বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৬

অস্তিত্ব

|| অস্তিত্ব ||


একদিকে সাতনা, অন্যদিকে মতিসুর, মাঝখানে হীরাপুর | হাইওয়ের দুপাশে শালের জঙ্গলে ঢাকা চড়াই উতরাই | জমি পাথুরে, তার নিচে নাকি অঙ্গার আছে | তাই ছোট ছোট জনবসতি, যেখানে সবাই গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকে, আবার তাদের মাঝে এক দু মাইল শুধু শালের জঙ্গল, কোথাও ঘন, কোথাও পাতলা | কোথাও শাল নেই, শুধু এখানে ওখানে কিছু কুব্জ পলাশের গাছ |

নিঃসন্তান তারাবাবু হীরাপুরে এসেছিলেন শিক্ষকতা থেকে স্বেচ্ছা-অবসর নিয়ে স্ত্রী মায়া কে নিয়ে | হীরাপুরে কিছুই নেই | দেখে বলা মুশকিল লোকের জীবিকা কী | তবুও অনেক মধ্যবিত্তের বাস – অশিক্ষিত কি অর্ধ-শিক্ষিত স্রেফ শান্তশিষ্ট ভালোমানুষ | তাঁর দূর সম্পর্কের ভাইপো দীপক বাস ট্রাকের মেকানিকের কাজ করে | বলেছিল, “জেঠু আমার কাছে এসে থাকো | আমি তোমাদের দেখব | বদলে, দু মুঠো বাড়ির ভাত খেতে দিও |” কথাটা মন্দ বলেনি ছেলেটা | মায়া এসে সংসার গুছিয়ে নিয়েছিলেন |

দীপকের গ্যারেজ বলতে হাইওয়ে থেকে হীরাপুরে ঢোকার রাস্তার ধারে একটা ছোট ন্যাড়া মাঠের মুখে সুরকি দিয়ে গাঁথা ইটের বাড়ি | মালিক সাতনায় থাকে | বাড়িটার নিচে গোটা দুয়েক ঘর ভর্তি যত হাবিজাবি সারাইয়ের যন্ত্রপাতি আর পার্টস | আর একটা ঘরে একপাশে একটা কেরোসিনে চলা কম্প্রেসর, বাকি ঘর ভর্তি পুরানো টায়ার টিউব | হীরাপুরে কারো মোটরগাড়ি নেই | শুধু হাইওয়ে দিয়ে যে সব বাস, ট্রাক যায় তারা আসে দীপকের কাছে ভাঙ্গা গাড়ি নিয়ে | গাড়ি দাঁড় করিয়ে খাটিয়া পেতে ড্রাইভার, কন্ডাক্টর, হেল্পর শুয়ে, বসে পড়ে, গরম কালে মাঠের কোনে শিরিষ গাছের ছাওয়ায়, আর শীতকালে ঠায় রোদে | দীপক একমনে সারাই করে |

উপর তলায় টিনের চালের নিচে একটা শোয়ার ঘর, আর একটা ঘর একই সাথে রান্নাঘর আর ভাঁড়ার | বাইরে স্নানঘর, যার মাথায় চাল নেই | ওঠা নামার খোলা সিঁড়ি বাড়ির বাইরের গায়ের দেয়ালে | তারাবাবু এসে উঠলে দীপক নিচে কম্প্রেসরের ঘরে খাটিয়া পেতে নিজের শোয়ার ব্যবস্থা করে নিলো | উপরে তারাবাবু আর মায়া সংসার গুছিয়ে নিলেন | ক’মাসেই সব সেট হয়ে গেল | এমনকি চারিদিকের রুক্ষ প্রকৃতিও তারাবাবুর ভালো লেগে গেল |

সামনের রাস্তা বেয়ে একটু এগোলেই রাস্তাটা উতরাই দিয়ে নেমে হাইওয়েতে পড়েছে যেখানে বাস দাঁড়ায় | সেখানে একটা দেয়াল খসে পড়া ছাতের ছাউনি – কোনও কালে জিলা পরিষদের দয়ায় নির্মাণ করা  – বর্ষা বাদলে লোকে দাঁড়ায়, গরিব লোকে মেঝেতে উবু হয়ে বসে | একপাশে একটা ঝুপড়িতে মধুর চায়ের দোকান | আর এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে কয়েকটা পরিত্যক্ত বাস ট্রাকের কাঠামো | দেখে বোঝার উপায় নেই কবে কে ফেলে গিয়েছিল ওগুলো | সকাল সকাল জায়গাটা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে | তারাবাবু সকাল নটা নাগাদ একবার হাঁটতে হাঁটতে আসেন | মধু একটা ছোট নড়বড়ে বেঞ্চ পাতে | মধুর মেয়ে গুঙ্গি এসে চা বিস্কুট দিয়ে যায় | চা খেতে খেতে তারাবাবু দূরে চেয়ে থাকেন | দেখেন পিছনে বাড়ির দিকের চড়াই থেকে শাল গাছের গুঁড়ির ফাঁকে ফাঁকে হাওয়া হনহন করে নেমে এসে হাইওয়ে লাফিয়ে পার হয়ে ওপারের উতরাইতে শালগাছের মাথায় কেমন ঝাঁপিয়ে পড়ছে | কখনও হয় যেন কেউ মস্ত বালতিতে হাওয়ার দলবল তুলে ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলছে গাছগুলোর মাথায় | সেই ঝোড়ো যুদ্ধে ঋজু শাল গাছের মাথা ঈষৎ নুয়ে আবার সোজা হওয়া দেখতে দেখতে তারাবাবুর বুকটা একটা উত্তেজনায় ভরে ওঠে | মনে হয় এখনও কী একটা করা বাঁকি আছে | কী সেটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে এক অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন | ততক্ষণে কাগজ এসেছে | শোয়ার ঘরটার জানালা খুলে দিলেই ঢুকে পড়ে দামাল বাতাস | দূর থেকে ভেসে আসে আছড়ানো সমুদ্রের শব্দের মত বাস, ট্রাকের যাওয়া আসার আওয়াজের লহর – শুনতে শুনতে তারাবাবু সম্মোহিত হয়ে পড়েন | তারপর কেমন ভাবে আস্তে আস্তে বুকের ভিতরে সেই অনুভূতি নেতিয়ে পড়ে, হাতের কব্জিতে ধমনী শ্লথ হয়ে যায় | যেই দুপর গড়িয়ে বিকেল নামে, যেমন যেমন শাল গাছের গা থেকে রোদটা কেউ চেঁছে নিয়ে যায়, প্রখর গ্রীষ্মের বাতাসও নম্র শীতল হয়ে আসে – না দেখেও তিনি টের পান মধু চায়ের দোকানের ঝাঁপ ফেলে দেয় | উনুনটা পিছনে নিয়ে গিয়ে রাত্রির ভাত বসায় | বাড়ির জানালা থেকে শুধু তার ধুঁয়া দেখা যায় | গুঙ্গি বাসন কোসন নিয়ে যায়, টিপকলে ধুয়ে আনতে | তারাবাবু সে সব কিছুই দেখতে পান না | শুধু হয়ত শুনতে পান, অস্পষ্ট টিপকলের শব্দ, বাসনের ঠোকাঠুকির শব্দ | আর, দেখেন হাওয়ায় এলোমেলো হয়ে উবে যাওয়া মধুর উনুনের ধুঁয়া | তখন যেই জানালার শার্সিতে একটা ঝিলিক দিয়ে সূর্য ডুবে যায়, দপ করে তারাবাবুর বুকে কী যেন নিভে যায় | যে শক্তির উৎস সকালে জেগে উঠেছিল বুকে, তা আবার হারিয়ে যায় |

তাই তারাবাবু অসুখী | আর একটা বড় অসুবিধা, কথা বলার লোক নেই, এক পোস্টঅফিসের ফণী মাহাতো ছাড়া – সেও শুধু যেদিন তারাবাবু পোস্টঅফিসে যান মাস খরচ তুলতে | তিরিশ বছর প্রাথমিক স্কুলে মাস্টারি করে তারাবাবু জেনেছেন মাস্টার মাত্রেই একা মানুষ, তা সে যত লোক থাক না কেন আশেপাশে | তবু মাঝে মাঝে এই নব আবিষ্কৃত অস্তিত্বটা তাঁকে বিচলিত করে | কে সে ? কী চায় ? এক এক সময় মনে হয় মায়াকে বলবেন এই নতুন অস্তিত্বটার কথা | কিন্তু, বলা হয়ে ওঠে না | আর কী যে হয়েছে ... মায়াও কি কোনও জন্মে দীপকের মা ছিলেন – যে হারিয়ে পাওয়া ছেলে পেয়ে সব ভুলে গেছেন ? সারাদিন রান্না করে, বাড়ির উপর নিচ এক করে, দীপকের দেখা শোনা করে রাত্রির খাওয়া শেষ হলেই মায়া শুয়ে পড়েন | অগত্যা তারাবাবুকেও হারিকেনের আলো কমিয়ে শুয়ে পড়তে হয় | শুয়ে অনেকক্ষণ তিনি জানালা দিয়ে হাইওয়ের দিকে তাকিয়ে দেখেন | তারার, কি চাঁদের আলোয় ঢাল জমিটা হাইওয়ের সিঁথিটার দু’পাশে কালো ভেলভেটের আস্তরণের মত নিথর হয়ে পড়ে থাকে | সেই সিঁথি বেয়ে বাঁকে বাঁকে হারিয়ে যাওয়া গাড়ির হেড-ল্যাম্প জোনাকির মত জ্বলে, নেভে, যায়, আসে | হাওয়াটা আর জানালা দিয়ে ঢোকে না – দিক বদলে উল্টো বয় | তারাবাবু জেগে জেগে দেখেন মায়ার পাশ ফিরে শোয়া শরীরটা নিশ্বাসের সাথে সাথে একটু ওঠা নামা করছে | প্রাণ আছে, কিন্তু কেমন যেন অস্তিত্বহীন | জানালার বাইরে আদিম পৃথিবী তার অস্থিরতা নিয়ে তারাবাবুর অস্তিত্বকে ডাকে | সেই ডাক অগ্রাহ্য করতে করতে ক্লান্ত হয়ে তারাবাবু এক সময় ঘুমিয়ে পড়েন |

একদিন এই ভাবে শুয়ে তাঁর ঘুম আসছে না কিছুতেই | ক’দিন ধরে মায়া তাকে বলছেন, একটা কাজের মেয়ে খুব দরকার | শরীরের ধকল আর সইছে না | তারাবাবু বলেছেন, দেখছি | কিন্তু, কাছাকাছি এমন কোন জনবসতি নেই যেখানে কাজের মেয়ে পাওয়া যাবে | তার উপর মায়া বলেছেন মেয়েটাকে বিকেলের দিকে আসতে হবে | তখন মনে হয়েছে, আচ্ছা মধুকে বললে কেমন হয়, বিকেলে যখন দোকানের ঝাঁপ ফেলে তখন যদি মেয়েটাকে পাঠিয়ে দিতে পারে | শুধু নিচের টিপকল থেকে ক’ বালতি জল তুলে ঘর ঝাঁট দিয়ে মুছে দেবে | এখন মনে হল, নাহ আর দেরী নয় | দিনের বেলা কথাটা মনে থাকে না | আর গুঙ্গিটা বোবা কালা হলেও সব কথা বোঝে | মাঝে মাঝে তাঁর দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে দেখে | মধুকে এখনই ডেকে তুলে জিজ্ঞাসা করে নিই | আজ রাত্রে রাজি না হলে আবার কাল রাত্রে চেষ্টা করে দেখা যাবে ... যতদিন না রাজি হয় চেষ্টা করতে ক্ষতি কী ? ঠিক ! এই রাত্রেই একা মধুকে বোঝানো যাবে তাঁর দরকারটা |

মনস্থির করেই তারাবাবু খাট থেকে উঠে পা টিপে টিপে বেরিয়ে পড়লেন | নিচে নেমে দেখলেন দীপকের ঘর অন্ধকার | একটু আশ্চর্য লাগল | অনেক সময় মাঝরাতেও ব্রেক ডাউনের খবর নিয়ে লোক আসে বলে ছেলেটা হারিকেন জ্বেলে শোয় | পথে বেরিয়ে পড়ে তারাবাবু দ্রুত পায়ে হাঁটা দিলেন | মধুর ঝুপড়ির কাছে এসে দেখলেন তার ঝাঁপ খোলা | খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভাবলেন, ‘তা কী করে হয় ? তাহলে কি অন্য কেউও মধুর সাথে কথা বলতে এসেছে ? মহা মুশকিল ! এখন কী করা যায় ?’ তখনই একটা ট্রাকের হেড-ল্যাম্পের আলোয় দেখলেন ঝুপড়ির ভিতরে কেউ নেই | তাহলে ওরা গেল কোথায় ? আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হল যেন ভোরের বেশি দেরী নেই | এর পর দেরী হয়ে যাবে | বাড়ি ফিরে শুয়ে পড়তে হবে | ঘুম আসবে না | তবু শুয়ে থাকতে হবে যতক্ষণ না মায়া পুজো সেরে ডাকেন |

এমন সময় তিনি একটা গোঙানির আওয়াজ শুনলেন | কেউ আওয়াজ করল – একবার, কয়েকবার – একটু থেকে থেকে | সেই গোঙানি কি কষ্টের, নাকি তৃপ্তির ? বোঝা গেল না | মনে হল আওয়াজটা মধুর ঝুপড়ির পিছনে পড়ে থাকা বাসটার দিক থেকে আসছে | বাসটার পিছনে গিয়ে দেখলেন নিচে কেউ শুয়ে আছে | মনে হল মধু, হাতে কিছু একটা চকচক করছে | ভাঙ্গা বোতল ? নেশা করে পড়ে আছে কি ? কিন্তু এবার বাসটার ভিতর থেকে জড়ানো গলায় আওয়াজ | তারাবাবু ফিরে এসে বাসটার ভিতরে উঁকি দিলেন | প্রথমে ভিতরে জমাট অন্ধকারে কিছু দেখা গেল না | তারপর অন্ধকারটা চোখে সইলে ঠাহর করে দেখলেন দু’ সারি সিটের পাঁজরার মাঝখানে বাসের মেঝেতে কেউ চিত হয়ে পড়ে আছে | ভিতরে উঠে আবছা আলোয় চিনতে অসুবিধে হল না – গুঙ্গি ! কাছে গিয়ে ঝুঁকে বোঝার চেষ্টা করলেন কী ব্যাপার | গায়ে কেন কাপড় নেই ? আর. চোখ বন্ধ, জোর করে চিপে রাখা ঠোঁট দুটো | শুধু শিথিল মুখের ভাবে  যেন কোন পিঞ্জরমুক্ত অনুভূতির আনন্দ | মেঝেতে বসে পড়ে মেয়েটার পিঠের তলায় হাত বিছিয়ে  ওঠানোর চেষ্টা করলেন | হালকা শরীরটা পেলব লতার মত উঠে এলো | এখনও শরীরে উত্তাপ ছড়াচ্ছে | বুকেও যেন থেকে থেকে হালকা নিশ্বাসের হিল্লোল | ওর বুকের উপত্যকায় কান পাততেই গালে কোমল মেদের স্পর্শ তাঁকে আবিষ্ট করে ফেলল | এক মুহূর্তে একটা ধাক্কার মত স্পষ্ট অনুভব করলেন আবার তাঁর সেই অস্তিত্বটা জেগে উঠছে | এও বুঝলেন, এই অস্তিত্ব খুব অধীর – পলে পলে তার ধৈর্য হারাচ্ছে | তাঁর আর মনে পড়ল না, কাকে কী বলতে এসেছিলেন | শুধু মনে হল সেই কষ্ট মেশানো তৃপ্তির শব্দটা আবার শোনার, বারবার শোনার অপেক্ষায় অস্তিত্বটা অধৈর্য হচ্ছে | মেয়েটাকে আস্তে করে মেঝেতে নামিয়ে দিয়ে তার উপরে নিজের শরীরটা এলিয়ে দিলেন | হীরাপুরের জমির নিচে সত্যিই কি অঙ্গার আছে ? না হলে কিসের হলকা বাসের মেঝেয় শোয়া মানুষটার শরীর ভেদ করে উঠে আসছে ?

একটু পরে বাসটার পিছন থেকে আবার গোঙানির শব্দটা উঠে এলো - এখন কিছু নিস্তেজ, কিন্তু নিখাদ কষ্টের | তারাবাবু বুঝলেন তিনি দুটো আলাদা ধরনের শব্দ শুনছেন | দুটিই নিয়ন্ত্রণ হীন |

সকালে উঠে মায়া দেখলেন তারাবাবু নেই | কোথায় গেল মানুষটা ? মুখ ধুয়ে, স্নান করে নিচে এসে দীপককেও দেখতে পেলেন না | মায়া পুজো না করা অব্দি কথা বলেন না – তারাবাবু বা দীপক কিছু বললে ইশারায় উত্তর দেন | শেষে চিন্তিত হয়ে পুজো শেষ না করেই সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে দেখলেন দীপক ছুটে আসছে হাইওয়ের দিকে থেকে | চড়াইয়ে দৌড়ানোর পরিশ্রমে বেশি জোরে ছুটতে পারছে না | হাঁপাতে হাঁপাতে কাছে এসে বলল, “জেঠিমা ! শিগগির চলো |” মায়া শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে ভ্রুকুটি করলেন, অর্থাৎ কী হয়েছে ? দীপক বলল, “একটু আগে আমার চেনা একটা বাসের খালাসী ছুটে এসে আমায় বলল, দীপক, শিগগির আয় | মনে হয় তোর জ্যাঠা পাগল হয়ে গেছে | আমি বললাম, কেন, কী হয়েছে ? ও বলল, তোর জ্যাঠা একটা বালতিতে জল আর কাপড় নিয়ে মধুর ঝুপড়ির পিছনের পুরানো বাসটা মুছছে ... মুছেই যাচ্ছে | আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, জেঠু কী হয়েছে ? ও কিছু উত্তর দিল না | আমরা কিছুতেই ওকে থামাতে পারছি না | কী শক্তি ওর গায়ে ! তুই শিগগির চল ... তো আমি লোকটার সাথে ছুটে গিয়ে দেখি ....”

দীপক একটু ইতস্তত করে বলল, “গিয়ে দেখি প্যাসেঞ্জার সব সাতনার বাস থেকে নেমে ভিড় করেছে | আরও অনেক লোক জড়ো হয়েছে | আর এক কাণ্ড ...  ঝুপড়ির পিছনে মধু পড়ে আছে | কেউ ওর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে | মনে হয় মরে গেছে |”

মায়া পাথর হয়ে যেতে যেতেও মুখ খুললেন, “আর ? আর কি দেখলি ? তোর জেঠু ... ” দীপক বলল, “না ... প্রথমে জেঠুকে দেখতে পাই নি | তো খালাসীটাই বলল জেঠু বাসটার ভিতরে আছে | ভিতরে উঁকি মেরে দেখলাম ...”
- “কী দেখলি ?”
- “দেখলাম জেঠু একটা কাপড় বালতিতে ডুবিয়ে বাসটার মেঝেটা মুছছে |”
- “কাপড় ? গায়ের কাপড় ?”
দীপক মাথা নাড়ল | মায়া বললেন, “মানে, গায়ে কাপড় নেই ? তাই দিয়েই মুছছে কি ?” দীপক আবার মাথা নাড়ল | তারপর মায়ার হাত খপ করে ধরে বলল, “জেঠিমা শিগগির চল | জেঠু তোমার কথা ঠিক শুনবে |”

মায়া দীপকের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে বললেন, “ক’দিন ধরেই মনে হচ্ছিল মানুষটার গা এত গরম কেন, চোখদুটোও সব সময় লাল ... আর রাত্রে ঘুমায় না ... বুঝেছিলাম ঠিক কিছু একটা হবে |” তারপর একটু চুপ করে থেকে বললেন, “কিন্তু, তুই ঠিক দেখেছিস তোর জেঠু পরনের কাপড় দিয়ে মুছছিল না ?”
দীপক বলল, “মোছার কাপড়টা তো দেখলাম ... লাল রঙের ... তাতে একটা ফিতে ছিল ... সায়া হবে ... গুঙ্গির |”
মায়া চমকে উঠে জিজ্ঞাসা করলেন, “কী ? তুই ... তুই কী করে চিনলি ?”
দীপক মরিয়া হয়ে বলল, “না, মানে. আর কার হবে ? জেঠিমা, তুমি চলো না ... আমি সব বলব ... কথা দিচ্ছি, আমি সব বলব |”


-----------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ২৭ জানুয়ারী ২০১৬

কোন মন্তব্য নেই: