বুধবার, ৫ আগস্ট, ২০১৫

আর এক ম্যডিউসা

|| আর এক ম্যডিউসা ||

হাসি মাসি আমার চেয়ে বয়েসে খুব একটা বড় ছিল না | আমার মনে পড়ে না কবে প্রথম হাসি মাসিকে দেখি | তবে যবে থেকেই হোক, হাসি মাসিকে একই রকম দেখেছি | আবছা স্মৃতি আমার স্কুলের প্রথম গরমের ছুটির – হাসি মাসি তখন আমার থেকে এক মাথা লম্বা | তখন প্রতি বছর গরমকালে ছুটিতে দাদুর বাড়ি যাই, আর খালি গায়ে হাফ প্যান্ট পরে খেলে বেড়াই | শেষ দেখা স্মৃতি আমার কলেজে প্রথম বর্ষের পুজোর ছুটির – ততদিনে আমি হাসি মাসির থেকে এক মাথা লম্বা | এই দশ বছরে হাসি মাসির কিছুই বদলায়নি  – সেই প্রায় মায়ের মত উচ্চতা, সেই হালকা শরীর, ঠোঁট চাপা মুখে সেই স্মিত হাসি | এর পর চাকরিতে ঢুকেই একবার দাদুর বাড়ি গিয়েছি, তার কিছু আগেই হাসি মাসির বিয়ে হয়ে গেছে, দেখা পাই নি |

আমার দিদিমা নিজে একমাত্র কন্যা হওয়া সত্ত্বেও তাঁর ছয় ছেলে ও ছয় মেয়ে হয় | আমি  অবশ্য জ্ঞান হয়ে থেকে তিন মামা, আর তিন মাসিদের দেখেছি; বাকিরা শুনেছি আঁতুড়ঘরে, কি একটু বড় হয়ে, মারা যায় | কাজেই দিদিমার আর সন্তান-সন্ততির দরকার ছিল না | তবুও, গ্রামের এক দুঃস্থ মেয়েকে কোন সময় দাদু আশ্রয় দেন, সেই বড় হয়ে হয় হাসি মাসি | আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর দাদু হাসি মাসিকে রেখেছিলেন দিদিমাকে সংসার সামলাতে সাহায্য করার জন্য | কিন্তু, আমরা কোনদিন হাসি মাসিকে তেমন কাজ করতে দেখি নি | তার জন্য অবশ্য অতি চঞ্চলমতি করিতকর্মা দিদিমাই বেশি দায়ী ছিলেন | হাসি মাসি কিছু করতে চাইলেই ব্যস্ত হয়ে বলতেন, “না, না, থাক | তুই যা, অন্য কিছু কর |” এই কারণে, আমি দেখেছি হাসি মাসি মুখে একটু বিব্রত হাসি মাখিয়ে কিছু করার জন্য উদগ্রীব হয়ে দিদিমার আসে পাশে উপস্থিত থাকত | মেয়ে-জামাইরা গরমকালে দাদুর বাড়ি গেলে, যে নাতি নাতনির দৌরাত্ম্যে তাঁর সংসার নরক গুলজার হত, সেই নাতি নাতনিদের কেউ দেখার ছিল না | তাই, দিদিমা হাসি মাসিকে আমাদের চোখে রাখার সম্পূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছিলেন | আমরা হাসি মাসিকে গ্রাহ্যও করতাম না | তাই, আমরা বেশি উৎপাত না করলে, হাসি মাসি আমাদের ধারে কাছে থাকত না, কোন জোর খাটাত না |

হাসি মাসি ছিল, যেমন বলেছি, উচ্চতায় মাঝারি, কি একটু কম | গায়ের রং ময়লা | মিষ্টি মুখখানা ছিল গড়নে ছোট | আর, দাদুর ভাষায় বাউসমুখী, ছোট্ট দুই ঠোঁটে সবসময়ে একটা হাসি ফুটে থাকত, কিছুটা আমুদে, কিছুটা অপ্রতিভ | হাসি মাসি কিন্তু আসল হাসি হাসত চোখে, ‘চক্ষু মুদে’ | যখন হাসত ওর ভুরু কুঁচকিয়ে জোড়া হয়ে চোখ দুটো বুজে আসত, মাথা পিছনদিকে কাত হত | বেশি হাসির বেগ এলে সামলাতে না পেরে, হাসি মাসি মাথা এদিক ওদিক হেলিয়ে কাত হয়ে পড়ত, তবু মুখ খুলে হাসত না | হাসি মাসির না রোগা, না মোটা দোহারা শরীরটায় জড়ানো থাকত তাঁতের শাড়ি | হাসি মাসি কুঁচি না দিয়ে শাড়ি পরত | অন্য মাসিদের সাথে হাসি মাসির এই একটাই প্রকট তফাত ছিল | হাসি মাসির মাথায় অসম্ভব পরিমাণে কোঁকড়ানো চুল ছিল যা ওকে কোনদিন বাঁধতে দেখিনি | ওই অঢেল সর্পিল, পাকানো শণের নুড়ি, ঝুরি ঝুরি চুল পিঠ ছাপিয়ে কোমর অব্দি নামত | মা, মাসীরা মাঝে মাঝে ডাকত, “হাসি, আয়, তোর চুল বেঁধে দিই |” হাসি মাসি এড়িয়ে যেত | সেই চুলের বর্ণালীতে দিনের আলোয় অনেক সোনালী ডোরা দেখা যেত | হাসি মাসির রগে, গালে, আর হাতে ওই রকমেরই সোনালী লোমের প্রাদুর্ভাব ছিল | বোধহয়, হাতের লোম নিয়ে হাসি মাসি বিব্রত থাকত, কেন না দেখতাম হাতের উপর চোখ ফেললেই হাসি মাসি শাড়ির আঁচলে হাত লুকত | আমার চোখে ওই সোনালী লোমই কিন্তু মনে হত হাসি মাসির হাতের ছিলা কাটা সোনার চুড়ি থেকে ছিটিয়ে পড়া সোনার সূক্ষ্ম আঁশ |

আমরা হাসি মাসিকে গুরুজনের চোখেই দেখতাম | একমাত্র আমার বেয়াড়া মাসতুত ভাই দিনেশ ছড়া কেটে গাইত:
“হাসি মাসি, মাসি নয়, আসলেতে দাসী সে / রূপ তার উপচায় নিম তেল মালিশে” | 

তার কারণ, শুনেছিলাম, হাসি মাসি নাকি মেজ মাসি, দিনেশের মা, কে বলে শিরিনী থেকে নিম তেল আনাতো, গায়ে মাখার জন্য | দিনেশ বলত শিরিনীর বাজারে নিম তেল পাওয়া যায় | সেই তেল মেখে সাঁওতাল মেয়েরা চেহারা ঘষামাজা, আর হাত পা নির্লোম রাখে | দিনেশ কী করে এতসব জানতো আমার জানা নেই |

মামাদের মধ্যে হাসি মাসিকে যদিও অন্য কারো সাথে তেমন কথা বলতে দেখিনি, তপু মামা হাসি মাসির সাথে কথা বলত, ঠাট্টা করত, আর পিছনে লাগত, বিশেষ করে ওর সরল ব্যবহার নিয়ে | হাসি মাসি রাগ করত না, শুধু কপট চোখ রাঙিয়ে বলত, “তপুদা, দাঁড়াও মাকে বলছি | বলি, সেদিন কী করেছিলে ?” তখন দেখতাম তপু মামাও কপট কাকুতি মিনতি করে বলত, “হাসি, প্লিজ, মাকে কিছু বলিস না | তোর কী চাই বল, আমি এনে দেব |” হাসি মাসি বলত, “তুমি তো জানোই আমি কী চাই |” তপু মামা বলত, “আচ্ছা, আমি বলব নীল কে |” জানি না, কী সেই প্রতিশ্রুতি ছিল, তবে হাসি মাসি তপু মামার নানান ফাই ফরমাইশ খুব খাটত |

যখন আমি হাই স্কুলে উঠেছি, গোঁফ গজাব গজাব করছে, তখন অনাত্মীয়া তো বটেই, দূর সম্পর্কেরও মেয়েদের নিয়ে খুব কৌতূহল | সেই কৌতূহল কিছুটা কাটত তপু মামার সাহচর্যে | তপু মামা কলেজ থেকে ফিরে চা খেয়ে বলত, “চল, ঘুরে আসি |” ঘুরে আসা বলতে, এক চক্কর দিয়ে তপু মামা যেখানে যে বন্ধু পেত ধরে জেল-ময়দানে গিয়ে রুমাল পেতে বসে আড্ডা দিত | চীনেবাদাম খাওয়া, কদাচিৎ কখনও ভাঁড়ে চা | বেশির ভাগ গল্পই ছিল এ পাড়া, ও পাড়ার গল্প, সেই সাথে কিছু কলেজের গল্প, বই, সিনেমার গল্প, আর মাঝে মাঝে এর ওর পাড়াতুতো বান্ধবীর গল্প | গল্প বলছি, কেন না সেই সময় আমার চেয়ে বয়স্কদের অপেক্ষাকৃত পরিণত ভাষার সব চর্চাই আমার গল্পের মত মনে হত |

আবার এক এক দিন এমনও হত, তপু মামা শুধু এক বন্ধুর সাথে ঘুরতো | তার নাম ছিল ইন্দ্রনীল না কি, ডাক নাম নীল | তপু মামার সাথে আড্ডা দিতে নীল মামা সাইকেল নিয়ে আসত | আমি সামনে রডে বসতাম, কখনও নীল মামা, কখনও তপু মামা চালাত, অন্য জন পাশে পাশে হাঁটত | কোনদিন গঙ্গার পাড়ের বাঁধে সাইকেল চলিয়ে আমরা শ্মশান ঘাট পার হয়ে যেতাম | কোনদিন খেয়া ঘাটে গিয়ে, নৌকায় করে আমারা ওপারে চলে যেতাম | সেখানে ছিল সব একের পর এক আমের বাগান, আল দিয়ে আলাদা করা | ওই আল পথে সাইকেল চালিয়ে আমরা চলে যেতাম দাদুর বাগানে | সে বাগান এত বড় ছিল যে আমি তার অন্য প্রান্ত দেখি নি কোন দিন | ওই বাগানে ঘুরে ঘুরে তপু মামা দেখত কোন গাছে কেমন ফল ধরেছে – আম, জ্যাম, লিচু, সফেদা | নীল মামা একাগ্র হয়ে মাটিতে চোখ রেখে পা টিপে টিপে হাঁটত | মাঝে মাঝে নিচে মাটিতে পড়ে থাকা শুকনো পাতায় সিরসির করে কিছু নড়ে উঠত | নীল মামা সতর্ক হয়ে, ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে আমাদের সাবধান করে দিয়ে, পা টিপে টিপে গিয়ে হটাত মাটিতে ঝুঁকে খপ করে ধরত – সাপ | নীল মামার সাপ ধরার শখ ছিল | সাপ সম্বন্ধে জ্ঞানও ছিল বিস্তর – কোন সাপের নাম কী, দেখতে কেমন, কার বিষ নেই, কার আছে জানতো – আমার অন্তত তাই মনে হত | অনেক বার দেখেছি সাপ ধরে আবার ছেড়ে দিতে | এক দুবার দেখেছি, বড় লম্বা সাপ হলে, তার লেজ ধরে মাথার উপর বনবন করে ঘুরিয়ে ছুঁড়ে ফেলতে | আবার কখনও সাপ ধরে আছড়ে পিটিয়ে মেরে, শুকনো পাতা, কাঠ কুটো জড়ো করে তপু মামার দেশলাই নিয়ে আগুন জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে দিত | তার শেষ দৃশ্যটা দেখে আমার খুব ভয় করত – পুড়ে যেতে যেতে আগুনের তাতে মুখটা খুলে ফাঁক হয়ে যাওয়া সাপের বিকট মুখব্যাদান | নীল মামা বলত, ওই সময় নাকি সাপ চোখ খুলে শেষ বারের মত দেখে নেয় তার ঘাতককে, পরের জন্মে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য | তাই ওই সময় সাপের চোখের দিকে তাকাতে নেই | আমি দূরে দাঁড়িয়ে আড়চোখে এই সব কাণ্ড কারখানা দেখতাম, আর ভাবতাম নীল মামার কী সাহস |

কোন কোন দিন নীল মামা একটা বাজার করার ব্যাগ হাতে নিয়ে দাদুর বাড়ি এসে তপু মামাকে নিয়ে ছাতে চলে যেত | দেখতাম থেকে থেকে হাসি মাসিকে ডেকে এটা সেটা ফরমাইশ করা হচ্ছে – দাদুর নস্যির কৌটো লুকিয়ে নিয়ে আসতে, একটু চা করে আনতে | কখনও হাসি মাসি টুক করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে নিচের ফেরিওয়ালার কাছ থেকে ডালমুট কি বাদামভাজা কিনে আঁচলে মুড়িয়ে এনে দিত | নীল মামার সাথে তপু মামার খাপ খেত যত অব্যক্তিক ব্যাপার – গঙ্গার জলে সাঁতার, বালির চরে দৌড়, ওপারের ক্ষেত বাগান, জন্তু জানোয়ার, পশু পাখী, সাপ খোপ দেখা | আমি সাথে থাকলে হাঁ করে শুনতাম |

নীলু মামা হাসি মাসিকে আড়ালে নাগকেশী বলে ডাকত | আমি কারণ বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, “ওই নাম কেন ? নাগকেশ ফুল হয় জানি, কিন্তু নাগকেশী মানে কী ?” নীলু মামা বলেছিল, “ব্যাটা, তোর বুদ্ধি এক্কেবারে গুবলেট | দেখেছিস না, ওর মাথায় কত সাপের মত চুল ! তাই ... বুঝেছিস এবার ?” আমি মাথা নেড়েও সম্মত হই নি | একদিন আমি শুনে ফেললাম তপু মামা নীল মামাকে বলছে, “তুই সব সময় হাসিকে ও’ভাবে ডাকিস কেন ?” নীলু মামা বলল, “হাসিও তো আমাকে গুণীন বলে | তপু মামা বলল, “সে কী ?” নীল মামা বলল, “হ্যাঁ, আমায় বলে, সাপ বশ করো, মানুষও কী বশ করতে পা
রো ?” তপু মামা বলল, “তাই বলে তুই ... দেখ, ও আমাদের এক পদের মেয়ে নয় | কী থেকে কী বুঝে বসবে | আমার মনে হয় না তুই এটা ঠিক করছিস |” নীলু মামা জিজ্ঞাসা করল , “কেন, কী অন্যায় করছি বল ?” তপু মামা কিছু উত্তর দিতে গিয়ে হটাত আমায় দেখে হেসে বলল, “এই, বড়দের কথা তুই এত কী গিলছিস ? যা, পালা এখান থেকে |”

এই আশ্চর্য শৈশব একদিন কেটে গেল | বীররামপুর স্মৃতির আয়নায় পিছনে ফেলে এগিয়ে গেলাম স্কুল থেকে কলেজ হয়ে চাকরী জীবনে, সেও দূর দেশে | এত পরিচিত জগতটা কুঁকড়ে ছোট হয়ে দুরে সরে গেল | হারিয়ে গেল দাদু, দিদিমা, মাসি, মামারা | যতদিনে চাকরী জীবন শেষ হল মাতুলকুলের শেষ প্রদীপ সবার ছোট দীপু মামা শুধু বেঁচে | একদিন হটাত বোধ করলাম বড় হতে হতে অজান্তে বুড়ো হয়ে গেছি |

চাকরি থেকে অবসর পেলে, দীপু মামার টানাটানিতে ছোট ছেলে খোকনের বিয়েতে মামাবাড়ি গেলাম, শেষ গিয়েছি তার  সাঁইত্রিশ বছর আগে | এক এক করে পুরানো কথার খেই ধরলেও, হাসি মাসির কথা ভুলেই গিয়েছিলাম | একদিন মামিমার কাজের মেয়েটা না আসায় মনে পড়ল | দীপু মামাকে জিজ্ঞাসা করলাম হাসি মাসির কথা | দীপু মামা অবাক হয়ে বলল, “হাসির কথা তোর মনে আছে ?”
আমি –“মনে আছে ? এখনও চোখ বন্ধ করলে হাসি মাসির চেহারাটা দেখতে পাই | কোথায় আছে ? কেমন আছে ?”
মামা – “ভালই আছে | দেখলে তুই চিনতে পারবি না | সেই হালকা পলকা হাসি আর নেই, সে এখন বেশ ভারিক্কি গিন্নি হয়ে গেছে | বরটার মেলাই পয়সা | আজিমপুরে বাড়ি | গাড়ি, লরি, ট্রাক, বাস নিয়ে এলাহি কারবার | লোকজন নিয়ে মস্ত সংসার |”
আমি –“একটু একটু করে বলো সব কথা | আমি এসব কিছুই জানি না ... হাসি মাসি আর আসে না এ বাড়িতে ?”
মামা – “হ্যাঁ, বাবা মা বেঁচে থাকতে তো প্রায় পূর্ণিমা, অমাবস্যায় আসত | সেটা কমে কমে, কিছুদিন আগেও প্রত্যেক বছর পুজোয় এসে তোর মামিমার সাথে গিয়ে অষ্টমীর পুজো দিয়েছে | আবার দশমীর পর হাবুল, মানে ওর বরকে নিয়ে এসে প্রণাম করে মিষ্টি দিয়ে গেছে | খোকনের বিয়েতেই আসতে পারল না | আগেই বলেছিল হাবুলের এক ভাইঝির বিয়ে আছে একই দিনে |”
আমি – “বর, মানে মেসো কী করে ?”
মামা – “কী না করে বলা সোজা | আগে জিজ্ঞাসা কর, ওই ছেলেকে আমরা পেলাম কী করে |”
আমি –“বলো শুনি |”
মামা –“বাবা একবার সক্কাল বেলা গঙ্গা স্নান করে ফিরছে | হাবুল দুধের ক্যান সাইকেলে নিয়ে যেতে যেতে বাড়ির ঠিক সামনে বাবাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় | বাবার খুব বেশি ছোট লাগে নি | তাও হাবুল সাইকেল দাঁড় করিয়ে বাবাকে উঠিয়ে বাড়ি দিয়ে গেল, অনেক আফসোস করে ক্ষমা চেয়ে নিলো | তারপর দু’চার দিন বাদে বাদে এসে খবর নিয়ে যেত | বাবার ছেলেটাকে খুব ভালো লেগে যায় | স্বাস্থ্য ভালো ছিল | দশ ক্লাস অব্দি পড়েছিল, কিন্তু ম্যাট্রিক দিয়ে উঠতে পারে নি | সকাল সকাল উঠে আজিমপুর থেকে খান চারেক মস্ত দুধের ক্যান নিয়ে এখানে এসে সাপ্লাই দিয়ে যেত | ভাব তুই, প্রায় দু মণ মত দুধ ছেলেটা, কি শীত কি গ্রীষ্ম কি বর্ষা, প্রায় সাত আট কোষ পথ সেই আজিমপুর থেকে সাইকেলে করে বয়ে নিয়ে আসত | এ ছাড়া আজিমপুরে কিছু চাষের জমিও ছিল |”
আমি –“তার মানে হাসি মাসি ছেলে ভালই পেয়েছিলে | আমি ভাবতাম ... হাসি মাসি তো পড়াশুনা করে নি ...”
মামা – “হ্যাঁ, প্রথম প্রথম হাসির একটু ওজর আপত্তি ছিল | কিন্তু বয়েস হয়ে যাচ্ছিল | বাবা একবার খুব রাগ করল ... কিন্তু বিয়ের পর হাসি খুব সুখী হয়েছে | হাসিই তো বিয়ের পর হাবুল কে দিয়ে একটা পুরানো লরি কেনালো | কেউ আজিমপুরে কাঠের ব্যবসা করত | গাছ কাটা নিয়ে ফরেস্ট অফিসের কড়াকড়ি শুরু হওয়ার পর সেই ব্যবসা লাটে উঠলো | তার লরিটা জলের দরে বিক্রি হচ্ছে শুনে হাসি হাবুলকে বলল, লরিটা কিনে নাও | হাবুল বলল, লরি দিয়ে কী করব | হাসি বলল, লরি করে দুধ বিলি করবে | হাবুল বলল, খালি লরি নিয়ে ফিরতে হবে, তার তেল লাগবে না ? হাসি বলল, না ফেরার পথে গঙ্গার বালি, আর ক্যান ভরে গঙ্গা জল নিয়ে আসবে, বেলগঞ্জে আড়তে সাপ্লাই দেবে | তখন হাবুল বৌয়ের কথা রেখে, বাবার সাথে পরামর্শ করে,  বাবার কাছ থেকে কিছু ধার নিয়ে, আর জমি বিক্রি করে সেই লরি কিনল | ব্যাস, তারপর লক্ষ্মী দেবী এমন প্রসন্ন হল যে দেখতে দেখতে তিন চার বছরে ও আরও দু’খানা পুরানো লরি কিনে ফেলল | এর পর জমি, বড় রাস্তায় বাড়ি, ট্রাক-বাসের ব্যবসা – ও কী করে না আমায় জিজ্ঞাসা করিস না, আমি বলতে পারব না | হাসি মেয়েটা যেমন পয়মন্ত ছিল, তেমনই দু’জনে সুখী হয়েছে |”
আমি – “তুমি বলছিলে, প্রথম প্রথম একটু হাসি মাসির আপত্তি ছিল | তারপর দাদু রাগ করল | তোমরা কি জোর করে বিয়ে দিয়েছিলে ?”
মামা – “না তা ঠিক নয় ... যাক গে, সে সব পুরানো কথা | তুই যাবি তো যা, খোকন কে নিয়ে কাল পরশু আজিমপুর থেকে ঘুরে আয় | বাসে সব মিলিয়ে এক এক দিকে ঘণ্টা খানেক লাগবে | জল খাবার খেয়ে বেরিয়ে ভাত খাওয়ার আগে ফিরে আসতে পারবি | হাসি খুব খুশি হবে |”
আমি – “হাসি মাসির ছেলে মেয়ে ?”
মামা – “একই ছেলে, ডাক্তার | ওই আজিমপুরেরই হেলথ সেন্টারে ছিল বেশ কয়েক বছর ধরে | এখন জানি না আর আছে কিনা | একটা ব্যাপারে ছেলেটার খুব হাত যশ, জানিস তো | সাপের কামড়ের একেবারে ধন্বন্তরি ডাক্তার !”
আমি – “ও ... মামা, একটা কথা জিজ্ঞাসা করব ? কিছু মনে করবে না তো ?”
মামা – “বল |”
আমি – “ওই যে তপু মামার বন্ধু ছিল নীল মামা ... নীল মামা কি বেঁচে আছে ? ওর সাথে কি হাসি মাসির কিছু ছিল ?”
মামা –“কে নীলাঞ্জনদা’ ?”
আমি – “ইন্দ্রনীল না ? তপু মামার খাস বন্ধু, যে সাইকেল চেপে ঘুরে বেড়াত, আর খুব সাপ ধরত |”
মামা –“বুঝেছি | ওর নাম ছিল নীলাঞ্জন | না, ওর সাথে হাসির কিছু ছিল না | অন্তত আমাদের কখনও মনে হয় নি | ওই হাসির বিয়ের ঠিক পরেই একজনের সাপের কামড় খাওয়া বিষ মুখ দিয়ে শুষে বের করতে গিয়ে নীলাঞ্জনদা’ মারা যায় | একেবারে অকস্মাৎ মৃত্যু | বলতে পারিস, হাসির ছেলের সাপের কামড়ের চিকিৎসা শেখার পিছনে এক রকম কারণ ওই নীলাঞ্জনদা'র মৃত্যু | সে আর এক কাহিনী |”
আমি –“তাই বুঝি ? কী হয়েছিল, বলো না |”
মামা – “এখন থাক, অনেক রাত হয়েছে | আজ শুতে যা | কাল আবার গল্প হবে | আমারও তো দেখতে দেখতে আটাত্তর হল | আর বেশি রাত জাগতে পারি না | যা, আজিমপুর থেকে ঘুরে আয় | তারপর না হয় শুনবি |”

দু’দিন পরে খোকন কে নিয়ে আজিমপুর ঘুরে এলাম | একজন সৌম্য মাঝবয়েসী দরজা খুলে বলল, “আরে, খোকন ! আর ইনি ?” খোকন পরিচয় দিলে, ভিতরে নিয়ে গিয়ে বলল, “দেখ কে এসেছে, চিনতে পারো কিনা |” হাসি মাসির বেশ কষ্ট হল আমাকে চিনতে | বলল, “ওহ, সে তোরা কতজন মিলে সব আসতিস, তিন দিদির কুল মিলিয়ে তেরো না চোদ্দ জন বোনপো, বোনঝি | তাছাড়া নীরু, তোর চেহারাও তো বদলে গেছে রে অনেক | মুখ ফুলেছে, চুলও সব পেকে গেছে |”
হাসি মাসির দেখলাম চেহারা ভারী হলেও চুলে পাক ধরে নি | সেই রকম মাথা ভরা চুল | হাসির ভঙ্গিও একই রকম | হাবুল মেসো শুনলাম বাড়িতে নেই | হাসি মাসি বলল, “ইস, তুই আসবি জানলে ওকে বলতাম থাকতে |”
আমি –“তোমার ছেলে নাকি এখানেই হেলথ সেন্টারে আছে, মামা বলছিল ?”
মাসি –“কে ? সদা ? ওই তো তোদের দরজা খুলে দিল | বছর দুয়েক হোলো সদরে বদলি হয়ে গেছে | তবে গ্রামে গঞ্জে তো ডাক্তারের অভাব | কখনও রুগীর এমন জরুরী অবস্থা থাকে ডাকলে আসতেই হয় | এই যেমন এখন এসেছে |”
আমি –“শুনলাম, তোমার ছেলে সাপের কামড়ের একেবারে ধন্বন্তরি |”
মাসি হটাত চোখ ছোট করে বলল, “এই কথা কে বলল তোকে ?”
আমি –“দীপু মামা বলছিল |”
মাসি –“আর কী বলেছে দীপুদা’ ?”
আমি – “না, এমনি নীল মামার কথা হচ্ছিল | বলল, নীল মামা সাপে কাটা কারো বিষ চুষে বের করতে গিয়ে মারা যায় | সেই জন্যই কি ...”
মাসি –“সেই জন্য কী ?”
আমি –“না, আমি ভাবলাম ... নীল মামার কথা মনে করে তুমি হয়ত ছেলেকে সাপের কামড়ের ডাক্তার করেছ |”
মাসি একটু মুখটা নামিয়ে চুপ করে থেকে বলল, “কে জানে কী ভাবে সদাটা নীলদা’র ধাত পেয়েছে | ছোট থেকেই যত সাপুড়ে আর সাধু ফকিরের সাথে ঘুরত ... টোটক, তাবিজ, মাদুলি এই সব ঘাঁটত ... ও, শোন, তুই থাকবি তো ? ভাত খেয়ে ওর সাথে আলাপ করে বিকেলে ফিরবি না হয় |”
খোকন ব্যস্ত হয়ে বলল, “না পিসি, বাড়ি ফিরতে হবে | অনেক কাজ | আমি চলে যাওয়ার আগে বিয়ের খরচের সব হিসাব পত্র চুকিয়ে দিয়ে যেতে হবে |”
মাসি –“তুই আর তোর কাজ | তোর বিয়েতে যেতে পারলাম না, তাই বুঝি বউকে নিয়ে এলি না ? একটু মুখ দেখতাম অন্তত |”
খোকন বলল, “তুমি এস না একদিন | আমরা এখন আছি আরও ছ’-সাত দিন |”
বিদায় নিয়ে উঠলাম যখন, হাসি মাসি, “খোকন, দাঁড়া একটু” বলে একটা পাট করা নতুন সিল্কের শাড়ি এনে দিয়ে বলল, “যেদিন যাব, সেদিন যাব | আজ তুই এটা নিয়ে যা |”

বাসে ফিরতে ফিরতে খোকন বলল, “নীরুদা’ তুমি জানো সদানন্দদা’ কেন সাপের কামড়ের ডাক্তার ? বাবা অবশ্য তোমাকে বলবে না |”
আমি –“তুই জানিস ?”
খোকন –“কিছু কিছু মায়ের কাছে যা শুনেছি তাই | তবে তুমি বাবাকে বোল না যে আমি বলেছি |”

খোকনের কথা শুনতে শুনতে মানসচক্ষে স্পষ্ট যেন সব দেখতে পেলাম |

নীল মামার সাপ ধরা নিয়ে হাসি মাসির খুব কৌতূহল হত | বলত, “গুণীনদা’, তুমি সাপ কী করে বশ করো আমাকে শিখিয়ে দেবে ?” নীল মামা বলত, “তুই মেয়েছেলে, সাপ ধরা শিখে কী করবি ?” কিন্তু, হাসি মাসির আবদারের চাপে নীল মামা মাঝে মাঝে নির্বিষ সাপ গামছায় মুড়িয়ে একটা ব্যাগে করে নিয়ে আসত | তপু মামার সাথে ছাতে গিয়ে, হাসি মাসিকে ডেকে দেখাত কী করে সাপ ধরে | ব্যাগ থেকে সাপটা বের করে ছেড়ে দিয়ে আবার ধরত | হাসি মাসি হুঁশ হারিয়ে তন্ময় হয়ে তাই দেখত | তারপর, নীল মামা ওকে শেখায় কী করে ধরতে হয় | হাসি মাসি ঠিক পারত না | সাপ ধরেই তার ঠাণ্ডা গায়ের ছোঁয়ায় চমকে শিউরে উঠে ছেড়ে দিত | তাই দেখে নীল মামা হাসাহাসি করত, বলত, “তোর দ্বারা হবে না রে |” কী ভাবে এই সব থেকে হাসি মাসির একটা অনাসক্তি হল নির্বিষ সাপের প্রতি | নীল মামাকে বলত, “না, এই ঢোঁড়াসাপ,  মেটেসাপ, গেছোসাপ সব কেমন ঠাণ্ডা | আমাকে এবার বিষাক্ত সাপ এনে ধরে দেখাও |”

দাদু, দিদিমার ভয়ে নীল মামা সাহস পেতো না | কিন্তু হাসি মাসির ক্রমাগত আবদারে একদিন একটা কেউটে ধরে তার বিষ বের করে ফেলে দিয়ে, নিয়ে এলো | এসে দেখে তপু মামা নেই, দিদিমা বলল হাসি মাসি গঙ্গায় স্নান করতে গিয়েছে | তখন নীল মামা দিদিমাকে, “হাসি আসলে বোলো আমি ছাতে আছি” বলে চিলেকোঠার ঘরে ব্যাগটা রেখে, তার পিছন দিকে ছাতের রেলিঙে ভর দিয়ে দাঁড়াল, নিচে তাকিয়ে, যে হাসি মাসি গঙ্গা থেকে ফিরলে ডাকবে | হাসি মাসি কখন স্নান করে এসে ভিজে কাপড় বদলে শুকোতে দেবে বলে চিলেকোঠার ঘরে ঢুকে খিল দিয়েছে নীল মামা টের পায়নি | ইতিমধ্যে, সাপটা কী করে ব্যাগ থেকে বেরিয়ে পড়েছিল | নীল মামা  হঠাত শুনলো হাসি মাসির চিৎকার, “ওরে বাবারে, চিলেকোঠায় সাপ ঢুকেছে | কে আছ, এসো শিগগির |” ওদিকে দরজা ভিতর থেকে খিল দেয়া | নীল মামা যতই বলে, “সাপটার বিষ নেই, হাসি, দরজা খুলে দে”, হাসি মাসি ততই ভিতর থেকে চেঁচায়, “সাপটা দরজার কাছে আছে, কী করে দরজা খুলব ?” নীল মামার চেঁচামেচি শুনে দাদু, দিদিমা নিচ থেকে ছুটে এলো | শেষে চাড় দিয়ে দরজা ভাঙ্গা হল | কিন্তু সাপটার দেখা পাওয়া গেল না | ঘরটায় দু চারটে ভাঙ্গা আসবাব ছাড়া কিছু ছিল না | দাদু, নীল মামা চারিদিক তন্ন তন্ন করে খুঁজে না পেয়ে আন্দাজ করল, সাপটা ওই ঘর থেকে জল বেরোনোর মুরিতে ঢুকে পড়েছে | মুরিতে জল ঢেলে দেখা গেল জল বাইরে পড়ছে না | মানে, ভিতরে ময়লা আটকে আছে, সাপটা পালাতে না পারলে আবার ঘরের ভিতরে ফিরে আসবে | তখন নীল মামা কাগজ, পাটকাঠি আর কেরোসিন এনে ওই মুরির মুখে ঢুকিয়ে আগুন ধরিয়ে দিল | সবাইকে বলল ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে | কিন্তু কেউ গেল না | হাসি মাসিও নীল মামার কথা শুনল না | আগুন যখন ভালো করে জ্বলে উঠেছে, গরমে সাপটা বেরিয়ে আসার চেষ্টা করল | না পেরে, মুরির মুখে ফণাটা বের করে ভয়ঙ্কর ভাবে ভাবে মুখটা হাঁ করে আছড়াতে লাগল | নীল মামা চেঁচিয়ে সাবধান করল, “খবরদার ! কেউ সাপটার চোখের দিকে তাকিও না | ও চিনে নেবে, শত্রু হয়ে যাবে |” হাসি মাসি, “কই দেখি তো” বলে সাপটার দিকে এগিয়ে সেই বিকট চোয়াল ফাঁক করা সর্বগ্রাসী মুখের দিকে তাকালো | নীল মামা তাই দেখে “হাসি, কী করছিস ? তাকাস না, তাকাস না” বলে আটকাতে গেল | হাসি মাসি ততক্ষণে সম্মোহিতের মত স্থির হয়ে গেছে | তাই দেখে দিদিমা মাসির কাঁধ ধরে টান দিতেই হাসি মাসি চোখ বুজে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল |

খোকন কথা থামালে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “তারপর কী হল ?” খোকন বলল, “শুনেছি,জ্ঞান ফেরার পর হাসি মাসি ক’দিন কথা বলে নি | নীল মামা তারপর আর বাড়িতে আসে নি | এই ঘটনাটা থেকে হাসি মাসির মনে সাপ নিয়ে একটা ভয় ধরে যায় | বিয়ের কথা উঠলে আপত্তি করত যে অজ পাড়া গাঁয়ে বিয়ে দিলে সাপের কামড়ে মরবে | কেউ ব্যাপারটা তেমন গুরুত্ব দেয় নি | কিন্তু, যখন বিয়ের কিছুদিন পরেই নীল মামা সাপের বিষে মারা গেল, পিসির সেই ভয়টা বদ্ধ ধারণা হয়ে দাঁড়াল, যে পিসিকেও সাপটা মারা যাওয়ার আগে দেখে রেখেছিল, একদিন ফিরে আসবে প্রতিশোধ নিতে |”

একটু থেমে, খোকন বলল, “খুব ছোট থেকেই পিসির কাছে এই কথা শুনে শুনে সদানন্দদা’ বোধ হয় প্রভাবিত হয়েছিল, তা না হলে  ...”
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, “তা না হলে কী?”
খোকন – “দেখো, আমি মনে করি না আর কোনও কারণ আছে সদানন্দদার সাপ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার |”
আমি – “ঘাঁটাঘাঁটি মানে ? মামা যে বলল ও সাপের কামড়ের ধন্বন্তরি ! তা নয় ?”
খোকন –“আমি ঠিক মানি না | আমার মনে হয় ও শুধু পিসিকে আশ্বস্ত করার জন্য এই সব কথা বলে | ও তো এমনিতেও পুরো ডাক্তার ঠিক নয় – এলো এম পি | সাপের কামড়ের চিকিৎসা ও কোথা থেকে শিখবে |”

আমার মনে পড়ল নীল মামার দেয়া হাসি মাসির নামটা, নাগকেশী  – ম্যডিউসা ? আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে খোকন বলল, “কী ভাবছ এত ?”
আমি –“ভাবছি ... হাসি মাসি যদি ম্যডিউসা হত !”
খোকন –“ম্যডিউসা ? মানে ?”
আমি –“মানে ... পড়িস নি, গ্রীক পুরাণের ম্যডিউসার কথা ? মাথা ভর্তি ঢেউ খেলানো সোনালী চুল, যা আসলে চুল নয়, সাপ | সেই নাগকেশীর দিকে যেই তাকায়, অন্ধ হয়ে যায়, পাথর হয়ে যায় | হাসি মাসি ম্যডিউসা হলে তার দিকে তাকিয়ে সেই চিলেকোঠার সাপ পাথর হয়ে যেত | কে জানে নীল মামাও হয়ত মরতো না ...”
খোকন –“তুমি কী তবে ভাবছো তপু জ্যাঠার বন্ধুর মৃত্যুটা লোকে যা জানে তা নয় ?”
আমি –“কে জানে ?”


------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ০৫ অগাস্ট ২০১৫



কোন মন্তব্য নেই: