বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৩

অশ্বান্ড কান্ড


জীবন যুদ্ধে পরাস্ত, সংসার রোগে আক্রান্ত বাঙ্গালীর ঘরে ঘরে যে কতিপয় কথা ঘন ঘন শোনা যায়, পরিসংখ্যান অনুযায়ী তাহাতে প্রথম ইষ্টদেবতার নাম, দ্বিতীয় ‘ধুর ছাই’ ও তৃতীয় হইল ‘ঘোড়ার ডিম’ |

শৈশব হইতে শুনিতে অভ্যস্ত, কোনও দিন ইহার গভীরে যাই নাই যে ‘ঘোড়ার ডিম’ প্রকৃত কি বস্তু | আমাদের যুগে ছিল কৌতুক বেশী কৌতূহল কম, কিন্তু বর্তমান যুগের ধারা যে বিপরীত | আমার সংযমহীন কথাবার্তার ফল হইল এই যে একদিন শ্রীমতী আসিয়া কহিলেন, “তোমার সেয়ানা ছোট-ছেলে ঘোড়ার ডিম খেতে চায়” | বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করিয়া পাল্টা প্রশ্ন করিলাম, “হাফ-বয়েল না মামলেট না ঝোল?” তিনি কহিলেন, “ইয়ার্কি ছাড়, ছেলেকে সামলাও তুমি” | আমি প্রসঙ্গ বদল করিতে প্রয়াস করিলাম, “আচ্ছা আমি ওকে বলে দেব ঘোড়ার ডাক্তার হতে | বিনে পয়সায় যত চায় ঘোড়ার ডিম - পাবে আর প্রাণ ভরে খাবে” | স্ত্রী হুঙ্কার সহ বিদ্রূপ করিলেন, “তুমি পারলে না ফোঁড়ার ডাক্তার হতে, আর ছেলে হবে কিনা ঘোড়ার ডাক্তার !” এই খোঁটার কারণ বহুকাল যাবত তিনি ‘বাতের ওপর বিষ ফোঁড়া’ হইতে ভুগিতেছেন | কোনও প্রলেপ কাজ করেনা | আমার প্রেমের উষ্ণ-আর্দ্র প্রলাপেও তাহার কোনও উপশম হয় নাই | ইদানীং আফিমের আশ্রয় লইয়াছেন |

অগত্যা ঘোড়ার ডিম সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করা সমীচীন বোধ করিলাম | কিন্তু দেখা গেল যে বিষয়টি প্রশ্ন-সার -

কি করে যে লোকে চেনে, কি অশ্বডিম্ব,
ছাপার জগতে যার নেই কোনও বিম্ব ?
বিজ্ঞাপন খুঁজে খুঁজে হলাম যে হিমসিম,
কোথায় কি ভাবে পাব আস্ত ঘোড়ার ডিম ?
গোল নাকি লম্বা, নাকি সেটা চৌকস ?
কততে ডজন দেয়, ক’ টাকায় ওয়ান বক্স ?
হাতে গুনে বিক্রি, নাকি দাঁড়িপাল্লায় ?
ঝুড়ি ভরে আনে, নাকি রাখে ডিম গামলায় ?
কখনই বা বেচে, কোন দিন, ক্ষণ, বেলাতে ?
দিনের বাজারে, নাকি নিশুতি বে-রাতে ?

“ঠিক হ্যাঁয়, কোই বাত নেহি” এই ভাবে হিন্দিতে নিজেকে আশ্বস্ত করিয়া বাজারে রওয়ানা হইলাম |

কিন্তু সে সফর বৃথায় গেল | কেহ কহিল কোলকাতায় যান - বাঘের চর্বি, শুয়ারের দাঁত, সাপের চামড়া সবই পাইবেন | কেহ কহিল আস্তাবলে খোঁজ নিতে | শেষে প্রশ্নটি ডিম্ব-জড়িত বুঝিয়া ব্যাঙের ছাতা বিক্রেতা উপদেশ দিল ডিম ওয়ালী কে জিজ্ঞাসা করিতে | ডিম ওয়ালী সামনে ডিম পাড়িয়া বসিয়া আছে, এবং তাহার পিছনে বাঁধা এক মুরগী ক্ষুব্ধ-স্বরে জানাইতেছে যে  ডিম গুলি আসলে তাহার কৃত ফল | সে (মহিলা, মুরগী নহে) দুঃখিত স্বরে কহিল, “বাবা মুরগীর দানা যোগাতে পারিনা, ঘোড়ার খোরাক কোথা থেকে যোগাবো ?”

ফিরিলাম ভাবিতে ভাবিতে –
কে কেনে, কে ব্যাচে, কে দ্যায় সাপ্লাই ?
এই সব প্রশ্নের কোথা পাই রিপ্লাই ?

ফিরিবার পথে পাড়ার মুখে দর্পণ বাবুর সাথে দেখা | তিনি যথারীতি নখ খুঁটিতে খুঁটিতে হাসিলেন, এবং শুধাইলেন, “কি খবর? বাজার থেকে, ব্যাজার মুখে, হাতে থলি, খালি খালি | বলি ব্যাপারটা কি ?”

ভদ্রলোকের পরিচয় -
বাবুর নাম দর্পণ, নখের বড় শৌখিন
বড় বড় নখ তার, নানান রঙে রঙ্গিন   
জীবন উৎসর্গিত তার অজ্ঞানতা বর্জনে
দুনিয়ার সব জ্ঞান তিনি রাখেন নখদর্পণে

তাঁহারএক এক রঙের নখে এক এক বিষয়ের জ্ঞান | সাদা – অর্থ ও ধন-সম্পদ; হলুদ – রন্ধনপ্রণালী ও কুশলতা; সবুজ – গ্রাম্য জীবন ও কৃষি পদ্ধতি ; গোলাপি – প্রেম ও বিরহ ; লাল – বিবাহ, প্রজনন ও সংসার পালন ; নীল – ভৌতিক, রাসায়নিক ইত্যাদি বিজ্ঞান ; মেটে - জীব বিজ্ঞান ; কালো – মৃত্যু, নরক ও পরকাল, ইত্যাদি, ইত্যাদি | ইদানীং তাঁহার পায়ের নখেও ও রং ধরিতে শুরু হইয়াছে, যেমন যেমন জ্ঞান জগতে বিস্তার হইতেছে তেমন তেমন তিনি নিজেকে প্রস্তুত করিতেছেন |

বিপদে দর্পণ বাবুর শরণাপন্ন হয়নাই এমন ব্যক্তি বিরল – অন্তত আমাদের পাড়ায় | তাহাকে সংক্ষেপে আমার সমস্যা অবগত করাইলাম | তিনি আমার কথা শোনেন আর বিস্মিত মুখে মেটে রঙের নখ খুঁটিতে খুঁটিয়ে মাথা নাড়েন - কিন্তু মুখে কোনও কথা নাই | তাঁহার মৌনতায় সন্দেহ জাগে:

প্রশ্ন কি ডিম্বের, নাকি তাহা অশ্বের ?
পরিধি স্থানীয় কি, নাকি তাহা বিশ্বের ?
কি সব জানিলে তবে হবে নিষ্পত্তি,
অশ্বডিম্ব পিছে লুকান যে সত্যি ?

শেষে দর্পণ বাবু বিব্রত মুখে কহিলেন, “বিষয়টা ভাবিয়ে তুলেছে | একটু গবেষণা করা দরকার | কোনভাবে দুটো দিন ম্যানেজ করে এসে দেখা করুন |”

আমার কনিষ্ঠ সন্তান চেহারায় বড় সড় হইলেও দুগ্ধ পানে আসক্ত | তাহার দুগ্ধে সামান্য আফিম দিয়া তাহার মা তাহাকে সামলাইল | ঘোড়ার ডিম লইয়া তাহার যে প্রবল বেগ তাহা দু’দিন শান্ত থাকিল |
তৃতীয় দিন  সকালেই দর্পণ বাবুর বাটিকায় পদার্পণ করিলাম | তিনি হাস্য মুখে সম্বর্ধনা করিলেন | চা পান অন্তে আমাকে পার্শ্ববর্তী তাঁহার অধ্যয়ন কক্ষে লইয়া গেলেন | এক কেদারায় বসাইয়া কহিলেন, “একটা কথা বোঝা গেল যে ঘোড়া ডিম পাড়ে না, বা বলা যায়, ডিম পাড়ার উপযুক্ত নয় |”

আমার বিস্মিত বিমর্ষ মুখ দেখিয়া তিনি আমাকে আশ্বস্ত করিতে চাহিলেন | “এই রকম ভাবার স্বপক্ষে আমার যুক্তি গুলো একে একে দেখুন”, এই কথা কহিয়া সামনে রাখা এক ত্রিপদের ঘোমটা উন্মোচন করিলেন | দেখিলাম তাহাতে বড় বড় সাদা কাগজে তাঁহার হস্তাক্ষরে কি সব কথা লেখা | প্রথম পাতায় লেখা :

প্রধান কথা ডিম পাড়া প্রাণী যেমন মুরগী, হাঁস, ইত্যাদির কিছু জৈবিক বিশিষ্টতা আছে যা ঘোড়ার নেই |


অতঃপর তিনি একে একে দেখাইলেন, পাতার পর পাতায় লেখা:

এক

হাঁস, মুরগীর আছে উঁচানো পেখম, ডিম পাড়তে যাতে ব্যাঘাত না হয় | ঘোড়ার লেজ ঠিক উল্টো, ডিমের রাস্তার মুখ ঢেকে ঝোলে | ঘোড়া যদি ডিম পাড়ে তবে তার লেজে ডিম আটকাবে | সে অবস্থায় ঘোড়া কি করবে ? ঘোড়া কি লেজে-ডিমে হয়ে ছটফট করবে না ?

দুই

এটা তো জানা কথা যে ঘোড়া বসে না, দাঁড়িয়ে জীবন কাটায় | তাহলে সে মাটিতে ডিম পাড়বে কি করে ? দাঁড়িয়ে ডিম পাড়লে তো অত ওপর থেকে পড়ে ফটাস করে সব শেষ হবে |

তিন

ডিমে তা দিতে ঘোড়াকে তো মাটিতে বসতে হবে | সদা দণ্ডায়মান ঘোড়ার পক্ষে সেটা কি করে সম্ভব ?

চার

গরম কালে ডিমের গরম লাগলে হাঁস, মুরগী পেখম দিয়ে ডিম কে হাওয়া করে ঠাণ্ডা করে | ঘোড়া লেজ দিয়ে ডিম সামলাবে কি করে ? তা-খাওয়া ঘোড়ার ডিম তো হাফ-বয়েল হয়ে যাবে |

পাঁচ

ডিম ভেঙ্গে বেরুতে চঞ্চু লাগে |  বাচ্চা ঘোড়া তা পাবে কোথায় ? সে তো দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে স্রেফ |

এই প্রদর্শন শেষ হইলে তিনি কহিলেন, “অর্থাৎ ভেবে দেখুন ঘোড়া কি ডিম দিতে উপযুক্ত ? না | একদম ই নয় |
"এত গেল যুক্তি | এবার তথ্যে আসা যাক | আমি আশে পাশের সব আস্তাবলে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, কেউ কোথাও ডিম্ব-জাত ঘোড়ার বাচ্চা দেখেনি | উপরন্তু সবাই বললে ঘোড়া যা ছটফটে,  তার নালের লাথে আস্তাবলে কোনও ডিম আদৌ আস্ত থাকবে না | সবারই এক কথা - ঘোড়া মাত্রই জঠর-প্রসূত | হাঁ, তবে এ কথা জানা গিয়েছে পাড়ার ভেট্রীনারি ডাক্তার থেকে যে কিছু জন্তু জঠরে-ডিম্ব-প্রসূত হয় – যাকে বলে ওভোভিভিপ্যারস – কিন্তু সেটা মাছদের মাঝে হয় – যেমন হাঙ্গর মাছ | তা ডাক্তার বললেন ঘোড়া মাছ গোত্রের প্রাণী নয় |

“শেষমেশ, ভেবে দেখুন ঘোড়া শুধু কেন, গাধা, খচ্চর কেউই ডিম পাড়ে না | যেমন নেই গাধার ডিম, যেমন নেই খচ্চরের ডিম, তেমনি হয়না ঘোড়ার ডিম |”

যুক্তি তো অকাট্য, তথ্য ও যে সত্যি
বুক থেকে নড়ে যায় বিশ্বাসের ভিত্তি   
কিন্তু থেকেই যায় মূল আমার সমস্যা
ছেলেকে কি বোঝাব? পাই না ভরসা |

আমার মনের কথা অনুমান করিয়া দর্পণ বাবু কহিলেন, “আপনি এক কাজ করুন | কিছুদিন বাজার থেকে এমনি কোনও ডিম কিনে ঘোড়ার ডিম বলে ছেলেকে খাওয়ান | ততদিনে আমি সমস্যার একটা হল বের করছি |”

কিন্তু ছেলে আমার ততই সেয়ানা | ডিম দেখিয়াই সে সন্দেহ প্রকাশ করিল, “বাবা, অত বড় ঘোড়ার এতটুকু ডিম ? ডিম ওয়ালী তোমাকে ঠকিয়েছে |”

দ্বিতীয়া দফায় ডিম ওয়ালী কে অনুরোধ করিলাম, বড় মুরগীর ডিম দিতে | সে তো হাসিয়াই মরে | কহিল, “বড় মুরগীর ডিম, না মুরগীর বড় ডিম ? মুরগী বড় হলেও ডিম তো একই মাপের দেয় |” সে যাত্রা হাঁসের ডিম লইয়া ফিরিলাম, কিন্তু কিঞ্চিত বড় সে ডিমও অধমের ভোগে লাগিল, খোকার পছন্দ হইল না তাহার সাইজ | অন্যদিকে দর্পণ বাবু উপদেশ দিতে কার্পণ্য করেন না | প্রত্যহ তিনি খবর নেন সন্তান সন্তুষ্টি সম্বন্ধে | মাঝে মাঝে এমত আভাস দেন যে তাঁহার গবেষণা অব্যাহত আছে |

একদিন তিনি প্রচুর উত্তেজিত | আমাকে দেখিয়া জোর করমর্দন সহ কহিলেন, “পেয়েছি এক মহা ডিমের সন্ধান | অস্ট্রিচের ডিম, সব থেকে বড় ডিম | সেটা নির্ঘাত ঘোড়ার ডিম বলে চালানো যাবে, আপনার খোকা ধরতে পারবেনা |”

আমার জ্ঞানগম্যি কম | এই দুর্বোধ্য নাম শুনি নাই কখনো | সেকথায় দর্পণ বাবু যারপরনাই বিস্মিত হইলেন, “সে কি ? পক্ষীর রাজা অস্ট্রিচ | আপনি তার নাম শোনেন নি ?”

আমি কহিলাম, “আমি তো এক পক্ষীরাজ জানি, যে হয় উড়ন্ত ঘোড়া, যদিও এটা জানিনা ঘোড়া ওড়ে কিনা, এবং কি করে |”
দর্পণ বাবুর আমার কথা লুফিয়া লইয়া কহিলেন, “সেটাও দেখে নেব আমার গবেষণার মাঝে |”

কিছুদিন পর দর্পণ বাবু ডাকিয়া পাঠাইলেন | ভয়ঙ্কর উত্তেজিত তিনি | উচ্ছ্বাস ভরা কণ্ঠে কহিলেন, “পেয়েছি, পেয়েছি | সব রহস্য পরিষ্কার এবার | “ তারপর আমাকে বসাইয়া দ্রুতপদে পায়চারী করিতে লাগিলেন | মনে হইল তিনি চিন্তাধারা কে পঙক্তি-বদ্ধ করিতে ব্যস্ত | কিছুক্ষণ বাদে কহিলেন, “মনে আছে আপনি সেদিন পক্ষীরাজের কথা বললেন ? “

আমি কহিলাম, “আছে |”

তিনি আমার পিঠ চাপড়াইয়া কহিলেন, “ধারণা করতে পারেন কি ওই এক কথায় আমি এক মস্ত ক্লু পেলাম | সেদিন থেকে মাথায় ঘুরতে লাগলো একসাথে তিন রহস্য | এক - ঘোড়ার সাথে ডিমের কি সম্পর্ক হতে পারে, যদি ঘোড়া ডিমই দিতে অক্ষম ?  দুই – পক্ষীরাজের ওড়ার রাজ কি ? আর তিন – এই দুই রহস্যের মাঝে কোনও যোগাযোগ আছে কিনা ?“

এই সব ভাবছি তখন আমার চাকর নিয়ে এলো সকালের জলখাবার আর বলল, “বাবু, আপনার ডিমটা রেখে যাব কি ঢেকে ?” “আমার ডিম না মুরগীর ডিম, আহাম্মুক ?” জিজ্ঞাসা করব চাকর টাকে, কি অমনি প্রথম রহস্য জলবৎ তরল ! বুঝেছেন ? অশ্বডিম্ব তস্য ডিম্ব নয়, তস্য ভোজ্য !! অর্থাৎ ‘ঘোড়ার ডিম’ মানে, যে ডিম ঘোড়া খায় | সে সম্ভাবনা আমি যে একবারও ভেবে দেখিনি, মাথায়ই আসেনি |

“তৎক্ষণাৎ প্রশ্ন জাগল মনে, ঘোড়া যদি ডিম খায় তাহলে তার কি হবে ? পেটে সইবে কি ? নাকি তার প্রভাবে  ঘোড়ার মধ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া হতে পারে ? ভাবুন দেখি মাথা খাটিয়ে |”

আমি হতাশ ভাবে মাথা নাড়িলাম | এ মাথা নড়ে মাত্র, খাটে না | খাটে শয়ন করিলে নড়েও না |

উত্তেজিত দর্পণ বাবু কহিলেন সফলতার উল্লাসে, “অবিলম্বে আমি করলাম থট-এক্সপেরিমেন্ট – অর্থাৎ চিন্তন-প্রয়োগ | অমনি দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে পেলাম পরিণতি – ঘোড়া ডিম খেলে ঘোড়ার ডানা গজাবে পাখির মতো – আর ঘোড়া উড়বে, উড়ে বেড়াবে | ঘোড়া ঘোড়া থেকে পক্ষীরাজ হয়ে যাবে |
“হ্যাঁ ... অতএব, একেবারে সাবধান | ছেলেকে ঘোড়ার কেন, কোনও ডিমই খাওয়ানো চলবে না |  এ ব্যাপারে অসতর্ক হলে, ছেলেকে ডিম খাওয়ালে, নিশ্চিত জানুন যে ছেলের ও ডানা গজাবে |”

ভগ্নহৃদয়ে বাড়ি ফিরিলাম |

গৃহিণী সব কথা শুনিয়া কহিলেন, “ তাহলে বাপু কাজ নেই | তুমি ঘোড়ার ডিম খোঁজা বন্ধ কর |“
আমি শুধাইলাম, “ছেলে কি মানবে ?”
গিন্নি কহিলেন, “ সে চিন্তা আমার | দুধ দিচ্ছি আফিম দিয়ে, ছেলে দিব্বি খাচ্ছে | খেয়ে ভোঁসভোঁস করে ঘুমাচ্ছে | কি জানি, মুখে তো কিছু বলেনা, হয়ত স্বপ্নেই ঘোড়ার ডিম খাচ্ছে |”
...

সারাংশ:-

ছোট এক খামারেতে ছিল শিশু ঘোড়া
ছুটতে তো জানতো সে, জানত না ওড়া
সবুজ ঘাসের শেষে, দেখে নীলাকাশ
লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে তার মিটত না আশ
হওয়ায় পাখির দল উড়ে যেতে দেখে
ভাবত কি করে ওরা উড়তে বা শেখে

ক্রমে শিশু ঘোড়া হল এতই হতাশ
কেঁদে কেটে একসা, যায় যায় শ্বাস
চাষা গিয়ে ভড়কে, ডাকে ডাক্তার
ডাক্তার এসে, দেখে, দ্যায় মত তার
শিশু ঘোড়া দুর্বল, না খেয়ে পাতা, ঘাস
দেহ খানা জিরজিরে, হাড়ে নেই মাস
ঘোড়ার হয়েছে জেদ উড়তে সে চায়
শিশুকে বাঁচাতে হলে করো কিছু ব্যয়
দুধ খাওয়াও তাকে মিশিয়ে আফিম
সেই সাথে দাও জোড়া মুরগীর ডিম
ডিম খেয়ে জোর হবে, ছুটবে আবার
আফিমের নেশায় হবে বাকি কারবার
ভাববে সে, “ছুটছি না, উড়ছি আকাশে
মাটির উপরে নই, ভাসছি বাতাসে”

ওষুধে তো কাজ হল, বাঁচল ঘোড়া
কিন্তু চাষার  ছিল কপালটাই পোড়া
ডিম খেয়ে খেয়ে দুটো ডানা গজাল
অন্তে সে পক্ষীরাজ হয়ে, উড়ে পালাল
---

তাই বলি –

যদি, প্রিয় পুত্র খেতে চায় ঘোড়ার-ডিম
দেবে কি দেবেনা ভেবে হইও না মলিন
কপটে আনিয়ে, দিও অস্ট্রিচের আণ্ডা
যতই খাক না ডিম,  উড্ডয়নের ফান্ডা
বাগে পাবেনা ছেলে, এ চালাকির প্যাঁচে |
ছেলে হবে বুদ্ধি-মন্দ, ঠিক বাপের ধাঁচে

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------
ইন্দ্রনীর / ২১ অগাস্ট ২০১৩

1 টি মন্তব্য:

Unknown বলেছেন...

Idea 💡 Arabian horse egg found here. Taste free!