়েছে
কার উদ্দেশ্যে, কী তাদের অভিমান
কেনই বা গোলাপ, তাও একটি মাত্র
নিশ্চয় অভ্যাসে করেছ কিছু অনুমান

ভেবেছ, যে ভাসিয়েছে সে জানে না
তাকে, যে পাবে, যে চেনে না তাকে
যে ভাসিয়েছে ... সেই মানব ও মানবী
হারিয়ে গিয়েছে কি কল্পনার জটিল পাকে

না জেনে কে কী আশা রাখে ঐ গোলাপে
তোমার অবতারণা কি শুধু এইটুকু নিয়ে
না কি রচেছ রোমাঞ্চকর কোন রূপকথা
ভিত্তিহীন কল্পনায়, কামনার রঙে রাঙিয়ে

ভেবো না এত সব; শুধু চেয়ে দেখ
কত আদরে বুকে ভাসিয়ে গোলাপ
নিয়ে চলেছে স্রোতস্বিনী চাপা উল্লাসে,
আরও দেখ কত নিবিড় নির্ভরতায়
দোদুল গোলাপ চলেছে আহ্লাদী রাসে

ওদের এই পরিপূর্ণ সান্নিধ্য দেখে কি
মনে হয় ওরা এক দূত, অপর বার্তা
প্রেষক হতে প্রেষিতার কাছে প্রেরিত
সুপ্ত বাসনার অভিলাষ গোপনীয়তায়
নিবারিত এক সাড়ে-চুয়াত্তর পত্র

আমি বলি – না |  যাও, চোখ ধুয়ে নাও
বয়ে যাওয়া ঐ গোলাপ নিষিক্ত জলে
যদি পাও তাতে গোলাপি সুগন্ধের রেশ
তবে জেনো, কিছুই যায় আসে না
কারো কাউকে পাঠানো গোলাপ হারানোয়
যখন সেই গোলাপ ভেসে সময়ের ধারায়
কোরক হতে প্রস্ফুটিত হয়, পাপড়ি মেলে
নিজের নির্যাস বিলিয়ে, নিজেকে হারায় ||


------------------------------------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ০৫ অগাস্ট ২০১৪

রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৪

কালো পরী

|| কালো পরী ||


বাতিঘরের আশেপাশে ঘুরে বেড়ায় একা এক ভবঘুরে
হাতে নিয়ে এক কলসি | কী যে চায় ওতে নিতে ভরে
দিনের সূর্য উঠলেই সে চমকে উঠে করে শাপ-শাপান্ত
সারা দিন চেয়ে আকাশের পানে, বকে বকে হয় ক্লান্ত

ঠিকরে পড়া রোদের ছটায় ধাঁধিয়ে ঝলসে যায় দু’চোখ
তবুও লোকটার গোঁ নামে না, চেপে ওঠে রগচটা রোখ
অস্ত যখন যায় সূর্য, তখন তার চোখে আসে জল ভরে
কলসিটা বুকে চেপে কত হাসি হাসে আহ্লাদে আবদারে

বাতিঘরে জ্বলে উঠলেই বাতি, ছুটে যায় সে সাগর জলে
স্নান করে ধুয়ে নিতে চায় দিনের উত্তাপ চোখের কোলে
তারপর দুহাতে ধরে কলসি, বসে আগলায় ঐ বাতির তল
যেখানে শুভ্র আলোর অভ্র স্ফুলিঙ্গ ছিটিয়ে পড়ে অনর্গল

সারা রাত বসেও জানে না সে কেটে গেল কোন প্রহরটা
শুধু কলসি ভরে নিতে চায় ওই আলোর যত ছিটেফোঁটা
বোঝে না সে জরাজীর্ণ মাটির কলসিটায় আছে শত ছিদ্র
তাই সে কলসি ভরে আলো ধরে, রয়ে রাতভোর বিনিদ্র

কেউ জানে না, লোকটা রোজই দেখে রাত্রির কালো পরী
আলোর ফোয়ারায় স্নান করে ভোরে জাগে বড় মনোহারী
লোকটা তাই তো  ভাবে প্রিয় অন্ধ কাজলা মেয়েটির কথা
চোখের অদেখা কালো রং নিয়ে নেই যার কোন মাথাব্যথা

ভেবেছে লোকটা, ঐ আলো ধরে দেবে মেয়েটিকে নাইয়ে
রংটা না হোক না ফর্সা, নয়নের দৃষ্টি যদি তাই দেয় ফিরিয়ে
তখন কাজলা প্রশ্ন করে করুক, “আমি কেন এত কালো ?”
বলবে সে হেসে, “হবে না রে আর, এর চে’ ভাগ্যি ভালো”

 “আমার ভরসায় থাকিস নে মেয়ে, দরকার তোর ভাগীদার
যা তুই হয়ে জলকন্যা, সমুদ্রে পেতে নিতে তোর সংসার”
কাজলা চোখে চেয়ে যদি বলে মেয়েটি, হয়ে চপল, মুখরা
“ধরো সমুদ্রের সাথী না মানে, চায়, হোক মোর রঙ গোরা ?”

লোকটা ভেবে চিন্তে দেয় উত্তর ; বলে, সামলাতে আস্কারা
“ফিরে আয় না, তোকে দেখিয়ে দেব এক আলোর ফোয়ারা
দেখবি জ্বলে বাতিঘরে, জাহাজকে পথ দেখানোর এক বাতি
আঁধার-কালো রঙ ধুয়ে করে ফর্সা, সে আলোয় নেয়ে রাতি”
...

(গল্পটা এখানেই শেষ হত, কিন্তু ...)
ভয় একটাই, আলোয় নেয়ে, মেয়েটিও যদি হয়ে যায় রাত্রি
সমুদ্রের সে ও ভবঘুরেটা হন্যে হয়ে খুঁজবে কি একই পাত্রী ||


-------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ৩ অগাস্ট ২০১৪