রবিবার, ২১ জুন, ২০১৫

মায়ের আলু-ভাজা

|| মায়ের আলু-ভাজা ||


ও বউ, তুমি এক দিনের জন্য মা হয়ে যাও দিকি
দেখি না, তুমি মায়ের মত আলু ভাজতে পার নাকি

আরে না, না, ও ভাবে হবে না, ওরে সব্বোনাশ !
রাখো সরিয়ে খোসা-ছাড়ানি, ছুরি, কাটার পাটাতন আর গ্যাস
যাও, গিয়ে ধরাও কয়লার উনুন - কেরোসিন, কাঠ, ঘুঁটে দিয়ে
গনগনে হয়ে উঠলে আঁচটা, কিছু কয়লা গুঁড় দিও ছড়িয়ে

তৈরি তো ? তাহলে, ঝুড়ি থেকে দেখে বেছে নাও আলু ক’টি
পিঁড়িটা টেনে, মাটিতে বসে পড়ে, পায়ে চেপে ধরো বঁটি
পাতলা করে ছাড়াও তাদের খোসা, নিপুণ দু’হাতে ধরে
তারপরে কাটো লম্বাটে ফালি, বেশি না জিরি জিরি করে

উনুনে বসাও লোহার কড়াইটা, একটু ধুয়ে নিয়ে জলে
পরিমাণ মত ঢাল সর্ষের তেল, কড়াইটা শুকিয়ে গেলে
যতক্ষণে তেল হচ্ছে গরম, কাটা আলু নাও ধুয়ে
ও মা, সে কী, এই টুকুতেই পড়েছ তুমি হাঁপিয়ে ?

আলু কেন ধোবে ? আলু ধুলেই তো চলে যাবে তার মাড় ?
কী করে বোঝাই, সেখানেই তো মায়ের সাথে তফাতটা তোমার
যাক গে, ছাড়, এবার আলুগুলোর জল টল নাও ঝরিয়ে
খোসাগুলো ফেলে, হাত ধুয়ে মুছে, বঁটিটা রাখ সরিয়ে

ওদিকে দেখ কড়াইয়ে, তেল থেকে উঠছে কি হালকা ধোঁয়া
তাহলে তাতে দাও শুকনো লঙ্কা, আর রসুন এক দু’ কোয়া
লঙ্কা ভাজার গন্ধ উঠলে দাও আলু কড়াইতে ছেড়ে
একটু একটু করে, মাঝে মধ্যে খুন্তি দিয়ে নেড়ে নেড়ে

এর পরে দাও নুন আর হলুদ, দিয়ে নেড়ে দাও আলু
আঁচ গুনগুন, তবু কয়লার উনুন, হাত নাড়া রাখো চালু
ব্যাস, এইবার কাজটা তোমার ধরো মোটামুটি শেষ
এখুনি ছাড়বে আলুর ভাজা ভাজা গন্ধের প্রথম রেশ

গন্ধে যখন ভরে উঠবে রান্নাঘর, ছুটে আসবে তোমার ছেলে
বলবে, “মা, কী করছ ?”, ওকে তুমি নিয়ে নিও কোলে
আঁচল দিয়ে ওর মুখ মুছে বোলো, “শোনরে, আমার রাজা,
তোর জন্য আমি করছি তোর ভীষণ প্রিয় আলু-ভাজা”

নামানোর আগে মোটা-দানা নুন একটু দিও ছিটিয়ে
তেল থেকে টেনে আলু-ভাজাগুলো দিও কড়া’য়ের পাড়ে উঠিয়ে
এখন হল আলু ভাজা শেষ, তুমিও ক্লান্ত, ক্লেদাক্ত
গলায় তোমার ঘামের বিন্দু, চেহারা হয়েছে আরক্ত

ওই মাটির উনুন, আঁচ গুনগুন, ওর জাদু করে অদ্ভুত গুণ
আলু-ভাজার গায়ে তেলের বুদ্বুদ, লঙ্কা-রসুন, মাখোমাখো গুঁড় নুন
মা চলে গেছে, মনে রয়ে গেছে মায়ের আলু-ভাজার জাদু
দাও দাও পাতে, আলু-ভাজা ডাল ভাতে, আমার মাতৃসমা বঁধু ||


-----------------------------------
© ইন্দ্রনীর / ২১ জুন ২০১৫

কোন মন্তব্য নেই: