|| শেষ গতি ||
পিওন এসে একটা অচেনা হাতে ঠিকানা লেখা ওঁ-গঙ্গা মার্কা খাম, আর একটা বড় পার্সেল দিয়ে গেল যার মোড়কের উপর হাতের লেখা অতি পরিচিত | প্রাপকের জায়গায় – বাংলায় ‘কাকিমা’, আর তার নিচে ইংরেজিতে মায়ের নাম ঠিকানা লেখা | প্রেষকের জায়গায় বড়দার নাম ঠিকানা |
প্রথমে শ্রাদ্ধের খামটা খুলে কার্ডটা পড়েই চমকে উঠলাম |
সময়োচিত নিবেদন -
মহাশয় / মহাশয়া,
গত ১লা চৈত্র ১৪১৯ সন (ইং ১৫ই মার্চ ২০১৩) শুক্রবার আমার পরমারাধ্য পিতৃদেব শ্রী সঞ্জীব কুমার দাস প্রাতঃ ০৫-৩০ ঘটিকায় সাধনোচিত ধামে মহাপ্রয়াণ করিয়াছেন | আগামী ১৩ই চৈত্র ১৪১৯ সন (ইং ২৭ মার্চ ২০১৩) বুধবার, তাঁহার আদ্যশ্রাদ্ধ ও পারলৌকিক ক্রিয়াদি অনুষ্ঠিত হইবে | অতএব আপনি / সপরিবারে শ্রাদ্ধবাসরে উপস্থিত থাকিয়া তাঁহার আত্মার শান্তি কামনা করিয়া আমাদিগকে পিতৃদায় হইতে উদ্ধার করিবেন |
পত্র দ্বারা নিমন্ত্রণের ত্রুটি মার্জনীয় |
ইতি –
ভাগ্যহীন
রাজীব কুমার দাস ও শোকসন্তপ্ত পরিবার
… ‘কী সর্বনাশ ! বড়দা মারা গেছে, আর আমরা তার বিন্দুমাত্র আভাসও পাই নি | তাহলে পার্সেলটা কবেকার ?’
কার্ডটার নিচে দেখি pto লিখে পাশে একটা ছোট তীর আঁকা | পালটিয়ে দেখলাম পিছনে লেখা –
শ্রীচরণেষু কাকু,
বাবা হটাতই চলে গেল | ঠাকুরমা শক পাবে বলে খবরটা জানাই নি | কিন্তু, প্রথা অনুযায়ী শ্রাদ্ধের চিঠি না পাঠিয়ে পারলাম না | ঠাকুরমাকে বোলো না | পারলে অন্তত তুমি এসো | সব খবর সাক্ষাতে বলব |
ইতি
তোতন
মা ভিতর ঘর থেকে জিজ্ঞাসা করল, “কে ছিল, খোকন ?” আমি বললাম, “পিওন, মা | একটা পার্সেল দিয়ে গেল |” মা জিজ্ঞাসা করল, “হটাত পার্সেল ! কে কী পাঠাল আবার ?” … কে, সে কথা মাকে কী করে বলি ?
এই বড়দা, বড়-জ্যাঠার বড় ছেলে, ছিল আমার ছোটবেলার প্রথম সূরী – ছ’ফুটের মত লম্বা, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, চওড়া চিবুক, পুরু ঠোঁট, প্রবল নাক, সংকুচিত কপালের নিচে জোড়া ভুরু, তার নিচে অতল বুদ্ধিদীপ্ত চোখে মোটা কালো ফ্রেমের চশমা ; মাথা ভরা ঢেউ খেলান চুল ব্যাকব্রাশ করে আঁচড়ান | চেন স্মোকিং করার ফলে গা থেকে সব সময় নিকোটিনের চুম্বক গন্ধ | বাবার ছিল দুই দাদা আর দুই দিদি | শুনেছি, বড়-জ্যাঠা আর বাবার মধ্যে এতই বয়েসের পার্থক্য ছিল যে জেঠিমা বিয়ে করে সংসারে ঢুকে প্রথম যে বাচ্চাকে কোলেপিঠে মানুষ করে সে ছিল বাবা | আমি জ্ঞান হওয়ার পর দেশে গ্রামে গেলে দেখেছি জেঠিমা তখনও বাবার পিছনে প্রায় নিজের মায়ের মতই ঘুর ঘুর করত, “হ্যাঁ রে গোপাল, ঘুম হয়েছে কাল রাতে ?” ; “গোপাল, জলপান করেছিস ?” ; “গোপাল, কত বেলা হল, দ্যাখ দিকি | নাইতে যাবি না ?”
একটু বড় হয়ে মা আর বড়দা’র মধ্যে এই একই মা-ছেলের সম্পর্ক দেখি, যদিও বড়দা বয়েসে মায়ের থেকে তেমন ছোট ছিল না | আমি যখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি, বড়দা গ্রাম থেকে স্কুল সেরে, মফস্বলে কলেজ থেকে বি এ পাশ করে বাবার কাছে রাঁচিতে চলে এসেছে চাকরির খোঁজে | কিছুদিন বসে থেকে, চাকরিও যোগাড় করে ফেলেছে একটা ওষুধের কোম্পানিতে | তার ক’বছর পরে ওই চাকরিতেই পাটনা বদলি হয়ে চলে গেল | মা ক’দিন কী কেঁদেছিল, যেন নিজের ছেলেই চলে গেল দূর দেশে | আমিও মন খারাপ করেছিলাম, তবে অন্য কারণে | বড়দার জিনিস পত্রের মধ্যে একটা স্যুটকেসে অনেক বই ছিল – কিছু ছাত্রাবস্থায় কেনা, বাকি বেশির ভাগ চাকরিতে ঢুকে | বড়দা আমাকে সেগুলো কখন সখন ধরতে দিলেও পড়তে দিত না, কেন না আমি তখনও ছোট, আর ইংরেজি তো পড়তেই পারি না | পাটনা যাওয়ার আগে বড়দা আমাকে তারই মধ্যে থেকে একটা বই দিয়ে যায় | সেটা ছিল বাবার স্কুলের পাঠ্য Shakespeare এর নাটকের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ – ততদিনে তার মেরুদণ্ড উধাও, বিস্তর পাতা পোকায় কাটা | তার কোথাও কোথাও “This book belongs to” লেখার নিচে বাবার নাম কেটে বড়দার নাম লেখা ছিল | এ ছাড়া ছিল, মার্জিনে মার্জিনে বড়দার হাতে লেখা নোট | সেগুলো দেখে দেখে বড়দার হাতের লেখা আমার খুব পরিচিত হয়ে গিয়েছিল | আমার মন খারাপ হয়েছিল, আমি বড় হওয়ার আগেই বইগুলো নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় |
এর প্রায় দশ বছর পর আমি বড়দাকে দেখি, যখন আমি কলেজে | এক শীতের ছুটিতে বড়দার কাছে ধানবাদে বেড়াতে গেলাম | বড়দার ততদিনে বিয়ে হয়ে গেছে | কয়েক বার বিহার স্টেট সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষা দিয়ে অসফল হয়ে, ওষুধ বিক্রির লাইনেই ধানবাদে পোস্টেড | উপার্জনে উন্নতি হয়ে বড়দার বইয়ের সংকলন ততদিনে বেড়ে এক আলমারি হয়ে উঠেছে | আমার পড়ার আগ্রহ দেখে বড়দা আমার ফেরার সময় নিজের বইয়ের মধ্যে থেকে একটা – Erich Maria Remarque এর Heaven Has No Favorites – দিয়ে বলেছিল, “এটা পড়িস | আমার খুবই প্রিয় | তবে, আবার যখন আসবি বইটা অবশ্য ফেরত আনিস |” পরের গরমের ছুটিতে বইটা আমার পাড়ার এক বন্ধু পড়তে নিয়ে বহুদিন পরে ফেরত দিয়েছিল | বইটা ততদিনে দুমড়ে, মুচড়ে, আর কী ভাবে জলে ভিজে বিবর্ণ হয়ে একেবারে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল | আমি আর বড়দাকে সেই বই ফেরত দেয়ার সাহস করি নি | মাকে বইটা দিয়ে দিয়েছিলাম, যে যদি বড়দা কখনও জিজ্ঞাসা করে |
পাটনা চলে যাওয়ার পর বড়দা মাকে নিয়মিত চিঠি লিখত | তার ভাষা আর বিষয় বস্তু হত যেমন কোনও মায়ের কাছে লেখা ছেলের চিঠিতে হয় | বড়দার বিয়ে হওয়ার পর সেই চিঠি আসা ক্রমে ক্রমে কমে যায় | আর, যতদূর মনে পড়ে, বড়দা পাটনা থেকে ধানবাদে এসে একবারও এত কাছে আমাদের বাড়িতে আসে নি |
বছর দশেক আগে বাবা মারা গেলে মৃত্যু সংবাদ পেয়েই বড়দা ছুটে এসেছিল | ততদিনে বৌদি মারা গিয়েছে, বড়দা নিজের বাড়ি করে একমাত্র ছেলে তোতনের পরিবার নিয়ে থাকে | বড়দার সাথে সেই শেষ বার দেখা, হিসেব করলে কলেজের বারের প্রায় আটত্রিশ বছর পরে | ফিরে গিয়ে প্রথম প্রথম বড়দা মাঝে মধ্যে ফোন করত – মায়ের সাথে কথা বলত | পুরানো কথা উঠলেই তার স্মৃতি নিয়ে মা মুহ্যমান হয়ে চোখ ঝাপসা করে বসে থাকত, কাপড়ের খুঁট নিয়ে ঘাঁটত – কিছু কথা বলত না | আমি ফোন তুললে বড়দা একটাই কথা বলত, “শোন খোকন, কাকিমা কে নিয়ে ক’দিন ঘুরে যা |”
তারপর কিছু দিন গেলে আবার যে কে সেই – তেমন যোগাযোগ থাকল না | মাস ছয়েক আগে বড়দা একদিন ভর দুপুরে ফোন করল, “খোকন, কাকিমা কেমন আছে ? তোরা সব ভালো তো ?” আমি বেশ অবাক হলাম, “মা ভালই আছে | তোমরা কেমন আছ ? মা’র সাথে কথা বলবে ?” বড়দা বলল, “না, থাক | কাকিমা নিশ্চয় ঘুমচ্ছে | তোর সাথেই কথা বলি |” কথা বলে ফোন নামিয়ে রাখার আগে জিজ্ঞাসা করলাম, “বড়দা এতদিন পরে কী ভেবে ফোন করলে ?” বড়দা বলল, “এমনিই ... বয়েস তো অনেক হল | প্রায়ই মনে হয়, আজ আছি কাল নেই – যাওয়ার আগে সব ঠিক ঠাক করে গুছিয়ে দি’, যাকে যা বলার বলে দি’, যাকে যা দেয়ার দিয়ে দি’ | এই আর কী |”
আমি – “তুমি আবার কাকে কী দেবে ? তোমার সবই তো তোতন পাবে |”
বড়দা – “না রে, কিছু জিনিস এমনও আছে যা ওকে দেয়ার মত নয় ... যাক গে, তুই আয় কাকিমাকে নিয়ে | তখন সব কথা হবে | আজ রাখছি |” আমি আর কথা বাড়ালাম না | মা শুনে বলল, “হ্যাঁ, আমার যদি ছিয়াত্তর হয় তাহলে সঞ্জুর কত হবে ? সত্তর ? যাওয়ার সময় তো ওরও এগিয়ে আসছে | তবে, ও কিসের কথা বলছে কাকে দিয়ে যাবে, কে জানে |”
এরপর প্রতি সপ্তাহ, দশদিন পরেই বড়দা ফোন করে, আর বলে, “তোরা আসছিস ? বেশি দেরী করিস না | যাওয়ার আগে সব ঠিক ঠাক গুছিয়ে, যাকে যা বলার বলে, দেয়ার দিয়ে যেতে চাই |” আমি বলি, “তুমি তো জানো. মায়ের বাতের ব্যথা নিয়ে বাসে, ট্রেনে যাত্রা সম্ভব নয় |” বড়দা বলে, “তাহলে তুই গাড়িতে চলে আয় | রাঁচি থেকে ধানবাদ তো খুব লম্বা রাস্তা নয় | সমীর চালিয়ে আনতে পারবে না ?” আমি বলি, “সমীর সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছে, আমি চাই না ওর প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত হোক |” বড়দা বলে, “কিচ্ছু হবে না | বরঞ্চ এলে সমীরের ভালই লাগবে | ওর লাভ বই ক্ষতি হবে না, দেখিস |” বড়দার সাথে এর বেশি কথা বললেই ফোনটা তোতনের বৌ রমাকে দিয়ে দেয় | ও বলে, “কাকু, বাবা আজকাল কানে কম শোনে | তুমি কী বলছ বুঝতে পারছে না | বলো, কী বলছিলে |”
একদিন এইসব কথার মধ্যে কী মনে হল, মাকে জিজ্ঞাসা করলাম, “মা, বড়দা কেন পাটনা থেকে ধানবাদে চলে আসার পরও একবারও আমাদের এখানে আসে নি ?” দেখলাম মায়ের চোখে ভিজে গেল | চোখ মুছে বলল, “ওই যে ওর গল্প বইয়ের নেশা নিয়ে রাগ করেছিলাম | ওই গল্প বইয়ের নেশাই তো ওকে বিহার সিভিল সার্ভিস পাশ করতে দিল না | তোর বাবা আর আমি কত বোঝাতাম | শেষে একদিন তোর বাবা রেগে বলেছিল, ‘তুই ওই গল্প বইয়ের নেশা করে নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করলি | আর তোর ঠিক সাগরেদ হয়েছে খোকন | তোরও কিস্সু হল না, ওটার দ্বারাও বড় কিস্সু হবে না |’ জানি না তাতেই হয়ত ওর কোনও অভিমান হয়েছিল | এ ছাড়া তো আর কোন কারণ ভাবতে পারি না |”
...
এই সব কথা ভাবতে ভাবতে হুঁশ হারিয়ে ফেলেছিলাম বোধহয় | মা আবার কিছু জিজ্ঞাসা করল | পার্সেল শব্দটা শুনে “দাঁড়াও মা” বলে পার্সেলটা খুলতে গিয়েও রেখে দিলাম | তোতন কে ফোন করলাম | ও ফোন তুললে বললাম, “এই, আমি খোকন কাকু বলছি | কী হয়েছিল বড়দার ? আগে কোনও খবর কেন দিস নি ?” তোতন বলল, “আগে খবর কী দেব ? ঘুমের মধ্যে স্ট্রোক – আমরা বুঝতেই পারি নি |”
আমি – “না, না, সব খুলে বল, মৃত্যু কী ভাবে হল | জানিস, তোর শ্রাদ্ধের চিঠির সাথে বড়দার পাঠানো একটা পার্সেল পেয়েছি ? এখনও খুলি নি | ওটাই বা কিসের ?”
তোতন – “ও, বাবা তাহলে তোমাকে বই পাঠিয়েছে | তুমি তো জানোই বাবার বই নিয়ে কী এক ঝোঁক ছিল ; আর দুঃখ, যে আমি বই পড়া ভালবাসি না | ক’মাস আগে বাবার মাথায় ঢুকল, বাবা মারা গেলে বইগুলোর কী হবে | রমা বলল সব বিলিয়ে দিতে | বাবা বলল, ‘তা করব না, আমি যাকে দেয়ার দিয়ে দেব |’ বাবা গত সোমবারে দুটো রিক্সা বোঝাই করে সব বই নিয়ে রওয়ানা দিল | ফিরল দুপুর দুটোয় – ঘেমে নেয়ে একসা, চোখ লাল | কোনমতে স্নান করে না খেয়েই শুয়ে পড়ল | গা গরম দেখে ডাক্তার ডেকে আনলাম | রমা ঘাবড়ে গিয়ে বাবাকে বলল, ‘কী দরকার ছিল বাবা, এত গরমে এই সব করার ? একটু বৃষ্টি নামলে হত না ?’ বাবা শুধু বলল, ‘যাক গে, যাকে যা বলার ছিল বলে দিয়েছি, যাকে যা দেয়ার ছিল দিয়ে দিয়েছি | আমার কাজ শেষ, এবার আমি শুধু আরাম করব, বিশ্রাম করব |’ কিন্তু সেই রাত্রি না কাটতেই বাবা চলে গেল | ভোর হলে আর ঘুম থেকে উঠল না ... এই হল ঘটনা ... তা, তোমরা আসছ তো, অন্তত তুমি আর কাকিমা ?”
আমি বললাম “দেখছি | কিন্তু, মায়ের যা অবস্থা, কী করে যে খবরটা ভাঙ্গব ... আচ্ছা, তোকে আমি জানাব | এখন রাখছি |”
কিছুক্ষণ ভাবলাম পার্সেলটা নিয়ে কী করব | মায়ের নামে, কিন্তু ভিতরে কী আছে না আছে না জেনে মাকে কী করে কিছু বলি | দেখার পর মা যদি ‘সঞ্জুর কী দরকার ছিল, এইসব পাঠানোর ?’ বলে বড়দার সাথে কথা বলতে চায় |
একটু ইতস্তত করে পার্সেলটা খুললাম | ভিতরে তিনটে বই, দুটো ইতিহাসের আর একটা “A Guide to The Civil Services Examination of Bihar” 1962 edition | তার ভিতরে একটা ভাঁজ করা চিঠি | চিঠিটা খুললাম –
শ্রীচরণেষু কাকিমা,
সর্বাগ্রে আমার প্রণাম নিও | ভালো আছ তো ? আমি বলেছিলাম না, যাকে যা দেয়ার দিয়ে যাব | আজ তোমার চক্ষুশূল সব বইগুলো বিদায় করব | ভেবেছিলাম খোকন কে বলব ‘এসে নিয়ে যা |’ কিন্তু সেদিন বইগুলোর মধ্যে তোমার ফেরত পাঠানো ওই বইটা পেলাম, যেটা খোকনকে কলেজের সময় দিয়েছিলাম, পরে তুমি ডাকে ফেরত পাঠিয়েছিলে | ওটা দেখে মনে হল, থাক, ওই বাঁদরটার গলায় মুক্তর হার দিয়ে লাভ নেই | আর, কে জানে, তুমি যদি আবার রাগ করো | তাই ওগুলো এখানকার বেঙ্গলী ক্লাবের লাইব্রেরিতে দিয়ে দেব | কথা হয়ে গেছে |
শুধু তিনটে বই পাঠাচ্ছি | ধানবাদে এসেই বিহার সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষার জন্য কিনেছিলাম | জানি না এখন আর এগুলোর সমসাময়িকতা কত | তবুও যদি সমীরের কাজে লাগে | কাজে লাগবেই, আমার মন বলছে | আমার কাজে লেগেছিল | এক চেষ্টায় আমি পরীক্ষাটা পাশ করেছিলাম | ভেবেছিলাম একেবারে পোস্টিং পেলে গিয়ে তোমায় জানিয়ে, প্রণাম করে, আশীর্বাদ নিয়ে কাজে যোগ দেব | কিন্তু পোস্টিং হল তো হল রাঁচিতে | শুনেই তোমার বৌমার যত রাগ অভিমান, ‘আবার ঘুরে ফিরে সেই কাকিমার আঁচল | না, আমি সেটা হতে দেব না | দরকার নেই এই চাকরির |’ তখন তোতন ওর পেটে | আমি শত বুঝিয়ে শেষে নিরুপায় হয়ে ছেড়ে দিই | তোমায় বলি নি | আজ এতদিন বাদে বলছি কেন না জানি যে, যাকে যা বলার না বলে আমি চলে যেতে পারব না | কবে যাব জানি না, কিন্তু তুমিই বলো, শেষ গতির কাজ শেষ অব্দি ফেলে রাখব কেন ?
তুমি এই নিয়ে আবার আমার উপর রাগ কোরো না | একবার করেছিলে, সে কথা ভেবে আজও বড় কষ্ট পাই |
আবার প্রণাম জানিয়ে শেষ করছি | খোকন, প্রতিমা, সমীর আর বৌমাকে আমার আশীর্বাদ জানিও |
ইতি
সঞ্জু
-------------------------------
২৩ মে ২০১৫ / © ইন্দ্রনীর
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন