|| চারু বাক্ সুখ ||
দরিদ্র পণ্ডিত মশাইয়ের সংসার ছোট – পণ্ডিত, তাঁর স্ত্রী ও এক ছোট ভাই | তবুও চাল আনতে ডাল ফুরয়, ডাল আনতে নুন – পণ্ডিত বাড়ি বলে পান্তা খাওয়ার চল নেই | ভাই এত ছোট যে সে এখনও উপার্জন যোগ্য নয় | তাই পণ্ডিতের স্ত্রী বড়ই অসুখী | এমন নয় যে পণ্ডিত স্ত্রীয়ের কষ্ট বোঝেন না | কিন্তু অর্থাভাবের মধ্যে যা সম্ভব, মাঝে মাঝে স্বল্পশিক্ষিতা স্ত্রীকে দর্শন বুঝিয়ে গ্লানিমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেন | ফল হয় না |
একদিন স্ত্রী পণ্ডিতকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হ্যাঁগা, ঠাকুরপোর বিয়ে কবে দেবে ?” পণ্ডিত পান চর্বণ করতে করতে চার্বাক দর্শন পাঠ করছিলেন | কিছু বললেন না, শুধু ভ্রুকুটি করে একবার দৃষ্টি ক্ষেপণ করলেন, যার অর্থ, “এখন জ্বালিও না |”
কিছুদিন পরে স্ত্রী আবার সেই প্রশ্ন করলেন | পণ্ডিত তেমন ব্যস্ত না থাকলেও আগামী দিনগুলির আয় ব্যয়ের চিন্তা করছিলেন | অন্যমনস্ক ভাবে উত্তর দিলেন, “এখনও ওর বয়েস হয় নি | হলে দেখব খন |”
ক’দিন গেলে আবার সেই প্রশ্ন | রাত্রে শুয়ে কথা হচ্ছিল | এড়ানোর উপায় না পেয়ে, পণ্ডিত বিরক্ত হয়ে বললেন, “ওর বিয়ে নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছ কেন ? আরেকটা বউ আনলে খাওয়াবে কে শুনি ? আর তোমার তাতে কী লাভ হবে ?”
স্ত্রী গা ঘেঁষে বললেন, “তাহলে একটু সুখে থাকব |”
পণ্ডিত অবাক হলেন, “সুখে ... বলি ব্যাপারটা কী ?”
স্ত্রী বললেন, “কেন, তুমিই তো বলো, ‘ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ, জা বৎ জীবেৎ সুখং জীবেৎ’ | তা ধার করে ঘি নাই বা খাওয়ালে, জা হয়ে দুই বৌয়ে সুখে তো থাকব |”
------------------------------------
© ইন্দ্রনীর ০৪ মে ২০১৫
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন