বুধবার, ১৫ জুন, ২০১৬

নিশানা

|| নিশানা ||


সোমেন বাবু বললেন, প্রেমের গল্প শুনবেন ? বিয়োগান্ত ?

আমি উত্তর না দিয়ে একটু নড়েচড়ে সজাগ হয়ে বসলাম | সোমেন বাবু বললেন,

আমি তখন পাশ করে কাজের জন্য হন্যে হয়ে আছি | বৌদির কাছে হাত পেতে চা, সিগারেট খাই | পাড়ায় হরির দোকানে বসে চা খেতে খেতে আড্ডা দিই | চা শেষ হয়ে এলেও শেষ বিন্দুটা খুরিতে লেগে আছে কল্পনা করে মুখ উঁচু করে খুরিটা কাত করে ঝাঁকাই | পকেটে দেশলাই বাক্সে কাঠির বদলে আধ খাওয়া সিগারেট থাকে | অনেক বন্ধু চাকরি পেয়ে চুটিয়ে প্রেম করছে, আমার কেউ নেই | তাই মন ভালো থাকে না |

একদিন পাড়ার রাস্তা দিয়ে সকাল সকাল যাচ্ছি, দেখি একটা কাগজ বিলি করা চ্যাংড়া মার্কা ছেলে প্রাণপণ চেষ্টা করছে তেতালায় একটা কাগজ ছুঁড়ে ফেলার | বারবার সেটা নিচে পড়ে যাচ্ছে | উপরে তাকিয়ে দেখলাম তেতলায় ব্যালকনিতে একটা অল্প বয়সী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে | আমি তাকাতেই মেয়েটা সরে গেল | আমার কী মনে হল, বললাম, “দাও তো ভাই দেখি, আমি একবার চেষ্টা করি |” ছেলেটা একবার উপরে তাকিয়ে অনিচ্ছুক ভাবে আমাকে কাগজটা দিল | আমি নিজেও কয়েকবার চেষ্টা করে পারলাম না | ছেলেটা বিরক্ত হয়ে বলল, “আপনার দ্বারাও প্রেম করা হবে না | মাঝখান থেকে আমার কাগজটা চোট খেল |” আমি অবাক হয়ে বললাম, “মানে ?” ছেলেটা বলল, “মানে আর আপনাকে বুঝতে হবে না | দিন কাগজটা | যাই আমি উপরে গিয়ে দিয়ে আসি |” আমার হটাত রাগ হয়ে গেল | আমি বৌদির কাছে থেকে নেয়া টাকাটা পকেট থেকে বের করে বললাম, “এই নাও কাগজের দাম |” ও কিছুতেই নেবে না | তখন ওর পকেটে জোর করে টাকাটা গুঁজে দিয়ে আমি হনহন করে হরির দোকানের দিকে পা বাড়ালাম | ছেলেটা পিছন থেকে এসে আমার হাত ধরে টেনে বললে, “দাদা, ভুল হয়ে গেছে | আর বলব না | কাগজটা ফেরত দিন |” আমি ওকে এক বকুনি দিলাম | ছেলেটা কাঁচুমাচু মুখ করে চাপা গলায় একটা বিরক্তিকর গালাগাল দিয়ে চলে গেল |

হরিকে পকেটে পয়সা নেই বলে চা চেয়ে কাগজটার হেডলাইনে চোখ বুলিয়ে খেলার পাতায় যাব বলে খুলতেই কাগজটার ভিতর থেকে একটা হ্যান্ডবিল বেরল | নির্ভুল ভাবে আধ-ভাঁজ করা দেখে অবাক হলাম – হ্যান্ডবিল তো খোলা রাখা হয় | এটা এমন ভাঁজ করা কেন ? ভাঁজটা খুলে দেখি আঁকাবাঁকা হাতের লেখায় কোনও এক মিলিকে কিছু আবোলতাবোল আবেগের কথা লেখা | তারই মধ্যে লেখা –

আমি যখন তোমাদের বারান্দায় কাগজ ফেলি, তুমি যদি বারান্দায় এসে দাঁড়াও তাহলে দেখবে আমার হাতের নিশানা ভুল হয় না | আমি এক টিপেই তোমার গায়ে কাগজটা ফেলতে পারি |

মুখের হাসি চেপে হ্যান্ডবিলটা পকেটস্থ করলাম | ফেরার পথে বাড়িটার সামনে এসে দেখি তার একপাশে সিঁড়ি দিয়ে উপরে যাওয়ার দরজায় মেয়েটা দাঁড়িয়ে | হয়ত উপর থেকে আমাকে আসতে দেখেছে | হয়ত আমার জন্য অপেক্ষা করছিল | আমাকে দেখেই আমার হাতের কাগজের দিকে তাকালো | আমি বোধহয় একটু ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি হেসেছিলাম | তাই দেখে মেয়েটা চোখ নামালো |

আমি বাড়ি ফিরে বৌদিকে ঘটনাটা বললাম | বৌদি, দেখি কাগজটা, বলে আমার হাত থেকে কাগজটা নিয়ে একবার চোখ বুলিয়েই ব্লাউজের মধ্যে কাগজটা সোজা চালান করে দিল | হাতাহাতি করার সুযোগ পেলাম না |

বিকেলে আমাকে চা দিতে এসে বৌদি বলল, “তোমার কাগজটা আমি মিলিকে দিয়ে এসেছি, দুপুরে |” আমি বললাম, “মিলি ?” বৌদি বলল, “আহা ! ন্যাকা  সাজা হচ্ছে ?... জানো, মিলি কাগজটা পড়ে বলল, তোমার দেওরের হাতের নিশানাও এমন কিছু ভালো নয় |” 


---------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ১৫ জুন ২০১৬

কোন মন্তব্য নেই: