<< চীনেবাদাম কবিতা >>
এ’রকম কি কিছু আছে, চীনেবাদাম কবিতা ?আসলে আমি চীনেবাদাম খাওয়ার মত ছন্দময় অথচ অন্তঃসারশূন্য অনুভূতির এক বিশেষ প্রকাশের কথা ভাবছিলাম |
আপনি এক ঠোঙ্গা চীনেবাদাম কিনলেন – ছোট ঠোঙ্গা, তার সাথে এক পুরিয়া লঙ্কার গুঁড়ো মেশানো দানা-নুন | টাকাটা আগেই হাতে বের করেছেন, একদম সঠিক খুচরো – কেন না, ঠোঙ্গাটা হাতে ধরলেই প্যাভলোভিয়ান প্রতিক্রিয়ায় জিভে জল কাটবে – ধুর মশাই, তখন কে নুলো বাড়িয়ে অপেক্ষা করবে বাদামওয়ালার কাছ থেকে খুচরো ফেরত নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখে পকেটে পুরতে !
যাক, এবার আপনি জুত করে বসলেন ঘাসে – চিন্তা নেই, পরনের প্যান্ট ঘাসের মতই পরিষ্কার বা ময়লা | সাবধানে ঠোঙ্গাটা ফাঁক করে দেখলেন – বাদাম একটু কম লাগছে, লাগুক | সন্তর্পণে, প্রথম বাদামের খোলা ভেঙ্গে দানাগুলো হাতের তালুতে রেখে দেখে নিলেন – পোকা লাগা নেই তো | তারপর মুখ খুলে বাদামগুলো ফেলেই বিদ্যুৎ বেগে নুনের পুরিয়া খুলে এক চিমটে মুখে দিলেন | ইতিমধ্যে জিভের উপরে বাদাম, আর নিচে লালার জোয়ার – সেই জোয়ারে নুন গুলো একটু গুলে উঠলেই আপনি চিবাতে শুরু করলেন | শুরু হোলো মুখে লালা, বাদাম আর ঝাল-নুনের কোলাকুলি | আহা ! আপনি চিবচ্ছেন আর একটু একটু গিলছেন – এক আশ্চর্য ‘খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না’ সম্ভোগ !
কিন্তু, পরমানন্দ কি ধরে রাখা যায় ? তবে পুনঃ পুনঃ প্রার্থনা করতে ক্ষতি নেই | অতএব, দ্বিতীয় বাদামের নগ্নীকরণ ও ঝাল-নুন সহযোগে চর্বণ | তারপর, তৃতীয় ...
ক্রমে, এক সুন্দর ছন্দের চালে চলে, বাদামের সাইজ কমে আসে, মজুদও কমে – সেই সাথে ঝাল-নুনের চাহিদা বাড়ে |
শেষে, নাহ, সব শেষ – ঠোঙ্গা ঝেড়েঝুড়ে, তার কোনা ঘুপচি হাতড়ে, শেষ বাদামটাও শেষ | এমন নিখুঁত হিসেবে খাওয়া যে ঝাল-নুনের কয়েক দানা শুধু বাকি, আর আঙ্গুলের ডগায় সব শেষে তার কিছু রেশ ...
একটা ঢেকুর তুললেন | ঠোঙ্গাটা দুমড়ে ফেলতে গিয়ে ভাঁজ করে রেখে অবশ্যম্ভাবী এই চিন্তাটাকে আর অগ্রাহ্য করতে পারলেন না -
“হঠাত করে কেমন একটা ছন্দপতন, আর গোটা ব্যাপারটা ভেবে দেখলে কত অন্তঃসারশূন্য !”
কিছু কবিতা লেখা ঠিক এই রকম চীনেবাদাম খাওয়ার মতন | হঠাত ঝোঁক ওঠে, পদে পদে ছন্দ নিয়ে শব্দ আসে, কিন্তু, লেখা শেষে সেই অন্তঃসারশূন্যতা বোধ | এই এক অদম্য ঝোঁক আমায় প্রায়ই পেয়ে বসে, আর আমি মাথার খোল থেকে শব্দের দানা আলাদা করে, ঝেড়েঝুড়ে রুচির ঝাল-নুন দিয়ে সাধি | একেই বলি চীনেবাদাম কবিতা – মাথা নেই, মুণ্ডু নেই, সার নেই, মর্ম নেই ...
– ছন্দ ? হয়ত আছে, পড়ে দেখুন ...
|| ত্রিকোণমিতি ||
অযাচিত তোমার সখ্যতা, বন্ধু, অযাচিত তোমার আবির্ভাব
এতদিন যে তুমি ছিলে না জীবনে, ছিল না কোনও অভাব
কী হোলো হঠাত তোমার খেয়াল, কী হোলো প্রয়োজন ?
হঠাত করে দিলে চিঠিতে খবর, যার ভাবে বিস্তর আসঞ্জন
আমার নাকি কিছুটা ভালো, বেশির ভাগ ঠিক নয় মোটে
দাঁড়ালে আমিও হয়ত জিতব, তবে মাত্র তোমার জোটে
কিসে দাঁড়ালে, লেখ নি সেকথা, চিরকাল আমি দাঁড়িয়ে
দেখেছি তুমি ঘোর বেপাড়ায়, শুধু যাও এ পাড়া এড়িয়ে
এখন ঘুরে ঘুরে সুকতলা ক্ষয়েছে, পায়ে ভিড় ফোস্কার
তাই বুঝি বসে, জিরিয়ে রোয়াকে, শোনালে, “নমস্কার !”
আহা, কী মধুর, যদিও লাগে বন্ধুর, চেনা এই অভিবাদন
কী যেন বললে নামটা তোমার, হনুমান না কি গন্ধমাদন ?
হ্যাঁ, রে হতভাগা, পড়েছে মনে, বছর তিন কি চার আগে
ধার দিয়েছিলাম আমার সুপ্রীতি, যদি কোনো কাজে লাগে
সেই ভালবাসা তুমি দিয়ে দিলে আমার বান্ধবীকে উপহার
আজ আবার তুমি এসেছ কোন মুখে চাইতে পুনশ্চ ধার ?
তবে বলি শোন, কাউকে বোলো না, আমি যে দাঁড়াতেম
তোমার জন্য নয়, জানাতে আমার ওই বান্ধবীটিকে প্রেম
আমি কী জানতাম যে বেপাড়ায় ঘুরে সে করে ফষ্টিনষ্টি
আমার বদলে তোমার সাথে – হে ভগবান এ কী অনিষ্টি !
এখন এসেছ মুখটা পুড়িয়ে, বকে বান্ধবীর সাথে অনর্গল
দিয়ে মহিলাকে ফেরত, নিতে পার ধার, এক টিউব বার্নল
কেটে পড় তুমি, জুটে যাই আমি, বিনে কারোরই জোটে
তর্জনী চেপে দিই অর্গল, তার বেসামাল প্রগলভ ঠোঁটে ||
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - (কি ? আরেক ঠোঙ্গা চলবে ?)
----------------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ২৯ জুলাই ২০১৫
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন