শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৫

চায়ের এঁটো

|| চায়ের এঁটো ||

-“হ্যালো ... তনিমা !”
-“কে ? শিপ্রা ? আরে, কী খবর তোর ... এ’ ক’দিন ফোন করিস নি কেন ?”
-“বলছি, বলছি | সেই কথাই তোকে বলার জন্য তো ফোন করলাম | তোর সময় আছে ?”
-“হ্যাঁ, বল না ... যা বলতে চাস |”
-“তোর টম কে মনে আছে ?”
-“কে টম ?”
-“আরে টমেটো – টম-এঁটো ... কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের |”
-“ও ... তম এঁটো, মম এঁটো, যার-তার এঁটো, তুই যাকে ...”
-“থাক, আর বলিস না ...
  “আচ্ছা, তনিমা, একটা কথা বল ... মানুষ আত্মহত্যা করতে পারে, অথচ, পাগল কেন হতে পারে না রে, স্বেচ্ছায় ?”
-“ও মা, তুই পাগল হয়ে কী করবি ? কী হয়েছে তোর ?”
-“জানি না | কিন্তু কিছুদিন আগে হটাত ওর কথা মনে হল, ফোন করলাম ওকে |”
-“নম্বর পেলি কোথায়, এতদিন পরে ? তোর বিয়ে হয়েই তো তের বছর হয়ে গেল, তার তিন বছর আগে ছাড়াছাড়ি | কী, ঠিক বললাম তো ?”
-“ঠিকই বলেছিস, প্রায় ষোল বছর হয়ে গেল | এতদিনে নিশ্চয় ওর টাক, ভুঁড়ি, চশমা, সিরিয়্যাল দেখা বউ, বাচ্চা-কাচ্চা সব হয়ে গেছে | হ্যাঁ, ইয়ে ... যা বলছিলাম ... ও তো আমার মাসতুত দাদা সমীরের বন্ধু ছিল | সমীরদা’ই দিল নম্বরটা |”
-“কিছু জিজ্ঞাসা করল না ?”
-“না রে, সমীরদা খুব ভিন্ন রকমের মানুষ | শুধু বলল, ‘বাহ, এখনও প্রেম করছিস !? করে যা, মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব ভালো’ ... আর কিছু না |”
-“তুই কী বললি ?”
-“ধুর, সব কথার জবাব দিতে নেই | যাকগে, টমকে ফোন করলাম | বেশ ভারিক্কি, চিন্তা করা গলায় ফোন তুলল | মনে হল যেন টাক মাথায় হাত রেখে, বাই-ফোকাল চোখে উদাস হয়ে চেয়ে, ফোলা পেটের নাভির কাছ থেকে আওয়াজটা বের করল | তারপরই, আমার নাম শুনেই, টাক থেকে হাত নামিয়ে, বাই-ফোকাল খুলে রেখে, ভুঁড়ি টেনে ধরে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘আরে, এতদিন কোথায় ছিলে ?’”
-“উফ, এমন ভাবে বলছিস যেন মুখোমুখি কথা বলেছিস | তারপর ?”
-“তারপর অনেকক্ষণ নিছক কথা বার্তা – কে কোথায় আছে, কী করছে, বউ, বা বর - যার যেমন কেস - কী করে, ছেলে মেয়েরা সায়েন্স নিয়েছে না আর্টস | শেষে, বিশেষ বলার কিছু যখন থাকল না, তখন দুজনেই চুপ |”
-“ব্যাস ?”
-“না, ব্যাস ওখানেই নয় | আমি শেষে বললাম, ‘শোনো টম, যে কথাটা জিজ্ঞাসা করতে, তোমাকে ফোন করেছিলাম |’ ও বলল, ‘হ্যাঁ, বলো |’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আচ্ছা, আমাদের মধ্যে যে ঘনিষ্ঠতাটা হয়েছিল, তাতে কী একটুও ভালবাসা ছিল না ?’ ও জিজ্ঞাসা করল, ‘ঘনিষ্ঠতা ? সেকালের কম বাজেটের পকেট খরচে এঁটো চা শেয়ার করে দুজনের ঠোঁট এঁটো করা ছাড়া আর তো কিছু হয় নি |’ আমি বললাম, ‘যাই হোক, তার মধ্যে কি একটুও ভালবাসা ছিল না ?’ জানিস, তনিমা, ও না কিচ্ছু উত্তর না দিয়ে ফোনটা নামিয়ে রাখল |”
-“এই ব্যাপার ? এইটুকু ব্যাপার, আর তুই জানতে চাস মানুষ আত্মহত্যা করতে পারে, অথচ, পাগল কেন হতে পারে না স্বেচ্ছায় ?”
-“তুইই বল |”
-“কী বলব ? তুই এইরকম পাগলামি করলি, এর পরে তোর মুখে আর ওই প্রশ্ন সাজে ?”
-“তুই বুঝলি না | আমি অন্যের জন্য পাগল হওয়ার কথা বলছি না | সে অভিজ্ঞতা আমার আছে ... আমি জানতে চাই, মানুষ কেন নিজের জন্য পাগল কেন হতে পারে না স্বেচ্ছায় ?”
-“জেনে কী করবি ?”
-“কেন ? দিব্যি নিজের মনের মধ্যে লুকিয়ে বেঁচে থাকব, শাশুড়ি, বর, মেয়ে দুটো, কেউই ডিস্টার্ব করতে পারবে না  ... এই তোর ফোন বাজছে বোধ হয় |”
-“হ্যাঁ, ল্যান্ড লাইনে কেউ ফোন করছে | দাঁড়া দেখি ...
 “... শিপ্রা, আন্দাজ কর দেখি কার ফোন ছিল |”
-“কার তা আমি কি করে জানব ... ওহ! লেট মি গেস ...”
-“থাক, থাক | জিজ্ঞাসা করল, তুই কেমন আছিস |”
-“কী বললি ?”
-“বললাম যে তোর সাথেই ফোনে কথা বলছি | শুনে, ‘যাও, তাহলে পরে কথা হবে’ বলে ফোন রেখে দিল |”
-“ওহ ! আমি তো জানতাম না যে তোর সাথে ওর কথা আছে, তাহলে ওর নম্বরটা ...”
-“কেন ? তুই কি ভেবেছিলি ও শুধু তোর সাথেই চা শেয়ার করে খেয়েছিল ?”


----------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ১৮ এপ্রিল ২০১৫

কোন মন্তব্য নেই: