বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৩

লাইভ ঠাকুর

|| লাইভ ঠাকুর ||


আজ দশমী | এবার আমাদের পাড়ার পুজোর থিম ছিল লাইভ ঠাকুর | মোড়ের মিষ্টির দোকানের ময়রা হয়েছিল গণেশ, বলিউডের স্বপ্নে বিভোর ঋত্বিক - কার্তিক, পাড়ার হার্টথ্রব চিনির বোন মিনি - লক্ষ্মী, গণেশের বোন তিন্নি - সরস্বতী, আর কমিটির নন্দীবাবু - মা দুর্গা | কোন বউ রাজী হল না ষষ্টির দিন থেকে কাঁধে চার জোড়া হাত লাগিয়ে দশ-হাতা ব্লাউজ পরে এক ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে | কখন কোন বাচ্চা এসে চেঁচাবে, “মা ! বাবা গেঞ্জি খুঁজে পাচ্ছে না |” ভোটে নন্দীবাবু জিতলেন | তিনি সব চেয়ে বেশি চাঁদা তুলেছেন ; হাতে, পায়ে, বুকে, পেটে কোন লোম নেই ; হাঁচি, কাশি এইসব ব্যাঘাতকারী ব্যামো নেই ; আর চশমা পরেন না | সিংহ, মোষ আর অসুর হতে কেউ রাজী হল না, আর সবাইকে স্থির হয়ে দাঁড়াতে হবে এই বলতেই গণ্ডগোল | গণেশ বলল ওর পায়ে মিষ্টির রস থাকে,  পিঁপড়ে কামড়াবে | কার্তিকের বলল, ওকে রোজ কয়েক ঘণ্টা এক চোখ টেপা অভ্যাস করতে হয় | মিনির রক্ত ‘ও’ গ্রুপের, খুব মশা কামড়ায় | সরস্বতীর খালি পেটে ঢেকুর ওঠে | আর সবাই বলল রাতে ছ’ঘণ্টা ঘুম চাই | ঠাকুরমশাই সব সমস্যা সমাধান করলেন | আলিপুর থেকে সিংহ আর গোয়ালার কাছ থেকে মোষ ভাড়া করা হবে | পাড়ার একজন চাঁদা দেয়নি, তাকে জোর করে অসুর করা হল | রাত বারোটা থেকে ভোর ছ’টা পর্দা টেনে পর্দানশীনম্ সন্ধিপুজো হবে, যাতে সবাই ঘুমতে যেতে পারে | গণেশ ভোরে ফিরবে দোকান থেকে দু হাঁড়ি ছানার জল  নিয়ে | তাতেই পা ধুলে কাজ হবে, আর চরণামৃতও আলাদা করে বানাতে হবে না |  যখন কোনও ছেলে ভক্তি ভরে প্রণাম করবে তখন কার্তিক তাকে চোখ টিপবে | সে নির্ঘাত ভাববে ভুল দেখেছে | মিনির জন্য কচ্ছপ ছাপের কয়েল জ্বালিয়ে আরতির ব্যবস্থা করা হল | সরস্বতী কে বলা হল ঢেকুর চেপে রাখতে, আর যেই কেউ ফটো তুলবে তখন ‘চীয্’ বলার মতো মুখ করে ঢেকুর ছাড়তে | শেষ সমস্যা, বাথরুম যাওয়ার
কী হবে ? ইলেক্ট্রিশিয়ান রিভলভিং বেদী বানাতে রাজি হলে তারও সমাধান হল | খালি বেদীর পিছনে একটু গ্যামাক্সিন ছেটানোর ব্যবস্থা করতে হল |

একটা কথা কেউ ভাবেনি – বিসর্জন হবে কী করে | আজ দশমীর সকালে জানা গেল পাঁচ জনের কেউই সাঁতার জানে না |


--------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ১৪ নভেম্বর ২০১৩

কোন মন্তব্য নেই: