রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৫

কুন্তলা

|| কুন্তলা ||


অধুনা-লুপ্ত একদাকে ঠাঁই দিয়ে এই গ্রামে
শিথিল বহমান সময় যেন গিয়েছে থেমে
সাড় হীন, চিৎপাত, গেরুয়া খোয়াই মাঠ
নিটোল আরশি সরসীর স্নানার্থী রিক্ত ঘাট
নিরুদ্দেশগামী ক্ষয়িষ্ণু পথেরা ধুলো ভরা
ছায়ামাখা সাকিন, দেয়াল নোনা, ঘুণ ধরা
দুরে মন্দাকিনীর বিলে পানা ছাপায় দুকুল
চূর্ণ চুনি সবুজ শ্যাওলা মাখা শিব দেউল
একা বেওয়ারিশ কুকুর, নামেমাত্র কুবের
বসে থাকে, মুখ চেয়ে যুধিষ্ঠির পুরুতের

এক প্রান্তে ঘুমন্ত অট্টালিকার তেতলায়
কার্নিশ বিহীন ভাঙ্গা খড়খড়ির জানালায়
ডুরে আলো-আঁধারিতে আবলুস খাটে
পা ছড়িয়ে বসে কন্যা চুলে বিলি কাটে
দাঁতভাঙ্গা গজদন্ত চিরুনি, চিকন হাতে
আংটির দাগ বসে নি যার অনামিকাতে
যার কপাল এখনো ছোঁয় নি বিন্দু সিন্দূর
মুখে চেয়ে তার চাঁদ রাতে মেঠো ইন্দুর
থমকে হয় এক চিরন্তন দিবাস্বপ্নে বিলীন
রাজকুমারের আগমন কি এতই কঠিন ?

কিন্তু আসে না কখনই কোন রাজকুমার
থেমে থাকে সময়, তবু শত যুগ হয় পার
যদি দূর হতে লোকজন নিয়ে বাস আসে
মন্দাকিনী পারে নলহাটি হাটের ওপাশে
কিছু লোক ওঠে, নাম দুই-এক অচিন মুখ
আশ ভরে শ্বাস নেয়, তবু ভরে না বুকে সুখ
কখনো কেউই পার হয় না ওই খোয়াই মাঠ
কেনই বা পার হবে ? আলাই-বালাই ষাট !
শুনেছে তারা এক ডাকিনীর কুহকের কথা
আজানুলম্বিত চুলে বেষ্টিত যার সুচারু মাথা
সে নাকি নামিয়ে তার কুন্তল পাতে ফাঁদ
যখন চারিদিক সুনসান, ফুটন্ত চাঁদনী রাত
তারপরে ফেলে দিয়ে সেই গজদন্ত চিরুনি
শুধায়, “এই, এত দিন কেন তুমি আস নি ?
এসেছ, তো আঁচড়ে দাও আমার এই চুল”
ব্যাস ! ওখানেই হবু রাজকুমার করে ভুল
যেই সে সেই ভাঙ্গা চিরুনি চুলেতে ঠেকায়
অমনি কোথায় চুল,  কুন্তলাই বা কোথায় ?
হারায় একদা, সময় চমকে জাগে বর্তমানে
নিঃসাড় গ্রাম জেগে ওঠে প্রাণের স্পন্দনে

হতে কি পারে না এমন, সত্যি ? বিলকুল !
হোক মিথ্যা, অবাস্তব কল্পনা, মায়ার ভুল ||


--------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ০৮ নভেম্বর ২০১৫

কোন মন্তব্য নেই: