শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৪

চুড়িওয়ালী

|| চুড়িওয়ালী ||


কাঁচের চুড়িওয়ালীটি আর আসে না এ পাড়াতে
যে যেত ডেকে ডেকে, “কাঁচের জয়পুরী চুড়ি”
কী হল তার, কে খোঁজ রাখে বলো ? বিয়ে ?
হতেও পারে ; বয়েস ছিল তার চার আর কুড়ি

আসত সে ক্ষীণকটি ছিপছিপে বাদামী শরীরে
জড়িয়ে রোজ, একই বুটিদার গোলাপি শাড়ি
আর, কাঁচুলির মৌচাকে মধুকর অজস্র কড়ি
চুলে ঢাকা কপালে সবুজ, হলুদ টিপ রকমারি
ক্লান্ত মদিরা পিঙ্গল চোখে সুর্মা রেখা বিগলিত
তাও তার ম্লান স্বেদাক্ত মুখ ছাপিয়ে দেখা দিত
সরস দুই ঠোঁটের ফাঁকে নিষ্কলঙ্ক দাঁতের সারি
উপচানো আশা ভরা হাসিতে, সুমধুর ভারি

তার অঙ্গের রূপে ছিল আগত যৌবনের চটক
তাই, আসা যাওয়ায় মাঝে তার সুরেলা কুহক
কত ভর দুপরে আমার জানালার ফাঁকে ঢুকে
শুনিয়েছে, “নেবে নাও কাঁচের জয়পুরী চুড়ি”
শুনে বড় শূন্য লেগেছে ফাঁকা ফাঁকা এই বাড়ি
পরবার যে কেউ নেই, কী করে কিনতে পারি

একদিন জানালায় সে দেখেছে আমাকে একা
হেসেছে সে, তুলে তার দুই হাত, উল্কি আঁকা
বলেছে হলুদ, নীল, সবুজ চুড়ি গোছা আঁকড়ে
“আছে এমন অনেক রঙিন চুড়ি ভালো ভালো
নেবে বাবু ক’ জোড়া ? কী দামে নেবে বলো ”
আমি শুধু দেখেছি তার উদ্ধত উল্কি আঁকা হাত
সংকোচে – কী নিঃস্ব ! চুড়ি পরানোর প্রতীক্ষায়

তবু আমি কিনতে পারি নি, পারি নি আমি দিতে
কটা চুড়ি পরিয়ে ও’দুই উল্কি আঁকা খালি হাতে

তারপর চুড়িওয়ালীটি আর আসে নি এ পাড়াতে ||

--------------------------------------------------
© ইন্দ্রনীর  / ১১ অক্টোবর ২০১৪

কোন মন্তব্য নেই: