বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১৫

বার্ধক্যের থ্রুপুট

|| বার্ধক্যের থ্রুপুট ||


দ্রুতগতি বার্ধক্যের সাথে সাথে বেনু (বেণী মাধব) বাবুর গতানুগতিক সমস্যাও টপাটপ দেখা দিচ্ছে | উচ্চ রক্তচাপ, মধুমেহ, গেঁটে বাত ... কী নেই বলা মুশকিল | প্রতি ছ’মাসে রক্ত পরীক্ষা | প্রতি মাসে একবার ডাক্তারের মুখদর্শন |

এর মধ্যে ধরা পড়ল, বেনু বাবুর রক্তে প্লেটলেট কমে এক লাখের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে | রুগীর পক্ষে যা চিন্তার বিষয়, ডাক্তারের পক্ষে তা নয় | রিপোর্ট দেখে হরি সাধন ডাক্তার ওষুধ লিখে দিলেন, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স | কেমন ঝুরঝুরে বড়িগুলো, চট করে ভেঙ্গে যায় | বেনু বাবুর ব্যাপারটা মনঃপুত হল না | স্ত্রী কে বললেন, “নিভা, ডাক্তার মনে হচ্ছে ব্যাপারটা তেমন গা করল না | তুমি একটু নেটে দেখো তো |” নিভা (নিভাননী দেবী) কলেজে জীববিজ্ঞান পড়েছিলেন | এখনও চোখে চশমা লাগে নি | ছেলের ফেলে যাওয়া কলেজের কম্প্যুট্যরটা মাঝে মাঝে ঘেঁটে অন্তর্জাল থেকে নানান কাজের তথ্য খুঁজে পান ও বেনু বাবুর উপর তা প্রয়োগ করে তার কার্যকারিতা যাচাই করেন |

দু’দিন পরে বেনু বাবু বললেন, “নিভা, তুমি নেটে কিছু দেখেছ ? আমার কিন্তু ...” বলতে বলতে তিনি থেমে গেলেন | নিভা প্রশ্ন করলেন, “কিন্তু কী ?”
- “না, মানে দু’দিন ধরে সকালে বাথরুম করে দেখছি ...”
- “কী দেখছ ?”
- “হলুদ বাথরুম হচ্ছে |”
- “বলবে তো !”

আবার ডাক্তার হরি সাধন, আবার রক্ত পরীক্ষা | রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বললেন, “হুম, প্লেটলেট তো যা ছিল তাই আছে ... এদিকে বিলিরুবিন একের একটু উপরে দেখছি ... মনে হচ্ছে জন্ডিস হয়েছে | যাক, সবে শুরু, চিন্তার কিছু নেই | ওষুধ লিখে দিচ্ছি |”

ইতিমধ্যে নিভা নেট ঘেঁটে একটি যুতসই জিনিস পেয়েছেন | নেটে বলছে, প্লেটলেট বাড়ানোর একেবারে মোক্ষম পথ্য ! এছাড়াও তার অজস্র গুণ | প্রথমত:, তাতে কী নেই ? লোহা, তামা, দস্তা, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম সব আছে (যদিও শেষের দুটো ঠিক চেনা লাগল না, তবে অধিকন্তু ন দোষায়) | তারপর, পর পর – তাতে যকৃৎ উপকৃত হয় ; রক্তচাপ কমে ; মেদ কমে ; বার্ধক্যের গতি রোধ হয় ; এমন কি, কর্কট (বালাই ষাট !) রোগেরও উপশমে সাহায্য করে |

একটু মুশকিল, তার ভয়ঙ্কর রঙ নিয়ে | খাবারে রঙ নিয়ে বেনু বাবুর রাইট এন্ড রং জ্ঞান অত্যন্ত প্রখর | রান্নায় হলুদ কম খান | মিষ্টি কেনেন তো শুধু সাদা | বাজারের বোঁদে চলে না, বাড়িতে তৈরি হয় বিনে রঙ দিয়ে | কেনা ডালমুটে লাল বোঁদে, সবুজ মটর দেখলে বেছে বেছে ফেলে দেন | যেদিন থেকে শুনেছেন পটল রঙ করে বিক্রি করা হয়, পটল খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন | সবুজ সবজি, সাদা মুলো চলে, কিন্তু কুমড়ো, লাল মুলো কি গাজর না |

অনেক ভেবে নিভা একটা উপায় খুঁজে পেলেন | ওটাকে কুচিয়ে আরও অন্য কিছু মিশিয়ে কড়াইয়ে একটু নেড়ে নরম করে দু-পিস পাউরুটির মধ্যে দিয়ে স্যান্ডউইচ করে দিলে বেনু বাবু খেয়ে নেবেন | রাত্রের খাবার শুকনো হলে ভালো, সাদা পাউরুটি হলে তো কথাই নেই |

ক’দিন পরে বেনু বাবু বললেন, “নিভা, তুমি নেটে কিছু দেখেছ ? আমার তো এখন ...” বলতে বলতে তিনি থেমে গেলেন | নিভা জিজ্ঞাসা করলেন, “এখন আবার কী হল ?”
- “না, মানে আজ সকালেও টয়লেট করলাম | কেমন যেন ...”
- “কেমন ?”
- “একটু কালচে লাল মনে হল |”
- “কালচে লাল ! মানে রক্ত ?”

কিছু না বলে নিভা ডাক্তারকে ফোন করলেন | ডাক্তার শুনে একটু চুপ করে থেকে জিজ্ঞাসা করলেন, “ওর খাওয়া দাওয়া ঠিক আছে তো | কোন অনিয়ম ?” নিভা একটু দ্বিধায় মাথা নাড়লেন, যেটা ডাক্তার দেখতে পেলেন না | তাই জিজ্ঞাসা করলেন, “কিছু খাওয়া দাওয়ার থেকেই গণ্ডগোল হচ্ছে মনে হয় | কাল রাত্রে কী খেয়েছে ?” এবার সতর্ক হয়ে নিভা জানালেন ইদানীং সন্ধ্যায় তিনি প্লেটলেট বাড়ানোর জন্য একটা নতুন পথ্য দিচ্ছেন, অবশ্যই বেনু বাবুকে না জানিয়ে |

“কী ?” ডাক্তারের প্রশ্ন | উত্তরটা শুনে ডাক্তার না সামলাতে পেরে অট্টহাসি হেসে উঠলেন | হাসি আর থামে না | ক্রমে বেগ কমে এলেও খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসতেই থাকলেন | বিব্রত হয়ে নিভা জিজ্ঞাসা করলেন, “হাসছেন যে !” ডাক্তার বললেন, “প্লেটলেট ইন – প্লেটলেট আউট |”
- “মানে ?”
- “মানে ... বিটরুট ইন – বিটরুট আউট !”


----------------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ১৮ নভেম্বর ২০১৫

কোন মন্তব্য নেই: