বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৫

আদিম পুজো

|| আদিম পুজো ||


জি-টাউনের ঘাসি ক্লাবের দুর্গা পুজোর কাজে
ম্যারাপ বাঁধা দিন-কয়েকের বিশাল ছাঁদনাতলা
সকাল ভাঙে শঙ্খ, ঢাক আর কাঁসরের আওয়াজে
সন্ধ্যে হলেই ফুলপরীদের চাঁদনী হাটের মেলা

সদলবলে কার্তিক সব মৌজুদ হয় একপাশে
গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, হাতে কোমর বেঁধে,
দেখে পরীরা আসছে ফুলেল এসেন্স আতর বয়ে
রেশম শাড়ি সেফটিপিনে আঁটকে সুডোল কাঁধে

শামিয়ানার খুঁটির গায়ে লাল -হলুদ-নীল বাতি,
বর্ণালী তার, চোখের চাউনি করে দেয় ঘোরালো
তার বাইরেই হাতছানি দেয় নিকষ আদিম রাতি
হ্যাজাক আর পেট্রোম্যাক্সের আলোয় ঝলোমলো

রাত বাড়লে ভিড় কমে যায়, ঝিমিয়ে পড়ে ঢাক
পরীরা সব ঘুম চোখে নিয়ে ফিরে যায় যে যার বাড়ি
শুধু রয়ে যায় দশভুজা মা, আর এক নারী নির্বাক
দুই দুর্গায় অনেক তফাত, অনেক দিনের আড়ি

দশভুজার শ্রীচরণ তলে সিংহ আর মহিষাসুর
দুই পাশ ঘিরে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী
আর এই দুর্গা শান্ত বসে হর্ষে-বিষাদে মেদুর
আপন মনে চায় কি কারো গোপন অঞ্জলি আরতি ?

প্রতি বছর অষ্টমী রাতে চুপিসারে আসে অসুর
নিঃশব্দে বাইরে থামিয়ে গাড়ি নেভায় সব বাতি
প্যান্ডেলের শেষে দাঁড়িয়ে, মুখে সিগারেট জ্বেলে,
কব্জি ধরে চেপে দেখে তার হারছে নাড়ির গতি

বছর কয়েক আগে একবার সে দুর্লভ দুঃসাহসে
একটি রাতের জন্য হয়েছিল প্রেমিক প্রবর অসুর
আলো আঁধারে আদিম রাতে আবেগের অনুপ্রাসে
শুনিয়েছিল এই অবলার কানে প্রেমের আগমনী সুর

সেই অবলাটি কোন অজান্তে হল একদিন নারী
ইচ্ছে হল দেবীর বুক থেকে দেবে অসুরকে নির্বাসন
অসুরও আবার ঘুরে ফিরে কাপুরুষ হয়ে বেচারি
ত্রিশূল ফলায় বুক পাতবার চিন্তা দিল বিসর্জন

এই ভাবেতেই প্রতি বছর ঘাসি ক্লাবের পুজোয়
শুরু করা এক আদিম পুজো আর যে হয় না সারা
দুর্গা, অসুর, কার্তিক আর ফুলপরীদের ভাব দেখে
মেঘের আড়ালে মুখ লুকায় চাঁদ, শিউরায় তারারা ||


----------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ১৫ অক্টোবর ২০১৫

কোন মন্তব্য নেই: